শিক্ষার্থীদের প্রতি আমীর খসরু

কোটা আন্দোলনের মতো গণতন্ত্রের জন্যও লড়াই করতে হবে

প্রকাশ | ১৩ জুলাই ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
কোটা সংস্কার আন্দোলনের মতো দেশে ভোট ও গণতন্ত্রের জন্যও শিক্ষার্থীদের লড়াই করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। তিনি বলেন, 'সরকার যেভাবে রাষ্ট্র চালাচ্ছে এতে আগামী দিনে মেধাবীদের বাংলাদেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। কারণ, আমার মনে হয় না বাংলাদেশকে তারা মেধাবী রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়। মেধাবীরা সত্যি কথা বলে, সত্যের পথে চলে, প্রতিবাদ করে, প্রতিরোধ করে।' শুক্রবার যুগপৎ আন্দোলনের ৩১ দফা ও এক দফা ঘোষণার বর্ষপূর্তি উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ আহ্বান জানান। জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম হলে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে গণতন্ত্র মঞ্চ। টানা বৃষ্টিতে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে জলাবদ্ধতা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ঢাকা শহর তো ডুববেই। কারণ, মেধাবী লোকজন তো কোথাও নেই। যারা পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন পর্যন্ত বিভিন্ন কাজ করে, সেখানে মেধাবীদের নিয়ে আসতে হবে। তিনি আরও বলেন, 'দলীয় লোকজন দিয়ে যদি কাজ চালানো হয় তাহলে তো ঢাকা ডুববেই, সারা বাংলাদেশ ডুববে। অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিকভাবে তো এমনিতেই ডুবে গেছে, এখন শুধু পানির ডুবা দেখতে পাচ্ছেন। সবদিক থেকে বাংলাদেশ ডুবে গেছে।' বিএনপির স্থায়ী কমিটির এ সদস্য আরও বলেন, বাংলাদেশের জনগণ তাদের মালিকানা হারিয়ে ফেলেছে। এ মালিকানা কেউ কেড়ে নিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষের মূল মালিকানা ফিরিয়ে আনতে একটি বড় বিষয় ছিল রাজনৈতিক দলগুলোর জাতীয় ঐক্য। কোন প্রক্রিয়ায় এ মালিকানা ফিরিয়ে দেওয়া হবে তা আমাদের ৩১ দফায় ছিল। জনগণকে রাষ্ট্রের মালিকানা ফিরিয়ে দিতে সংবিধান, বিচারব্যবস্থা, সংসদ, অর্থনৈতিক ব্যবস্থা ও সামাজিক ব্যবস্থায় কী কী পরিবর্তন আনতে হবে তা ৩১ দফায় ছিল। তিনি বলেন, 'জাতীয় ঐক্য ছাড়া রাষ্ট্র সংস্কার, নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত করার কোনো সুযোগ নেই। এ ঐকমত্য শুধু ফ্যাসিস্ট সরকারের পতন আন্দোলনের নয়, সরকারকে বিদায় করে আগামী দিনের বাংলাদেশের মানুষের হৃদয়ে পরিবর্তনের যে প্রত্যাশা তা তুলে ধরতে পেরেছি কি না, সেটিও লক্ষ্যণীয়। আমি মনে করি ৩১ দফা বিশদভাবেই সে কাজটি করতে পেরেছে। তবে যেটি করতে পারিনি, ৩১ দফায় মানুষের হৃদয় স্পর্শ করতে পারিনি। এটি আমরা মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে পারিনি।' আমীর খসরু আরও বলেন, 'আমরা যদি সবাই মিলে ৩১ দফা বাস্তবায়নের গ্যারান্টি দিতে পারি, দেশের মানুষের কাছে পৌঁছাতে পারি, তবেই সরকারবিরোধী আজকের আন্দোলন পরিপূর্ণতা পাবে। আর সেজন্য প্রয়োজনে কর্মসূচি দিতে হবে।' আলোচনা সভায় নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, 'আমরা যেসব রাজনৈতিক দল সরকারবিরোধী আন্দোলন করছি তাদের মধ্যে মতবিরোধ থাকতেই পারে। কিন্তু আমাদের সবাই মিলে একটি কাজই করতে হবে এ সরকারের পতন। আমরা যদি অতীত দেখি, তাহলে দেখা যাবে আমরা কেউ কেউ আলাদা হয়ে গেছি। কিন্তু আমাদের বরং আরও বেশি যুক্ত হতে হবে। অন্যদেরও যুক্ত করতে হবে।' তিনি আরও বলেন, 'আমরা এখন এমন একটা জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি যেখানে আমাদের পেছনে ১৫ বছর আছে। এই ১৫ বছরে আমাদের সাফল্য কতটুকু ব্যর্থতা কতটুকু সেটা ভাবতে হবে। আমাদের আরও কঠোর কর্মসূচি দিতে হবে। প্রয়োজনে এ কোটা সংস্কারের দাবিও আমাদের ৩১ দফার মধ্যে আনতে হবে যাতে আমরা ছাত্রদেরও আমাদের আন্দোলনে অন্তর্ভুক্ত করতে পারি এবং বড় আন্দোলনের পথে পা বাড়াতে পারি। সবাই মিলে লড়াইটা করতে হবে।' তিনি বলেন, 'মানুষ তখনই লড়াই করতে আসে, যখন সে মনে করে এ লড়াই তাকে কিছু দেবে। এ যে ছাত্ররা হুলুস্থুল করে দিয়েছে। এমন হুলুস্থুল আমরাও তো করতে পারিনি। কালকে যখন পুলিশ ব্যারিকেড তৈরি করেছে, এ ব্যারিকেড যে ভাঙা যাবে এ কথাও আমরা ভাবতে পারিনি। আমাকে অন্তত তিনজন ফোন করে বলল, দেখেন কীভাবে ছাত্ররা ব্যারিকেড ভাঙছে। পুলিশ প্রচন্ড নির্যাতন করেছে কুমিলস্নাতে, হামলা করেছে চট্টগ্রামে, বিভিন্ন জায়গায় ব্যারিকেড দিয়েছে, ছাত্রলীগ পাল্টা মিছিল করেছে। তারপরও ছাত্ররা জানবাজি লড়াই করেছে, পুলিশ পরাজিত হয়েছে। এ ছাত্রদের মুখে আমরা যে সংস্কারের কথা বলছি, সে সংস্কারের দাবি নেই। ওই ছাত্রদের কর্মসূচির মধ্যে বেগম জিয়ার মুক্তির দাবি নেই। কেন নেই বলেন তো? ওরা ছাত্র রাজনীতি জাতীয় রাজনীতি থেকে আলাদা দেখতে চায়?' গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকির সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরও উপস্থিত ছিলেন বিপস্নবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম, ভাসানি অনুসারী পরিষদের আহ্বায়ক বীর মুক্তিযোদ্ধা শেখ রফিকুল ইসলাম বাবলু, গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক সুব্রত চৌধুরী, সমাজতান্ত্রিক দলের সহ-সভাপতি তানিয়া রব, অধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান।