বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৪৯তম মৃতু্যবার্ষিকী উপলক্ষে বৃহস্পতিবার টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা -সংগৃহীত
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করেছেন জেলার ৫টি উপজেলার আওয়ামী লীগের নেতারা। ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর ৪৯তম শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে এ কর্মসূচি পালন করেন দলটির নেতাকর্মীরা। এ সময় তারা শেখ হাসিনাকে দেশের মাটিতে ফিরিয়ে আনার অঙ্গীকার করেন। এদিন সকাল ৯টা থেকে বিভিন্ন উপজেলার নেতাকর্মীরা বঙ্গবন্ধুর সমাধিতে মিছিল নিয়ে উপস্থিত হতে থাকেন। ১০টার পর গোপালগঞ্জ জেলা ও টুঙ্গিপাড়া উপজেলা
আওয়ামী লীগ বঙ্গবন্ধুর সমাধির বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। ধীরে ধীরে সমাধি প্রাঙ্গণে জনসমুদ্রে রূপ নেয় এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করার জন্য ফুলের ঢালায় ঢালায় ভরে যায় সমাধি বেদিস্থল। একের পর এক বিভিন্ন উপজেলার আওয়ামী লীগসহ অঙ্গসংগঠনের নেতাকর্মীরা শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানসহ পরিবারের শহীদ সদস্যদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে ফাতেহা ও দুরুদ পাঠ করে বিশেষ দোয়া ও মোনাজাত করেন।
এ সময় শেখ হাসিনা ও তার ছোট বোন শেখ রেহানার জন্য সুস্বাস্থ্য কামনা করে দোয়া করা হয়। পরে সাধারণ মানুষের মাঝে কাঙালিভোজ বিতরণ করার মধ্য দিয়ে কর্মসূচি শেষ হয়।
যশোরে ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবন্ধুর মু্যরালেই
শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ, পরে হামলা চালিয়ে
ফুলের ডালি তছনছ!
এদিকে, স্টাফ রিপোর্টার, যশোর জানান, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদত বার্ষিকীতে যশোর শহরের বকুলতলা মোড়ে হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবন্ধুর মু্যরালে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা। বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে সংক্ষিপ্ত আয়োজনে এই শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন যশোর জেলা আওয়ামী লীগ, শহর আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ ও মহিলা লীগের নেতারা। আওয়ামী লীগ নেতারা মু্যরাল ত্যাগ করার পর সেখানে হামলা চালিয়ে শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুল তছনছ করেছে একদল বিক্ষোভকারী। নির্যাতিত ছাত্র-জনতার ব্যানার নিয়ে এই হামলা চালানো হয়।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে বৃহস্পতিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শাহাদাত বার্ষিকীতে যশোরে সংক্ষিপ্ত পরিসরে 'জাতীয় শোক দিবস'-এর কর্মসূচি গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলো।
এদিন বেলা ১১টার দিকে যশোর শহরের বকুলতলা মোড়ে ৫ আগস্টের পর হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত বঙ্গবন্ধুর মু্যরালের পাদদেশে সমবেত হন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর নেতারা। তারা যশোর জেলা আওয়ামী লীগ, শহর আওয়ামী লীগ, শ্রমিক লীগ ও মহিলা লীগের ব্যানারে মু্যরালের পাদদেশে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি পৌরসভার মেয়র বীর মুক্তিযোদ্ধা হায়দার গনি খান পলাস, অ্যাড. মোহাম্মদ আলী রায়হান, মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক সম্পাদক অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ, উপ-দপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদার, সদস্য মারুফ হোসেন খোকন, প্রফেসর মোয়াজ্জেম হোসেন, উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মোবাশ্বের হোসেন বাবু, মহিলা আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক জ্যোস্না আরা মিলি, মহিলা আওয়ামী লীগ নেতা হাজেরা পারভীন, জেলা যুবলীগ নেতা আজহার হোসেন স্বপন, মইনুদ্দিন মিঠু, কেরামত আলী মোলস্না, সদর মহিলা আওয়ামী লীগের সদস্য আনোয়ারা বেগম, শহর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান মিলু, শহর স্বেচ্ছাসেবক লীগের আহ্বায়ক মাহমুদুল হাসান সুমন, আওয়ামী লীগ নেতা সৈয়দ কবির হোসেন জনি, আক্তারুজ্জামান আনোয়ার, রাসেল রানা, আবুল খায়ের, লোকমান হোসেন, মনিরুজ্জামান মনি, সাবেক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতা কবির, সাবেক ছাত্র নেতা রাজু আহমেদ, আরাফাত রহমান বাসিত, এস এম রয়েল, সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নাজনীন নাহার, যশোর জেলা বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটের কোষাধ্যক্ষ মিজানুর রহমান, মাস্টার কামরুজ্জামান, আবুল ফজল মিলন, সাগর খন্দকার প্রমুখ।
এদিকে, আওয়ামী লীগ নেতারা শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে মু্যরাল ত্যাগ করার পর টাউন হল ময়দান থেকে 'নির্যাতিত ছাত্র-জনতা'র ব্যানারে একটি মিছিল বঙ্গবন্ধু মু্যরালে উপস্থিত হয়। এই মিছিল থেকে শ্রদ্ধাঞ্জলির ফুল নিয়ে ভেঙে রাস্তায় ছুড়ে ফেলা হয়। এছাড়া, এদিন নওয়াপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ চত্বরে বঙ্গবন্ধুর শাহাদত বার্ষিকী উপলক্ষে গণভোটের খিচুড়ির ডেগও ভাঙচুর করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
যশোর জেলা আওয়ামী লীগের উপ-দপ্তর সম্পাদক ওহিদুল ইসলাম তরফদার জানান, তারা বঙ্গবন্ধু মু্যরালে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করে চলে আসার পর একদল উচ্ছৃঙ্খল হামলাকারী সেখানে হামলা চালিয়ে ফুল তছনছ করেছে। এর আগে তারা বঙ্গবন্ধুর মু্যরাল ভাঙচুর করেছে। এদের এই ন্যক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদের ভাষা নেই।
প্রসঙ্গত, গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করে দেশ ছাড়েন। এরপর দেশব্যাপী বঙ্গবন্ধুর মু্যরালসহ স্বাধীনতার বিভিন্ন ভাস্কর্য ভাঙচুর করা হয়। যশোরের বকুলতলা মোড়ের বঙ্গবন্ধুর মু্যরালটিও এদিন ভাঙচুরের কবলে পড়ে।