বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির অবস্থান কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর -ফোকাস বাংলা
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার যতক্ষণ গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে ততক্ষণ তাদের সহযোগিতা করা হবে। পাশাপাশি দেশে স্বস্তি ফিরিয়ে এনে সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন আয়োজন করতে বিএনপি বর্তমান সরকারকে যৌক্তিক সময় দেবে।
বৃহস্পতিবার বিকালে নয়া পল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার 'দোসর'দের বিচারের দাবিতে আয়োজিত অবস্থান কর্মসূচিতে তিনি এ কথা বলেন। কাকরাইল থেকে ফকিরেরপুল পর্যন্ত হাজার হাজার নেতাকর্মীর উপস্থিতি অবস্থান কর্মসূচি সমাবেশে রূপ নেয়।
মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, 'আমরা এ সরকারকে সহযোগিতা করব। এটা আমাদের সরকার, গণভু্যত্থানের সরকার, আন্দোলনের ফসল। আমরা তাদের ততক্ষণ সহযোগিতা দেব যতক্ষণ পর্যন্ত গণতন্ত্রের পক্ষে থাকবে। গণতান্ত্র্রিকভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর করবে।'
সরকারকে তাদের কার্যক্রমের জন্য ধন্যবাদ জানান তিনি। বিএনপি মহাসচিব বলেন, ইতোমধ্যে সরকার ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। আরও দ্রম্নততার সঙ্গে পদক্ষেপ নিতে হবে। যে সব চক্রান্তকারীরা সরকারের ভেতরে আছে তাদের অবিলম্বে বের করে দিতে হবে। সরকারের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে দিতে হবে। চিহ্নিত সন্ত্রাসী এমনকি সরকারি কর্মচারীরা যারা আওয়ামী লীগের পক্ষে অন্যায়ভাবে কাজ করেছেন, তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের আওতায় আনতে হবে।
শেখ হাসিনার বিচার দাবি করে তিনি বলেন, 'এদের বিচার করতে হবে আন্তর্জাতিক মানবতাবিরোধী আইনে। তারা গণহত্যা চালিয়েছে, জনগণের ওপর অন্যায়-নির্যাতন করেছে। জনগণের টাকা লুণ্ঠন করেছে, হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে।'
মির্জা ফখরুল বলেন, 'এ সরকারের ওপর জনগণ আস্থা রেখেছে। একটু স্বস্তি ফিরে এলে তারা নির্বাচন দেবে। সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা করবে। সেই নির্বাচনে জনগণ ভোট দিয়ে সরকার গঠন করবে। আমরাও চাই নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হোক। এ জন্য আমরা সরকারকে যৌক্তিক সময় দিতে চাই। একটা কথা স্পষ্ট বলতে চায়, গণতন্ত্র, গণতন্ত্র ও গণতন্ত্র। এর কোনো বিকল্প নেই।
সংখ্যালঘু নির্যাতনের নতুন ধোয়া তোলা হচ্ছে অভিযোগ করে তিনি বলেন, হিন্দু সম্প্রদায়ের
লোকদের ক্ষেপিয়ে, তাদের ঢাল বানানোর কৌশল খুঁজছে আওয়ামী লীগ, যাতে অতিস্থিতিশীলতা তৈরি করে ভারতের সহযোগিতায় আবার কিছু করা যায়।
আওয়ামী লীগ নেতাদের ষড়যন্ত্র বাদ দিয়ে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব। তিনি বলেন, এ দেশের মানুষ কীভাবে জ্বলে উঠতে পারে এবার আবার সবাই দেখেছে। জনগণ জেগে উঠলে তাদের সামনে কেউ দাঁড়াতে পারে না। তাই ভালোয় ভালোয় ঝামেলা না করে আত্মসমর্পণ করেন। 'ঝামেলা' করলে আওয়ামী লীগের পরিণতি শুভ হবে না
সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক ও প্রধানমন্ত্রীর সাবেক অর্থ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমানের করুণ পরিণতির কথা উলেস্নখ করে তিনি বলেন, কত প্রতাপশালী, কত অহংকার তাদের। কীভাবে তাদের গ্রেপ্তার করে আদালতে তোলা হলো। একই কায়দার বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও দলের হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করে আদালতে নিয়েছিল আওয়ামী লীগ। আলস্নাহর বিচার, তাদের এখন একইভাবে আদালতে তোলা হয়েছে।
নেতাকর্মীদের বিশৃঙ্খলা ও অন্যায় কাজে জড়িত না হওয়ার বিষয়ে সতর্ক করে মির্জা ফখরুল বলেন, এটি জিয়াউর রহমানের দল। অপবাদ দিতে পারে এমন কোনো কাজ করা যাবে না। তিনি বলেন, 'তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনাতে হবে। হাজার হাজর মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। কোনো মামলা থাকবে না। আসুন যেভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শেখ হাসিনাকে তাড়িয়েছি, সেভাবে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠনে সবাই কাজ করি।'
আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে হাজার হাজার ছাত্র-জনতা হত্যার অভিযোগ এনে তিনি বলেন, 'আলস্নার বিচার নির্মম। শেখ হাসিনাকে পালিয়ে যেতে হয়েছে, যেখানে তার গোড়াপাতা আছে। আমি সে জন্য বলছি, এখনো সময় আছে। আর ঝামেলা করবেন না। ঝামেলা করলে টিকতে পারবেন না। আজকে তো চেষ্টা করেছিলেন ৩২ নম্বরে গিয়ে ফুল দেবেন। কারও আপত্তি ছিল না। কিন্তু ছাত্ররা হতে দেয়নি। কারণ তারা হাসিনার চেহারা আর দেখতে চায় না।'
মির্জা ফখরুলের সভাপতিত্বে প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকুর পরিচালনায় এই কর্মসূচিতে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান রিপন, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য আবদুস সালাম, যুগ্ম মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, মহানগর দক্ষিণের রফিকুল আলম মজনু, স্বেচ্ছাসেবক দলের এসএম জিলানি, যুব দলের নুরুল ইসলাম নয়ন, কৃষক দলের শহীদুল ইসলাম বাবুল, সাবেক ছাত্র দল নেতা হাবিবুর রশীদ হাবিব ফজলুর রহমান খোকন প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।