প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে নারী ও শিশুরা

ঢাকা শিশু হাসপাতালে চলতি মাসে প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে দুই শিশু ও রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে আরেকজনসহ মোট তিন শিশুর মৃত্যু হয়

প্রকাশ | ২৪ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
প্রাণঘাতী এডিস মশা
নারী ও শিশুদের জন্য প্রাণঘাতী হয়ে উঠছে ডেঙ্গু জ্বরের জীবাণুবাহী এডিস মশা। চলতি বছর রাজধানীতে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে সাতজনের মৃত্যু হয়েছে। বছরের শুরুতে জানুয়ারিতে একজন, জুন মাসে তিনজন ও জুলাই মাসে তিনজনের মৃত্যু হয়। মৃতদের মধ্যে চারজন প্রাপ্তবয়স্ক নারী ও তিনজন শিশু। রাজধানীর আগারগঁাওয়ের ঢাকা শিশু হাসপাতালে চলতি মাসে প্রথম ও দ্বিতীয় সপ্তাহে দুই শিশু ও রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে আরেকজনসহ মোট তিন শিশুর মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ন্যাশনাল হেলথ ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টারের ইনচাজর্ ডা. আয়েশা আক্তার জানান, গত ৪ জুলাই ক্যান্টনমেন্ট থানার ইব্রাহিমপুরের বাসিন্দা আট বছরের মেয়ে শিশু হিমুকে জ্বর, বমি ও তলপেটে ব্যথা নিয়ে হাসপাতালে ভতির্ করানো হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৮ জুলাই তার মৃত্যু হয়। গত ১৫ জুলাই ৩৩৮/এ, পূবর্ নাখালপাড়ার বাসিন্দা ৯ বছরের শিশু তাহামিদকে জ্বর নিয়ে ঢাকা শিশু হাসপাতালে ভতির্ করায় তার পরিবার। একদিন পর ১৬ জুলাই চিকিৎসাধীন অবস্থায় সেও মারা যায়। ডেঙ্গু শকড সিনড্রোমে তার মৃত্যু হয়। এর আগে ১২ জুলাই রাজধানীর সেন্ট্রাল হাসপাতালে আরিয়ান নামে এক বছর সাত মাস বয়সী এক শিশু ডেঙ্গু শকড সিনড্রোমে মারা যায়। শিশু হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, চলতি মাসে কমপক্ষে ছয়জন ডেঙ্গু আক্রান্ত শিশু হাসপাতালে ভতির্ রয়েছে। তারা হলো মিরপুর শাহ আলীবাগের মারুফ আলম (৮), মিরপুর আহমেদনগর পাইকপাড়ার জাফর (১১ মাস), তেজগঁাও শাহিনবাগের এনাম (৩ বছর), ওয়ারি টিপু সুলতান রোডের তাসফিয়া (৪ বছর ৬ মাস), রাঙ্গামাটির ফাহিম (১১ বছর) ও গেÐারিয়া ঢাকার হাফসা (১০ মাস)। তারা সবাই সবির্নম্ন তিন দিন থেকে পঁাচ দিন জ্বরে ভুগে হাসপাতালে ভতির্ হয়। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের ডেঙ্গু ধরা পড়ে। এ ছাড়া বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডাক্তারদের প্রাইভেট চেম্বারে জ্বর নিয়ে অনেক শিশু রোগী ভতির্ হচ্ছে। পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর কারও কারও ডেঙ্গু পজিটিভ ধরা পড়ছে। রোগতত্ত¡ বিশেষজ্ঞদের মতে, জুন থেকে অক্টোবর পযর্ন্ত ডেঙ্গু বাহক এডিস মশার উপদ্রব বাড়ে। থেমে থেমে বৃষ্টির কারণে এডিস মশার প্রজনন স্থানগুলোতে লাভার্ জন্মে। ডেঙ্গু জ্বর নিরাময়যোগ্য হলেও এই জ্বরে আক্রান্তদের মধ্যে নারী ও শিশুদের ঝুঁকি বেশি। এডিস মশা সাধারণত বাসাবাড়িতে ফুলের টব, টায়ার, ফ্রিজ, এসিতে জমে থাকা পানিতে জন্মায়। তবে ডেঙ্গু থেকে বঁাচতে করণীয় বিষয়েও কথা বলেছেন রোগতত্ত¡ বিশেষজ্ঞরা। তারা জানান, ডেঙ্গু থেকে বঁাচতে হলে যেসব জায়গায় মশা জন্ম নেয়, ওইসব জায়গা পরিষ্কারে নগরের প্রত্যেক নাগরিককে সচেতন হতে হবে। নিজ বাড়ির আঙিনা ও চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। মশার ওষুধ ছিটানোর পাশাপাশি ঘুমানোর সময় প্রয়োজনে মশারি টানাতে হবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাওয়া তথ্য মতে, বাংলাদেশে ডেঙ্গুর প্রাদুভার্ব তীব্র হয় ২০০০ সালে। ২০০০ সাল থেকে ২০১৩ সাল পযর্ন্ত দেশে ২৮ হাজার ১০১ জন ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত ও ২৪২ জন মারা যান। এর মধ্যে ২০০০ সালে সবোর্চ্চ পঁাচ হাজার ৫৫১ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত ও ৯৩ জনের মৃত্যু হয়। চলতি বছরের ডেঙ্গু চিত্র : ১ জানুয়ারি থেকে ২২ জুলাই পযর্ন্ত মোট ৮৭০ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভতির্ হয়েছেন ১২ জন। বতর্মানে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে ভতির্ হয়ে চিকিৎসাধীন রয়েছেন ৮৮ জন। এর মধ্যে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে সাতজনের। মৃতদের মধ্যে প্রাপ্তবয়স্করা হলেন নাগির্স বেগম (৪৩), ফারজানা আক্তার (৩৪), রোজলিন বৈদ্য (৩১), সেজুতি (২৬)। বাকি তিনজন শিশু। মৃতদের মধ্যে একজন ইউনাইটেড, দুইজন সেন্ট্রাল হাসপাতালে, দুইজন শিশু হাসপাতালে, একজন হলি ফ্যামিলি ও একজন বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায়।