৬ষ্ঠ আদমশুমারিতে থাকছে প্রবাসী গণনা

প্রকাশ | ১৬ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
আগামী জুলাই মাস থেকে শুরু হচ্ছে দেশের ষষ্ঠ আদমশুমারির বিশাল কর্মযজ্ঞ। এই শুমারিতে এবার গণনা করা হবে প্রবাসীদের। একই সঙ্গে স্মরণ করা হবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। পৃথিবীজুড়ে প্রায় এক কোটির বেশি প্রবাসী বাংলাদেশি রয়েছেন। এদের বাদ দিয়ে আর আদমশুমারি নয়। প্রবাসী বাংলাদেশিদের মধ্যে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক বসবাস করেন, তাদের সংখ্যা প্রায় ২৫ লাখ। সৌদি আরব ছাড়াও আরব বিশ্বের আরো কয়েকটি দেশে যেমন সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, ওমান, কাতার ও বাহরাইনে প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশির বসবাস। এছাড়া যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, ইতালি, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়াতেও প্রচুর সংখ্যক প্রবাসী বাংলাদেশি বসবাস করেন। এসব প্রবাসীর গণনা করতে বিদেশে যাওয়া লাগবে না। গণনার সময় লিস্টিং পেপার বা আদমশুমারি ফরমে প্রবাসীদের জন্য আলাদা ঘর থাকবে। একটা খানার (চারজনের পরিবার) সব সদস্যের তথ্য সংগ্রহ করা হবে। সেই পরিবারের কোনো সদস্য যদি বিদেশে বসবাস করেন সংগ্রহ করা হবে তারও সব তথ্য। প্রবাসীরা কোন দেশে বসবাস করেন, কতদিন ধরে বসবাস করেন, কোন পেশায় জড়িত, আয়-ব্যয় সব তথ্য সংগ্রহ করবে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস)। বিবিএস সূত্র জানায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শততম জন্মবার্ষিকী শুরু হবে ২০২০ সালের ১৭ মার্চ এবং শেষ হবে ২০২১ সালের ১৭ মার্চ। দিনটাকে স্মরণীয় করে রাখতে সেই দিন থেকেই ষষ্ঠ আদমশুমারির গণনার কাজ শুরু হবে, চলবে ২৪ মার্চ পর্যন্ত। 'পপুলেশন অ্যান্ড হাউজিং সেনশাস ২০২১' প্রকল্পের আওতায় ষষ্ঠ আদমশুমারি অনুষ্ঠিত হবে। স্যাটেলাইট ইমেজের মাধ্যমে ২০২১ সালে ষষ্ঠ ডিজিটাল আদমশুমারি করা হবে। এ পদ্ধতিতে দেশের একটি খানাও (পরিবার) বাদ পড়বে না। স্যাটেলাইট ইমেজ দেখে আদমশুমারিতে সারাদেশে চার লাখ গণনাকারী তথ্য সংগ্রহ করবেন। শিক্ষিত বেকারদের আদমশুমারি প্রকল্পে কাজ করার সুযোগ দেয়া হবে। এর আগে প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষকদের আদমশুমারির কাজে সুযোগ দেয়া হয়েছিল। তবে এবার তাদের অংশগ্রহণের সুযোগ থাকছে না। শুমারি ৭ দিন ধরে অনুষ্ঠিত হবে। এই সাত দিনে চার কোটি খানায় (পরিবার) তথ্য সংগ্রহ করা হবে। একজন গণনাকারী ১০০টি খানার তথ্য সংগ্রহ করবেন। ফলে এক সপ্তাহে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা আয় করবেন তারা। আদমশুমারির পরিকল্পনা প্রসঙ্গে প্রকল্পের পরিচালক জাহিদুল হক সরদার বলেন, 'ষষ্ঠ আদমশুমারিতে এবারই প্রথম আমরা প্রবাসীদের অন্তর্ভুক্ত করতে যাচ্ছি। তাদের গণনা করাই আমাদের প্রধান উদ্দেশ্য। লিস্টিং পেপারের মাধ্যমে তাদের বিষয়ে সব ধরনের তথ্য নেয়া হবে পরিবারের নিকট থেকে।' তিনি আরো বলেন, জাতির পিতার শততম জন্মবার্ষিকী স্মরণ করা হবে ষষ্ঠ আদমশুমারিতে। চলতি বছরের জুলাই থেকে শুরু হবে আদমশুমারির কর্মযজ্ঞ। এবার শিক্ষিত বেকারদের কাজ করার সুযোগ দেয়া হবে। এতে মনের আনন্দ নিয়ে তারা কাজ করবেন। স্যাটেলাইট ইমেজ কাজে সহায়তা করবে মার্কিন মহাকাশ গবেষণা সংস্থা ন্যাশনাল অ্যারোনটিক্স অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (নাসার)। এ পদ্ধতির দশমিক ৫ মিটার এলাকাও চিহ্নিত করা যাবে সহজে। এমনকি একটা সুচ পড়ে থাকলেও ধরা পড়বে ক্যামেরায়। এ পদ্ধতিতে আদমশুমারি সঠিকভাবে হবে বলে মনে করেছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস)। এর আগে ২০১১ সবশেষ আদমশুমারি ও গৃহগণনা অনুষ্ঠিত হয়; যা পঞ্চম আদমশুমারি হিসেবে পরিচিত। ২০১১ সালের ৫ দিনব্যাপী (১৫ থেকে ১৯ মার্চ) এ গণনা অনুষ্ঠিত হয়। বিবিএস প্রতি ১০ বছর পরপর আদমশুমারি পরিচালনা করে। বিবিএস সূত্র জানায়, একটি মানুষও গণনার বাইরে থাকবে না। সব মানুষের অবস্থান নিশ্চিত করা সহজ হবে স্যাটেলাইট ইমেজ ব্যবহার করে। বিনিময়ে ৫০ কোটি টাকা দিতে হবে নাসাকে। সবমিলিয়ে ষষ্ঠ আদমশুমারির মোট ব্যয় হতে পারে প্রায় তিন হাজার কোটি টাকা। আদমশুমারি মানেই দেশব্যাপী বিশাল কর্মযজ্ঞ। কিন্তু ডিজিটাল এই শুমারিতে কোনো খাতা-কলমের ব্যবহার থাকবে না। সবকিছুই অনলাইনে ডাটা সংগ্রহ করা হবে। শুমারির প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান বু্যরো (বিবিএস)। শুমারি ৭ দিন ধরে অনুষ্ঠিত হবে। এই সাত দিনে চার কোটি খানায় (পরিবার) তথ্য সংগ্রহ করা হবে। ভাসমান লোকজনকে গণনা করা হবে মধ্যরাতের পরেই। বহুতল ভবনের একজন বাসিন্দাও যাতে গণনা থেকে বাদ না পড়ে সেই কথাও চিন্তা করছে বিবিএস। সঠিক শুমারি দেশবাসীকে উপহার দিতে বিবিএস সব পর্যায় থেকে মতামত গ্রহণ শুরু করেছে। আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে চার লাখ ডিজিটাল ডাটা কালেক্টর আদমশুমারিতে অংশ নেবেন। তাদের কীভাবে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে সেই বিষয়েও ছক কষছে বিবিএস। ব্যবহার করা হবে মাল্টিমুড ইমেইল, অনলাইন, ট্যাব, আধুনিক প্রযুক্তিগত জ্ঞান ও অডিও ভিজুয়্যাল। এ বিষয়ে ডাটা কালেক্টরদের প্রশিক্ষণ দেবে বিবিএস। আদমশুমারির জন্য মাঠ থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হবে সাত দিন। কিন্তু এর পেছনে থাকবে তিন বছরের বিশাল কর্মযজ্ঞ, প্রশিক্ষণ। সব তথ্য সংগ্রহ করতে অত্যাধুনিক ডিভাইস ব্যবহার করা হবে। তথ্যগুলো এমনভাবে সংগ্রহ করা হবে যেন নাগরিক চাইলে এর থেকে সেবা নিতে পারেন। দেশের জনসংখ্যার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। কারো মতে ২০ কোটি, আবার কেউ বলে ১৬ কোটি। সবশেষ আদমশুমারিত ২০১১ সালে অনুষ্ঠিত হয়। ওই জরিপে দেশের মোট জনসংখ্যা ছিল ১৫ কোটি ২৫ লাখ ১৮ হাজার। ২০২১ সালের শুমারির পরে সঠিক তথ্য জানা যাবে। নিয়ম অনুযায়ী ১০ বছর পরপর আদমশুমারি করা হয়। বাংলাদেশে প্রথম আদমশুমারি হয় ১৯৭৪ সালে। তারপর ১৯৮১ সাল থেকে প্রতি ১০ বছর পরপর আদমশুমারি হয়ে আসছে।