আজ মহাষ্টমী ও কুমারী পূজা
প্রকাশ | ১১ অক্টোবর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি ডেস্ক
আজ শারদীয় দুর্গাপূজার মহাষ্টমী উদযাপন করবে হিন্দু সম্প্রদায়। মহাষ্টমীতে বিপুল উৎসাহ ও উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠিত হবে দুর্গাপূজার বিশেষ পর্ব 'কুমারী পূজা'। রাজধানীর রামকৃষ্ণ মিশনসহ সারাদেশে আজ পূজামন্ডপগুলোতে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
দেবী দুর্গার কুমারী রূপের নাম 'উমা'। সনাতন শাস্ত্রমতে, মাতৃভাবে কুমারীকন্যাকে জীবন্ত প্রতিমা কল্পনা করে জগৎমাতার উদ্দেশে শ্রদ্ধা নিবেদনই কুমারী পূজা। এ পূজার মাধ্যমে নারী হয়ে উঠবে পবিত্র ও মাতৃভাবাপন্ন। প্রত্যেকে নারীর প্রতি হবে শ্রদ্ধাশীল।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা মনে করেন, কুমারী কন্যার পূজা একাধারে সৃষ্টিকর্তার উপাসনা, মানবের বন্দনা আর পৃথিবীতে নারীর মর্যাদার প্রতিষ্ঠা। নারীর সম্মান, মানুষের সম্মান আর সৃষ্টিকর্তার আরাধনাই কুমারী পূজার অন্তর্নিহিত শিক্ষা।
শারদীয় দুর্গোৎসবের তৃতীয় দিন আজ রাজধানীসহ
সারাদেশে পূজামন্ডপগুলোতে যথাযোগ্য ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্যে পূজা-অর্চনা করবেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। বৃহস্পতিবার ছিল মহাসপ্তমী। ওইদিন ভক্তরা দিনভর পূজামন্ডপগুলোতে আনন্দে মাতে।
জানা গেছে, মহাষ্টমীতে শুক্রবার সকাল ৯টা থেকে শুরু হবে কুমারী পূজা। পূজার চারদিনের মধ্যে মহাষ্টমীর অঞ্জলি ও কুমারী পূজা সর্বাধিক তাৎপর্যপূর্ণ। মহাষ্টমীর পূজা অনুষ্ঠিত হবে সকাল ৬টা ১০ মিনিটে এবং সকাল ৯টায় শুরু হবে কুমারী পূজা। এদিন কুমারী রূপে দেবী দুর্গার আরাধনা করবেন পুণ্যার্থীরা।
১৬টি উপকরণ দিয়ে মহাষ্টমী পূজার আনুষ্ঠানিকতা শুরু হবে। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বাতাস- এই পাঁচ উপকরণে দেওয়া হয় 'কুমারী' মায়ের পূজা। অর্ঘ্য প্রদানের পর দেবীর গলায় পরানো হবে পুষ্পমাল্য। কুমারী পূজা শেষে ভক্তরা মহাষ্টমীর পুষ্পাঞ্জলি দেবেন।
জানা যায়, ১৯০১ সালে ধর্মপ্রচারক স্বামী বিবেকানন্দ কলকাতার বেলুড় মঠে কুমারী পূজার মাধ্যমে এর প্রচলন করেন। তখন থেকে প্রতিবছর দুর্গাপূজার অষ্টমী তিথিতে এ পূজা চলে আসছে। পূজার আগ পর্যন্ত কুমারীর পরিচয় গোপন রাখা হয়। এছাড়া নির্বাচিত কুমারী পরবর্তী সময়ে স্বাভাবিক জীবনযাপন আচার-অনুষ্ঠান করতে পারে। শাস্ত্র অনুসারে, সাধারণত ১ থেকে ১৬ বছরের সুলক্ষণা কুমারীকে পূজা করা হয়।
কুমারী পূজা ছাড়াও আজ মহাষ্টমীতে রাজধানীর শাঁখারী বাজার, ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির, রমনা কালী মন্দিরসহ সারাদেশে বিভিন্ন মন্দিরে বেলা একটা থেকে দিনভর ভক্তদের মাঝে প্রসাদ বিতরণ করা হবে। মন্দির ও মন্ডপগুলোতেও পূজা ও অন্যান্য কর্মসূচি পালন করা হবে।
সপ্তমীতে পাপমোচনের প্রত্যাশা
এদিকে, সাত জনমের পাপমোচনের প্রত্যাশা নিয়ে নবপত্রিকা প্রবেশ ও স্থাপনের মাধ্যমে শারদীয় দুর্গোৎসবের সপ্তমী পূজায় অংশ নিলেন ভক্তরা।
রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরে বৃহস্পতিবার সকাল ৭-৫৩ মিনিটে এই পূজা শুরু হয়, শেষ হয় ১০টায়। মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় ও উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী পূজা পরিচালনা করেন।
ভক্তরা দেবীদুর্গার চরণে অঞ্জলি দেন। কেউ কেউ দেবীর পদজলে উপবাস ভেঙে প্রার্থনা করেন।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত ধর্মদাশ চট্টোপাধ্যায় বলেন, 'সপ্তমীতে পূজা দিলে সপ্তজনমের, মানে সাত জনমের পাপমোচন হয়ে যায়।'
বৃহস্পতিবার মহাসপ্তমীর সকালে প্রথমে নবপত্রিকা স্থাপন করা হয়। 'নবপত্রিকা' শব্দটির আক্ষরিক অর্থ ৯টি গাছের পাতা। কদলী বা রম্ভা (কলা), কচু, হরিদ্রা (হলুদ), জয়ন্তী, বিল্ব (বেল), দাড়িম্ব (দাড়িম), অশোক, মান ও ধান- এই ৯টি উদ্ভিদকে পাতাসহ একটি কলাগাছের সঙ্গে একত্র করা হয়।
পরে একজোড়া বেলসহ শ্বেত অপরাজিতা লতা দিয়ে বেঁধে লালপাড় সাদা শাড়ি জড়িয়ে ঘোমটা দেওয়া বধূর আকার দেওয়া হয়। এরপর এতে সিঁদুর দিয়ে সপরিবারে দেবীপ্রতিমার ডান দিকে দাঁড় করিয়ে পূজা করা হয়। প্রচলিত ভাষায় নবপত্রিকার নাম 'কলাবউ'।
নবপত্রিকার ৯টি উদ্ভিদ আসলে দেবীদুর্গার ৯টি বিশেষ রূপের প্রতীকরূপে বিবেচনা করা হয়। এই ৯ দেবী একত্রে 'নবপত্রিকাবাসিনী নবদুর্গা' নামে 'নবপত্রিকাবাসিন্যৈ নবদুর্গাযৈ নমোঃ' মন্ত্রে পূজিত হন।
নবপত্রিকা প্রবেশের পর দর্পণে দেবীকে মহাস্নান করানো হয়। দুর্গা প্রতিমার সামনে একটি দর্পণ বা আয়না রেখে সেই দর্পণে প্রতিফলিত প্রতিমার প্রতিবিম্বে বিভিন্ন উপচারে দেবীকে স্নান করানো হয়।
ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের উপদেষ্টা পুরোহিত প্রণব চক্রবর্তী বলেন, 'এবার তিথির কারণে এক দিন আগেই মঙ্গলবার বোধন এবং পরদিন অধিবাসের মধ্য দিয়ে দেবীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়। বোধন হলো উপলব্ধি করা যে, তিনি এসেছেন। অধিবাস হলো আমন্ত্রণ জানানো যে, আমরা পূজা করব। আর সপ্তমী থেকে মূলত পূজা শুরু।'
সনাতন ধর্মের বিশ্বাস অনুযায়ী, মহালয়ার দিন 'কন্যারূপে' ধরায় আসেন দশভূজা দেবীদুর্গা; বিসর্জনের মধ্য দিয়ে তাকে এক বছরের জন্য বিদায় জানানো হয়। তার এই 'আগমন ও প্রস্থানের' মধ্যে আশ্বিন মাসের শুক্লপক্ষের ষষ্ঠী থেকে দশমী তিথি পর্যন্ত পাঁচ দিন চলে দুর্গোৎসব।
বাংলাদেশ পূজা উদ্যাপন পরিষদের উপদেষ্টা কাজল দেবনাথ বলেন, 'ষষ্ঠী থেকেই আমাদের উৎসব শুরু হলেও উৎসবের আনন্দটা পুরোদমে শুরু হয় সপ্তমী থেকে। মায়ের আগমনে আমরা আনন্দ করব এবং বিশ্বশান্তির জন্য মঙ্গল কামনা করব।'
এবার সেনাবাহিনীর নিরাপত্তায় পূজা হওয়ায় সবাই 'নিরাপদ' অনুভব করলেও সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হওয়ার আহ্বান জানান কাজল দেবনাথ।
তিনি বলেন, 'পুরো দেশের মানুষ আমরা একটি পরিবার। এ দেশে সব ধর্মের মানুষ নিরাপদে তাদের ধর্মচর্চা করবেন বলে আশা করি। সব রাজনৈতিক দল এবং মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির ঐক্য দরকার। সবাই মিলে একটি পরিবার হয়ে থাকতে পারলে আমাদের কাউকেই আর অনিরাপদ অনুভব হবে না। সবার মধ্যে ভ্রাতৃত্ববোধ এবং শুভবোধ জাগ্রত হোক।'
ভক্তদের অনেকেই এদিন দেবীকে অঞ্জলি দিতে মন্ডপে আসেন। সপ্তমীর দুপুরে ভক্তদের জন্য প্রসাদ বিতরণ করা হবে বলে ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দিরের দপ্তর থেকে জানানো হয়।
মন্দির কর্তৃপক্ষ জানায়, এবার তিথির কারণে অষ্টমী পূজাও আগে হবে। শুক্রবার সকাল ৬টার আগে অষ্টমী পূজা শেষ করতে হবে এবং ৮টার মধ্যে সন্ধি পূজা শেষ করতে হবে।
এ বছর দেবীদুর্গার আগমন হয়েছে দোলায় বা পালকিতে এবং দেবী কৈলাসে ফিরবেন ঘোটকে বা ঘোড়ায়।
পূজা উদ্যাপন পরিষদ জানিয়েছে, দেশের ৩১ হাজার ৪৬১টি মন্দির ও মন্ডপে এবার দুর্গাপূজা হচ্ছে। এর মধ্যে ২৫২টি মন্ডপ ঢাকায়।