শুক্রবার ঢাকায় রামপুরা-জিরানী খাল পরিচ্ছন্নকরণ অভিযানের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতা করেন পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান -যাযাদি
পানিসম্পদ এবং পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছেন, 'এখনকার প্রজন্ম পরিষ্কার নদী দেখে নাই, পরিষ্কার খাল দেখে নাই। আমরা নদীর জন্য মন খারাপ করি, কারণ আমরা ছোটবেলায় পরিষ্কার নদী দেখেছি। এখনকার প্রজন্মকে উদ্দেশ করে তিনি বলেন, আপনারা কোনদিন পরিষ্কার নদী দেখেননি, নদী পরিষ্কার হলে এটা কেমন হয়, মানুষের কত কাজে লাগে এটা আপনারা জানেন না।'
শুক্রবার ঢাকায় রামপুরা-জিরানী খাল পরিচ্ছন্নকরণ অভিযান অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন তিনি।
এর আগে, শুক্রবার সকালে ঢাকায় রামপুরা ত্রিমোহিনী ঈদগাহ মাঠে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের আয়োজনে যুব ও ক্রীড়া উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া রামপুরা-জিরানী খাল পরিচ্ছন্নকরণ অভিযানের উদ্বোধন করেন। ১ নভেম্বর জাতীয় যুব দিবস-২০২৪ উদযাপন উপলক্ষে সারাদেশে ৬৪ জেলায় নির্বাচিত ৬৪টি খাল/জলাশয় পরিচ্ছন্নকরণ অভিযানের অংশ হিসেবে এ কর্মসূচি নেওয়া হয়।
উপদেষ্টা রিজওয়ানা হাসান বলেন, 'আজকে আপনাদের হাত দিয়ে যে খালটা পরিষ্কার হবে, এই খালটা যেন আগামীতেও পরিষ্কার থাকে। আগামী দিনের নেতা হিসেবে এ দায়িত্বটা কিন্তু আপনাদের নিতে হবে।'
উপদেষ্টা আরও বলেন, 'আজকে সারাদেশে ৬৪ জেলায় নির্বাচিত ৬৪টি খাল/জলাশয় পরিচ্ছন্নকরণ অভিযানের ধারণাটি এসেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় থেকে এবং এটাই হচ্ছে যুবকদের শক্তি। তিনি বলেন, আজকে এই খাল পরিচ্ছন্নকরণ অভিযানে অংশ নিয়েছে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়, পানি উন্নয়ন বোর্ড, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনসহ অনেকেই।' উপদেষ্টা বলেন, 'যারা বলেন সরকারের মধ্যে সমন্বয় নেই, কো-অর্ডিনেশন নেই, আমরা কিন্তু তা আস্তে আস্তে ভুল প্রমাণ করেছি। জাতীয় স্বার্থে আমাদেরকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। আজকের এই খাল পরিচ্ছন্নকরণ অভিযান অত্যন্ত সুসমন্বয়ের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে- এটাই তার বড় প্রমাণ।'
অনুষ্ঠানে পানিসম্পদ উপদেষ্টা আরও বলেন, 'আমরা যে ৬৪ জেলায় ৬৪টি খাল পরিষ্কার করার কর্মসূচি হাতে নিয়েছি এটা আজকে থেকে শুরু হয়ে আগামী ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত চালু থাকবে। তিনি বলেন, এটা আমরা শেষ করে দেবো না, আমরা প্রত্যেকটি খালকেন্দ্রিক স্থানীয় পর্যায়ে একটি করে কমিটি করে দেবো। কমিটিতে যারা থাকবে তারা দেখবে যে খালটা কারা আবার নোংরা করার চেষ্টা করছে এবং প্রথমেই তাদেরকে সেখানে প্রতিহত করা হবে।'
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা আরও বলেন, খালের আশপাশে যারা বাসা-বাড়ির মালিক, দোকান-পাটের মালিক, যারা মনে করেন খালটাই হচ্ছে আপনাদের সম্পত্তি এবং এটা নোংরা করার আপনাদের অধিকার আছে, আজকে যুব সম্প্রদায় আপনাদের স্পষ্ট বার্তা দিচ্ছে যে এটা জাতীয় সম্পত্তি এবং এটা নষ্ট করার কোনও অধিকার আপনাদের নাই।
সবশেষে প্রধান অতিথি রিজওয়ান হাসান যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়কে ধন্যবাদ জানিয়ে তার বক্তব্যে বলেন, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পার্টনারশিপে এ কাজটি করছে। এটার পুরোটা কাজ জাতীয় দায়িত্ব মনে করে আপনারা যারা স্বেচ্ছাসেবীরা আছেন, যুব সম্প্রদায়ের যারা আছেন, কাজটি করবেন। এ কাজগুলো আগামীতেও অব্যাহত, চলমান থাকবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। আমরা যেন আগামী প্রজন্মকে দূষণমুক্ত খাল আর দূষণমুক্ত নদী দেখাতে পারি এটাই যে আজকে যুব দিবসের অন্যতম প্রতিপাদ্য, এটা ভাবতে আমার বেশ ভালো লাগছে বলে উপদেষ্টা তার বক্তৃতায় উলেস্নখ করেন।
যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের সচিব মো. রেজাউল মাকছুদ জাহিদীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন যুব উন্নয়ন অধিদফতরের মহাপরিচালক ড. গাজী মো. সাইফুজ্জামান। অনুষ্ঠানে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন পানিসম্পদ সচিব নাজমুল আহসান। অনুষ্ঠান শেষে স্বেচ্ছাসেবী ও যুব সংগঠনের যুবকর্মীদের খাল পরিচ্ছন্নকরণ অভিযানের বিষয়ে শপথবাক্য পাঠ করানো হয়।