এবার গণ-অভু্যত্থানটা ব্যর্থ হয়েছে :ফরহাদ মজহার

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবে গোল টেবিল বৈঠকে বক্তব্য রাখেন লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার -ফোকাস বাংলা
লেখক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ফরহাদ মজহার বলেছেন, 'আইন ও রাজনীতির সম্পর্ক আমরা বুঝি না বলে এবার গণ-অভু্যত্থানটা ব্যর্থ হয়েছে। ব্যর্থ হওয়াটা জরুরি ছিল, যাতে আমরা টের পাই আমাদের অজ্ঞতা, আমাদের বেহুঁশ অবস্থা। এটা আমাদের ভুল দিকে নিয়ে যাবে। আমরা বারবার সংস্কার সংস্কার বলছি। আপনি তো বাড়িই গঠন করেন নাই, সংস্কার কীভাবে করবেন?' শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে সেন্টার ফর ডেমিক্রেসি অ্যান্ড পিস স্টাডিজ আয়োজিত 'দুর্নীতি ও রাষ্ট্রপতি বা সংস্কার' শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকে তিনি এসব কথা বলেন। ফরহাদ মজহার বলেন, 'আমরা গণতন্ত্রের কথা বলি জনগণকে উপেক্ষা করে। আমরা গণ-অভু্যত্থানের পরেও জনগণকে উপেক্ষা করি, এটা অদ্ভুত ব্যাপার। এতগুলো মানুষ শহীদ হয়ে গেল, এতগুলো মানুষ পঙ্গু হয়ে পড়ে আছে, তারপরেও কিন্তু আমরা জনগণকে উপেক্ষা করেছি। এটা ঠিক নয়।' এই রাজনৈতিক বিশ্লেষক বলেন, সংবিধান শব্দটা সঠিক নয়। এটা ঔপনিবেশিক শক্তি ব্যবহার করে। তারা যাদের শাসন করবে, তাদের শাসন করার জন্য আইন প্রণয়ন করা হয়। এটাকেই বলা হয় সংবিধান। গণতন্ত্রে শাসিত ও শাসক বলে কোনো পার্থক্য থাকতে পারে না। গণতন্ত্রে জনগণ নিজের শাসক। তিনি বলেন, '৭২ সালে আপনি যাদের পাকিস্তানের গঠনতন্ত্র বানানোর জন্য ভোট দিয়েছেন, তারাই ফিরে এসে স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়ন করল। তারা শাসন করতে যেটা চেয়েছে সেটাই করেছে। তারা সমাজতন্ত্র ঢুকিয়েছে, ধর্মনিরপেক্ষতা ঢুকিয়েছে। ওদের যে মতাদর্শ যেটাকে আমরা ফ্যাসিজম বলি। এটা আমাদের ওপর চাপিয়ে দিয়ে এতটা বছর শাসন করা হয়েছে। আওয়ামী লীগ বোঝানোর চেষ্টা করেছে, আমরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেছি। অথচ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ছিল সাম্য, মানবিক মর্যাদা এবং ন্যায়বিচার।' এই লেখক বলেন, 'আপনি একটা গণ-অভু্যত্থান করেছেন। কোনো অভু্যত্থানে কখনো শপথ করা লাগে না। আপনি যদি শহীদ মিনার বা রাজু ভাস্কর্যের সামনে শপথ গ্রহণ করতেন তাহলে যারা শহীদ হয়েছে, যারা পঙ্গু হয়েছে, তাদের যথার্থ মর্যাদা আপনিই দিতে পারতেন। যখনই আপনি বঙ্গভবনে ঢুকেছেন তখনই শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করেছেন। তারই কিন্তু কুফল প্রতিটা দিন আপনারা দেখছেন। এর কুফল আপনারা আগামী দিনেও দেখতে পারবেন। এটা বারবার বিভিন্নভাবে আসবে।' তিনি বলেন, 'আপনারা সরকারের দু-একটা সংস্কার নিয়ে কথা বলছেন। এটা কিন্তু এখনকার আলোচনার বিষয় না। সরকারে আজ একজন আছে আগামীকাল আরেকজন থাকবে। মূল বিষয়টা হচ্ছে রাষ্ট্র গঠন করা। আপনাদের এমন একটি রাষ্ট্র গঠন করতে হবে, যেখানে রাষ্ট্রের মধ্যে আমরা প্রত্যেকেই এই রাষ্ট্রের অন্তর্গত। আমাদের অভিপ্রায়টা সার্বজনীন থাকতে হবে। আমরা এমন একটা রাষ্ট্র চাই যেটা আমাদের জীবন ও জীবিকা নিশ্চিত করবে। আমার জীবন ও ব্যক্তির স্বাধীনতা ও মর্যাদা হরণ করতে পারবে না। একটা গঠনতন্ত্র তৈরি করা খুব কঠিন কাজ না।' তিনি আরও বলেন, 'অনেকে বলেন বাংলাদেশে ইসলাম কায়েম করতে হলে ফরহাদ মজহারকে নাকি কতল (হত্যা) করতে হবে। আমাকে কতল করলে যদি ইসলাম কায়েম হয় তবে ইনশাআলস্নাহ আলস্নাহর নামে কতল হয়ে যাক। আমাকে ভয় দেখাবেন না। কিন্তু ফ্যাসিজমকে ইসলাম বলে প্রচার করবেন না।'