পর্যটকের জন্য আবারও উন্মুক্ত হচ্ছে পাহাড়ে ভ্রমণের দুয়ার

প্রকাশ | ০২ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

রিপন সরকার, খাগড়াছড়ি
পাহাড়ে সংঘাত-সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে নিরাপত্তা পরিস্থিতির কারণে পার্বত্য তিন জেলা খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবান ভ্রমণে পর্যটকদের 'নিরুৎসাহিত' করার যে অবস্থানে প্রশাসন ছিল, তা থেকে সরে আসছে। ফলে পর্যায়ক্রমে পর্যটকদের জন্য আবারও উন্মুক্ত হচ্ছে পাহাড়ি জনপদে ভ্রমণের দুয়ার। জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, প্রায় এক মাসের 'ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা' গতকাল শুক্রবার থেকে রাঙামাটির আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটগুলো পর্যটকদের জন্য উন্মুক্ত হয়েছে। আর ৫ নভেম্বর থেকে পর্যটকরা খাগড়াছড়িতে সাজেক ভ্রমণ করতে পারবেন। এছাড়া আগামী ১০ নভেম্বর থেকে বান্দরবান ভ্রমণের ওপর নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার হচ্ছে। দেশের এক-দশমাংশজুড়ে বিস্তৃত রূপময় ভূখন্ড তিন পার্বত্য জেলা- রাঙামাটি, বান্দরবান ও খাগড়াছড়ি। বিস্তৃত সংরক্ষিত বনাঞ্চল, উপত্যকা, নদী, পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে ঢেউ খেলানো সৌন্দর্য, পাহাড়ি ঝরনা-ঝিরি দেশ-বিদেশের অনেক আকর্ষণীয় স্থানকেও হার মানাতে পারে। পার্বত্য জেলার চারদিক ঢেউতোলা সবুজের উঁচু পাহাড়ের দেওয়াল। মাঝেমধ্যে ব্যস্ত ছোট ছোট শহর ও শহরের প্রবেশ পথের দুই পাশে সবুজের বাঁকে-বাঁকে উঁচু-নিচু সর্পিল রাস্তা। অনেক পর্যটকই পার্বত্য শহরকে ছবিতে দেখা নেপালের কাঠমান্ডু শহরের সঙ্গে তুলনা করে থাকেন। অনেকে এ অঞ্চলকে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাবিও বলে থাকেন। সময়ের ব্যবধানে খাগড়াছড়ি জেলার আলুটিলার রহস্যময় সুরঙ্গ, রিছাং ঝরনা, তৈদুছড়া ঝরনা, হর্টিকালচার সেন্টার, হাতিরমাথা, দেবতা পুকুর, মায়াবিনি লেক, নিউজিল্যান্ডপাড়াসহ জেলার অরণ্যঘেরা সবুজ প্রকৃতির টানে পর্যটকরা ছুটছেন পাহাড়ের পথে। মাত্র কয়েক বছরের ব্যবধানে বদলে গেছে পার্বত্য অঞ্চলের পর্যটন শিল্প। এখন সমৃদ্ধির পথে হাঁটছে এ শিল্প। প্রায় এক মাসের নিষেধাজ্ঞায় অনেকটাই থমকে গেছে এই তিন পার্বত্য অঞ্চলের অর্থনীতি। নিষেধাজ্ঞার পর থেকে বিপাকে পড়ে এ খাতে সংশ্লিষ্ট হাজারো মানুষ। সাজেক রিসোর্ট-কটেজ মালিক সমিতির সভাপতি সুপর্ণ দেব বর্মন জানান, এ মৌসুমে সহিংসতার ঘটনা না ঘটলে তারা ব্যবসা করতেন ৯ থেকে ১০ কোটি টাকা এবং লাভবান হতে পারতেন ৪ থেকে ৫ কোটি টাকা। খাগড়াছড়ি থেকে প্রতিদিন সাজেকে ৫০ থেকে ৬০টি চান্দের গাড়ি (জিপ) শতাধিক সিএনজি, মাহিন্দ্রা পর্যটকদের নিয়ে যাতায়াত করে। প্রতি শুক্রবার ১৫০ থেকে ১৬০টি গাড়ি এবং শনিবার ৮০ থেকে ১০০টি গাড়ি সাজেক-খাগড়াছড়ি যাতায়াত করে থাকে। সাজেক পরিবহণ সমিতির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনায় গত ২০ সেপ্টেম্বর থেকে কোনো পর্যটক না আসায় পরিবহণ ব্যবসায়ীরা ৫ কোটি থেকে ৬ কোটি টাকার ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এ মৌসুমে ব্যবসা করতে পারলে তাদের দেড় থেকে ২ কোটি টাকা আয় আসত। পরিবহণ চালক রহিম, জসিমসহ অনেকে জানান, পর্যটকদের ওপর ভিত্তি করে তাদের জীবন জীবিকা। এ পরিবহণ খাতে কয়েকশ শ্রমিক জড়িত। ব্যবসা না হওয়ায় তারাও অর্থকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন। এইজন্য সাজেকে পর্যটকদের নিয়মিত যাতায়াতে নিরাপত্তা জোরদার করতে সরকারের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন তারা। প্রশাসন পর্যটকদের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করার খবরে স্বস্তি ফিরেছে সবার মনে। পর্যটন-সংশ্লিষ্টদের আশা, আসছে পর্যটন মৌসুমে তারা এই ক্ষতি কিছুটা কাটিয়ে উঠতে পারবে। এর আগে, পাহাড়ি-বাঙালি সহিংসতার ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিন পার্বত্য জেলায় পর্যটকদের ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা জারি করে জেলা প্রশাসন। গত ৭ অক্টোবর খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসকরা যুগপৎভাবে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ৮ থেকে ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত তিন জেলায় 'পর্যটক ভ্রমণ নিরুৎসাহিত' করেন। এতে পার্বত্য এলাকা পর্যটকশূন্য হয়ে পড়ে। খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসক মো. সহিদুজ্জামান জানান, আগামী ৫ নভেম্বরের মধ্যে জেলার পর্যটন স্পটগুলো ভ্রমণপিপাসুদের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হবে। পর্যটকদের ভ্রমণে যাতে কোনো ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে না হয় তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।