চট্টগ্রামে যৌথবাহিনীর ওপর হামলা
হাজারী গলির পরিস্থিতি থমথমে দোকান সিলগালা, আটক ৮০
প্রকাশ | ০৭ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
চট্টগ্রাম বু্যরো
চট্টগ্রামের হাজারী গলিতে মঙ্গলবার রাতে উদ্ধার অভিযানে যাওয়া যৌথবাহিনীর ওপর অ্যাসিড জাতীয় পদার্থ, ইট ও ভাঙা কাঁচের বোতল ছুড়ে হামলা করা হয়েছে বলে জানিয়েছে যৌথবাহিনী। ফেসবুকে ইসকনবিরোধী একটি পোস্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে যৌথবাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে একদল বিক্ষোভকারী সংঘর্ষে জড়ায়। এ ঘটনায় ৮০ জনকে আটক করা হয়েছে। এলাকায় জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে পুরো এলাকার এখনো পরিস্থিতি থমথমে। দোকানপাটও সিলগালা।
বুধবার দুপুরে নগরের দামপাড়ায় সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেড ক্যাম্পে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন যৌথবাহিনীর পক্ষে টাস্কফোর্স-৪ এর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট কর্নেল ফেরদৌস আহমেদ হামলার পুরো ঘটনা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, 'ইসকনবিরোধী একটি ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে নগরের হাজারী লেইনে মঙ্গলবার বিকালে উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। আনুমানিক ৫০০ থেকে ৬০০ দুষ্কৃতিকারী হাজারী লেইনে ওসমান আলী ও তার ভাইকে হত্যা এবং দোকান জ্বালিয়ে দেওয়ার উদ্দেশে জড়ো হয়। স্থানীয় কন্ট্রোল রুম থেকে তথ্য পাওয়ার পর দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে সেনাবাহিনী, পুলিশ এবং বিজিবি সদস্যদের ছয়টি টহল দল ওই এলাকায় পৌঁছে।'
তিনি বলেন, 'বিশৃঙ্খলাকারীদের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় জানমাল রক্ষা এবং মব জাস্টিস রোধে যৌথবাহিনী ওসমান আলী ও তার ভাইকে ওই এলাকা থেকে উদ্ধার করে। উত্তেজিত জনতাকে যথাযথ আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে সমাধানের বিষয়টি আশ্বস্ত করার পরও এক পর্যায়ে উগ্র বিশৃঙ্খলাকারীরা আরও আক্রমণাত্মক হয়ে ওঠে। দুর্বৃত্তরা এ সময় যৌথবাহিনীর ওপর অতর্কিতভাবে জুয়েলারির কাজে ব্যবহার করা এসিড নিক্ষেপ করে এবং ভারী ইট-পাটকেলসহ ভাঙা কাচের বোতল ছুড়তে শুরু করে। এ ঘটনায় সেনাবাহিনীর পাঁচজন ও ?পুলিশের সাতজনসহ ১২ জন আহত হন।'
ফেরদৌস আহমেদ বলেন, 'সেনাবাহিনীর পাঁচ সদস্যকে সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া ঘটনাস্থলে দুর্বৃত্তরা ইট ছুড়ে সেনাবাহিনীর একটি পিকআপ ভ্যানের সামনের কাচ ভেঙে ফেলেছে। উদ্ধার অভিযানের পর দুর্বৃত্তদের শনাক্ত করতে যায় যৌথবাহিনীর ১০টি টহল দল। তারা রাত সাড়ে ৯টায় হাজারী লেইন এলাকায় গেলে লুকিয়ে থাকা দুষ্কৃতিকারীরা ফের যৌথবাহিনীর ওপর এসিড নিক্ষেপ করে। এ সময় যৌথবাহিনী ঘটনাস্থলে অভিযান চালিয়ে সন্দেহভাজন ৮০ জনকে আটক করে।'
টাস্কফোর্স-৪ এর মুখপাত্র বলেন, 'বর্তমানে বিভিন্ন সিসিটিভি ফুটেজ ও গোয়েন্দা তথ্য যাচাই-বাচাইয়ের মাধ্যমে প্রকৃত দুষ্কৃতিকারীদের শনাক্তের প্রক্রিয়া চলছে। আটক ব্যক্তিদের সংশ্লিষ্ট থানায় জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। তাদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আদালতে হস্তান্তরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে যৌথবাহিনীর অভিযান অব্যাহত আছে এবং হাজারী লেইনসহ নগরীর অন্যান্য জায়গায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।'
হাজারী লেইনের বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, 'এখন পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক আছে। আমরা নজরদারি রেখেছি। হাজারী লেইনসহ শহরের অন্য জায়গাও আমাদের নজরদারিতে আছে। এগুলো তদন্তের বিষয়। তদন্ত প্রক্রিয়া চলমান আছে। ওখান থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যেহেতু ওই এলাকায় দোকান থেকে সেনা ও পুলিশ সদস্যের ওপর এসিড নিক্ষেপ করা হয়েছে, এই পরিপ্রেক্ষিতে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে কয়েকটি দোকান সিলগালা করা হয়েছে। আমরা সংশ্লিষ্টতা খুঁজে বেড়াচ্ছি। দ্রম্নত তদন্ত কাজ শেষ করে দোকানগুলোর স্বাভাবিক কার্যক্রম নিশ্চিত করা হবে।'
সংবাদ সম্মেলনে র?্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র?্যাব) ফ্লাইট লেফট্যানেন্ট মো. সাইফুলস্নাহ, চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (মিডিয়া) কাজী মো. তারেক আজিজ, বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ-৮ এর সহকারী পরিচালক মো. শফিউলস্নাহ, আনসারের উপসহকারী পরিচালক সুলতানা পারভীন ছিলেন।
এদিকে, বুধবার সকালে সরেজমিন দেখা যায়, হাজারি গলির স্বর্ণ এবং ওষুধসামগ্রী বিক্রির দোকান বেশিরভাগই সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। অনেক ওষুধ ক্রেতা ওষুধ কিনতে এসে ফেরত যাচ্ছেন। মঙ্গলবার রাতে ঘটনার পর ওই এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি করা হলেও বুধবার সকাল নাগাদ তা শিথিল করা হয়। এ ছাড়া টেরিবাজার মোড় হয়ে হাজারী গলি সড়কের প্রবেশ পথের গেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। সেখানে সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে পুলিশ সদস্যদের। কেসিদে সড়কের মুখেই রাখা আছে পুলিশের একটি প্রিজন ভ্যান। ওই সড়কটি চালু রয়েছে।