কয়েক লাখ টাকার মাছ জাল ও ট্রলার লুট
ইলিশের ট্রলারে জলদসু্যর গুলিতে মাঝি নিহত, অপহৃত ১৯ জন
প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
বাঁশখালী (চট্টগ্রাম) প্রতিনিধি
কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার সোনাদিয়া উপকূলে ইলিশ মাছ ধরার একটি ট্রলারে গুলি চালিয়ে মোহাম্মদ মোকাররম (৪৫) নামে এক মাঝিকে (সারেং) হত্যা করেছে জলদসু্যরা। এ সময় তারা ১৯ মাঝিমালস্নাকে অপহরণের পাশাপাশি জেলেদের ধরা কয়েক লাখ টাকার ইলিশ মাছ, জাল ও ট্রলার লুট করে নিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার ভোর চারটায় 'এফবি আলস্নাহর দয়া' নামের ট্রলারে এই হামলার ঘটনা ঘটে।
নিহত মাঝি মোকাররমের বাড়ি কুতুবদিয়া উপজেলার উত্তর ধূরুং ইউনিয়নের আজিম উদ্দিন সিকদার পাড়ায়। তিনি জাফর আহমদ সিকদারের ছেলে এবং এই ইউনিয়ন পরিষদের ইউপি সদস্য রহিমা বেগমের স্বামী।
নিহতের স্বজনরা জানান, মোকাররম মাঝিসহ ২১ মাঝিমালস্না নিয়ে বাঁশখালীর শেখেরখিল ইউনিয়নে ইসমাইল মাঝির মালিকানাধীন 'এফবি আলস্নাহর দান' নামক ফিশিং ট্রলারটি সোমবার সাগরে মাছ ধরতে যায়। ট্রলারে ২০ জন মাঝিমালস্না ছিলেন। বৃহস্পতিবার ভোরে গভীর সাগরের সোনাদিয়া চ্যানেলে তারা জলদসু্যর কবলে পড়েন। এ সময় চলন্ত ট্রলারে গুলি চালিয়ে মাঝি মোহাম্মদ মোকাররমকে হত্যার পর সাগরে লাশ ফেলে দেয় জলদসু্যরা। গুলিতে তার বুক ঝাঁঝরা হয়ে যায়। সকালে আত্মীয়-স্বজনরা নিহত মোকাররমের লাশ উদ্ধার করে বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
ইউপি সদস্য রহিমা বেগম জানান, সকালে স্বামী মোকারমের মৃতু্যর কথা জানতে পারেন তিনি। সকাল পৌনে ১০টার দিকে পুলিশ চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপেস্নক্স থেকে তার উদ্ধার করেছে। এরপর ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। তিনি এই ঘটনার বিচার দাবি করেন।
রহিমা বেগম জানান, ২১ দিনের সরকারি নিষেধাজ্ঞা শেষে সোমবার সন্ধ্যায় ২০ জন জেলে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ মাছ ধরতে যান তার স্বামী মোহাম্মদ মোকাররম। বুধবার দুপুরে গভীর সাগর থেকে মাছ ধরে ট্রলারটি কক্সবাজারের ফিশারি ঘাটের দিকে ফিরছিল। বৃহস্পতিবার ভোরে এটি মহেশখালীর সোনাদিয়ার পশ্চিমে বঙ্গোপসাগরে পৌঁছালে জলদসু্যর কবলে পড়ে।
ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে কুতুবদিয়ার উত্তর ধুরুং ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল হালিম বলেন, 'সম্প্রতি বঙ্গোপসাগরে জলদসু্যদের লুটপাট বেড়েছে। তাতে জেলেদের মনে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।'
ট্রলার মালিক বাঁশখালীর বাসিন্দা মো. ইসমাইল বলেন, 'জলদসু্যর গুলিতে মাঝি মোকাররম গুরুতর আহত হয়ে ট্রলার থেকে সাগরে ছিটকে পড়েন। এরপর জলদসু্যরা ১৯ জেলেসহ ট্রলারটি নিয়ে যায়। অন্য একটি মাছ ধরার ট্রলার সাগর থেকে মোকাররমকে উদ্ধার করে কুতুবদিয়ার মগনামা ঘাটে আনে। সেখান থেকে চট্টগ্রাম নেওয়ার পথে বাঁশখালীতে তার মৃতু্য হয়।'
বৃহস্পতিবার বিকাল পর্যন্ত ট্রলারসহ অপহৃত ১৯ জেলের সন্ধান মেলেনি বলে জানান ট্রলার মালিক মোহাম্মদ ইসমাইল। তিনি বলেন, 'সাগরে মহেশখালী-কুতুবদিয়া এলাকার একাধিক জলদসু্য বাহিনী তৎপর রয়েছে। মহেশখালীর জলদসু্য 'মঞ্জুর বাহিনী' তার আলস্নাহর দয়া ট্রলারে গুলি ও লুটপাটের সঙ্গে জড়িত বলে খবর পেয়েছেন তিনি।
কক্সবাজার জেলা ফিশিংবোট মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন বলেন, '১৯ জেলেসহ ট্রলারটি কোথায় আছে- তার অনুসন্ধান চলছে। কিন্তু এখনো সন্ধান মেলেনি।'
বাঁশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুল ইসলাম বলেন, 'মহেশখালীর গভীর সাগরে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত এক জেলের মরদেহ বাঁশখালী স্বাস্থ্য কমপেস্নক্সে আনা হয়েছে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে। পরে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে লাশটি পাঠানো হয়।'