রিকশা ছিনতাই করতেই দুই খুন
প্রকাশ | ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
যাযাদি রিপোর্ট
গত দুই মাসে রাজধানীর গেন্ডারিয়া থানা এলাকায় দুই চালককে হত্যা করে ব্যাটালিচালিত রিকশা বা অটোরিকশা ছিনতাই করা হয়। তদন্তের সূত্র ধরে ঘটনার রহস্য উদ্ঘাটনের দাবি করেছে পুলিশ। তিনজনকে গ্রেফতার করেছে তারা।
গ্রেফতাররা হলেন- জালাল সরদার ওরফে মাইকেল (২১), ফজলে রাব্বি ওরফে কালা (২৫) ও মো. ইমরান (৩০)। পুলিশ বলছে, জালাল ওরফে মাইকেল যাত্রী সেজে গভীর রাতে অটোরিকশা ভাড়া করে। পরবর্তীতে তার সুবিধামতো নির্জন এলাকায় গিয়ে চালককে হত্যা করে রিকশা নিয়ে পালিয়ে যায়। পরে সেসব রিকশা কম টাকায় বিক্রি করে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান ওয়ারী বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) মো. ছালেহ উদ্দিন। তিনি বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাত ১২টার দিকে রিকশাচালক জিন্নাহ (৬০) গেন্ডারিয়ার জুরাইনের একটি গ্যারেজ থেকে অটোরিকশা নিয়ে ভাড়ার উদ্দেশে বের হন। পোস্তগোলা থেকে অজ্ঞাতনামা দুই যাত্রী নিয়ে রওনা হন। রাত ৩টার দিকে গেন্ডারিয়া থানার আঞ্জুমান কবর স্থানের সামনে পৌঁছালে ওই দুই যাত্রী পেছন থেকে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গুরুতরভাবে আঘাত করে। রিকশাচালকের চিৎকারে আশপাশের লোকজন এগিয়ে আসলে যাত্রীবেশী দুই হামলাকারী পালিয়ে যায়।
উপস্থিত লোকজন ভুক্তভোগী রিকশাচালককে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। এ ঘটনায় গত ২৩ সেপ্টেম্বর রিকশাচালক জিন্নাহর ছেলে মো. ইউসুফ হোসেন বাদী হয়ে গেন্ডারিয়া খানায় একটি হত্যা মামলা রুজু করেন।
ছালেহ উদ্দিন বলেন, মামলার তদন্ত চলাকালে একই রকম আরও একটি ঘটনা ঘটে। আনোয়ার (৪০) নামের চালককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে গলায় আঘাত করে হত্যা করে তার অটোরিকশা ছিনতাই করে নিয়ে যায়। ১৫ অক্টোবর রাত ২টা ৫২ মিনিটের দিকে গেন্ডারিয়ার দ্বীননাথ সেন রোডে কচিকাঁচা বিদ্যানিকেতন গলিতে এই ঘটনা ঘটে। এরপর গত ২১ অক্টোবর নিহতের চাচাতো ভাই মো. মানিক একটি হত্যা মামলা রুজু করেন।
পুলিশ কর্মকর্তা মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, দু'টি ঘটনার অপরাধের কৌশল একই। পুলিশ নিশ্চিত হয় একটি নির্দিষ্ট অপরাধী চক্র এই ধরনের অপরাধে জড়িত। তদন্তকালে ঘটনাস্থলসহ আশপাশের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ সংগ্রহ করে পর্যালোচনাসহ সব ধরনের তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় দুই ব্যক্তিকে শনাক্ত করা হয়। তাদের একজন জালাল সরদার ওরফে মাইকেল। গত ২৪ অক্টোবর ভোর সাড়ে ৫টার দিকে পিরোজপুরের মঠবাড়িয়া থানা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জালাল দু'টি হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। সে জানায়, আঞ্জুমান কবরস্থানের পাশে অটোরিকশাচালক জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় তার সঙ্গে ফজলে রাব্বি কালাও ছিল। কিন্তু দ্বীননাথ সেন রোডে কচিকাঁচা বিদ্যানিকেতন গলিতে অটোরিকশাচালক আনোয়ারকে হত্যাসহ রিকশা ছিনতাইয়ের ঘটনা সে একাই করেছে।
ওয়ারী বিভাগের ডিসি ছালেহ উদ্দিন বলেন, জালাল এই ছিনতাইকৃত অটোরিকশাটি গেন্ডারিয়ার মো. ইমরান (৩০) নামে একজনের কাছে ১৩ হাজার টাকায় বিক্রি করে। ২৫ অক্টোবর রাত ১টা ৫৫ মিনিটের দিকে গেন্ডারিয়া থানা পুলিশ ডিআইটি পস্নট এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে নিহত আনোয়ারের ছিনতাই করা অটোরিকশাটি মো. ইমরানের কাছ থেকে উদ্ধার করে এবং ছিনতাই হওয়া অটোরিকশা কেনার অপরাধে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
জালাল অটোরিকশা ছিনতাই ও চালক আনোয়ার হত্যায় জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে ২৫ অক্টোবর আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
পুলিশ জানায়, গোয়েন্দা তথ্য ও প্রযুক্তির সহায়তায় ৩ নভেম্বর দিবাগত রাত ৩টার দিকে গেন্ডারিয়ার কবরস্থান এলাকায় অভিযান চালিয়ে ফজলে রাব্বি ওরফে কালাকে গ্রেফতার করা হয়। সে আদালতে অটোরিকশাচালক জিন্নাহ হত্যার ঘটনায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি এবং হত্যায় মাইকেলের জড়িত থাকার বিষয়েও তথ্য দিয়েছে।
যাত্রাবাড়ী ও চিটাগং রোড একটি অপরাধপ্রবণ এলাকা। প্রায়ই ছুরি, ছিনতাই ও হত্যার মতো ঘটনা ঘটছে। এসব নিয়ন্ত্রণে ও অপরাধীদের ধরতে পুলিশ কী কার্যক্রম করছে, জানতে চাইলে মো. ছালেহ উদ্দিন বলেন, অবস্থানগত কারণে যাত্রাবাড়ী এলাকায় মানুষের যাতায়াত অনেক বেশি। প্রায় ৪২ জেলার মানুষ যাত্রাবাড়ী এলাকা ব্যবহার করে। ভাসমান লোকদের মধ্যে কিছু অপরাধী থাকতেই পারে। পাশাপাশি অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও অপরাধ ঘটলে অপরাধীদের ধরতে পুলিশ সম্পূর্ণ নতুন প্রেক্ষাপটে কাজ করছে।