প্রতিকূলতা কাটিয়ে সম্মেলনে দৃষ্টি খুলনা মহানগর বিএনপির
প্রকাশ | ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০
খুলনা অফিস
নানা প্রতিকূলতা কাটিয়ে ওঠার পর খুলনা মহানগর বিএনপির দৃষ্টি এখন সম্মেলনের দিকে। এ লক্ষ্যে ইতোমধ্যে ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করে থানা সম্মেলনের দিকে এগোচ্ছেন দলটির নেতারা। নগরীর ৩১ ওয়ার্ডের ২৭টির সম্মেলন এবং সরাসরি ভোটের মাধ্যমে এসব কমিটিতে নেতৃত্ব নির্বাচিত হয়েছে। কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্নকারী অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধেও। সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির নির্দেশনা পেলে চলতি মাসেই মহানগর সম্মেলন করতে চান দলটির নেতারা।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, নগরের নেতাকর্মীরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের পর পর চলছে গোপন ব্যালটে নেতৃত্ব নির্বাচন। দলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করলে কঠোর ব্যবস্থার নেওয়ার ঘোষণাও দেওয়া হয়েছে।
দলটির মহানগর মিডিয়া সেল ও নেতাকর্মীরা জানান, ২০২১ সালে খুলনা মহানগর বিএনপির দীর্ঘদিনের কমিটি ভেঙে তিন সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি ঘোষণা দেয় কেন্দ্রীয় কমিটি। কমিটিতে অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আল মনাকে আহ্বায়ক, তরিকুল ইসলাম জহিরকে যুগ্ম আহ্বায়ক ও শফিকুল আলম তুহিনকে সদস্য সচিব করা হয়। তবে কমিটি ঘোষণার পর দলটির দীর্ঘ দায়িত্বে থাকা সাবেক নগর সভাপতি নজরুল ইসলাম মঞ্জুর অনুসারীরা ক্ষুব্ধ হন। পরে ২০২২ সালের ১ মার্চ ঘোষিত হয় ৭১ সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আহ্বায়ক কমিটি। একদিকে বিদায়ী সরকারের দমন-পীড়ন, মামলা, বিভাগীয় সমাবেশ, লংমার্চ, কারাবাস অন্যদিকে দলের একাংশের বিরোধিতায় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে আহ্বায়ক কমিটি। এ অবস্থায় প্রথমে নগরজুড়ে ৩৪টি ইউনিটে প্রায় ৫০ হাজার সদস্য সংগ্রহ করেছে দলটি।
এই সদস্যদের প্রতিনিধিদের ভোটে প্রথমে ৩১টি ওয়ার্ড ও ৩টি ইউনিয়নে নতুন আহ্বায়ক কমিটি গঠন শেষ হয়। একইভাবে গঠিত হয় নগরের ৫টি থানা কমিটি। বর্তমানে নগর নিয়ন্ত্রিত সদর, সোনাডাঙ্গা ও দৌলতপুর থানার ওয়ার্ড পর্যায়ের সম্মেলন ও সরাসরি ভোটে নেতৃত্ব নির্বাচন করা হচ্ছে। মহানগরের মনোনীত নির্বাচন কমিশনের মাধ্যমে ও প্রার্থীদের উপস্থিতিতে ভোট ও ফলাফল ঘোষণা করা হচ্ছে। ফলে সব ওয়ার্ডে দলের দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত নেতারা নেতৃত্বে আসছেন।
মহানগর নেতারা জানান, এরই মধ্যে ৫টি থানার ২৫টি ওয়ার্ড ও দুটি ইউনিয়নে সম্মেলন শেষ হয়েছে। বাকি ইউনিটের সম্মেলনও ২/১ দিনে শেষ হবে। ওয়ার্ড সম্মেলন শেষ করেই থানা ও মহানগর সম্মেলন শেষ করতে চান বিএনপি নেতারা। বিএনপির খুলনা সদর থানার সদস্য সচিব মো. ফরিদ মোলস্না যায়যাযদিনকে বলেন, সদর থানার শাখার ৯টি ওয়ার্ডের সম্মেলন শেষ হয়েছে। নগর কমিটি নির্দেশ দিলেই থানা সম্মেলনের আয়োজন করা হবে।
সোনাডাঙ্গা থানার সদস্য সচিব সৈয়দ সাজ্জাদ আহসান পরাগ বলেন, 'দলের নেতাকর্মীরা উৎসবের মাধ্যমে ওয়ার্ড সম্মেলনে অংশ নিচ্ছেন। ঢাকঢোল বাজিয়ে প্রতিটি সম্মেলনে ছিল উৎসবের আমেজ। নগরীর দৌলতপুর থানা বিএনপি সদস্য সচিব শেখ ইমাম হোসেন জানান, ইতোমধ্যে দৌলতপুরের সব ওয়ার্ড ও একটি ইউনিয়নের সম্মেলন ও ভোটের মাধ্যমে কমিটি হয়েছে। প্রতিটি ওয়ার্ডে সরাসরি ভোটে একাধিক প্রার্থী ছিলেন। সবার মধ্যে সম্মেলনের আমেজ ছিল। আমরা এখন প্রথমে ওয়ার্ডের পূর্ণ কমিটি ও পরে থানা সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিয়েছি।'
এদিকে সাংগঠনিক কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন খুলনা মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট এস এম শফিকুল আলম মনা ও সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন। চলতি মাসে (নভেম্বর) মহানগর সম্মেলন সামনে রেখে এ নেতারা প্রতিদিনই সকালে দলীয় কার্যালয়ে নানা সাংগঠনিক বৈঠক, মতবিনিময়ে অংশ নিচ্ছেন। আর দুপুর গড়ালে ছুটছেন ওয়ার্ড সম্মেলনে।
মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব শফিকুল আলম তুহিন যায়যায়দিনকে বলেন, 'বিভিন্ন প্রতিকূলতার মধ্য আমাদের সাংগঠনিক কাজ করতে হয়েছে। দীর্ঘদিন নেতাকর্মীরা ঘরছাড়া ছিলেন। তারপরও তৃণমূলের নেতাকর্মীদের উৎসাহ উদ্দীপনায় অল্প সময়ের মধ্যে সম্মেলন শেষ করার উদ্যোগ নিয়েছি। চলতি নভেম্বরে মহানগর সম্মেলন শেষ করতে চাইছি। ওয়ার্ড থেকে প্রতিটি স্তরে ভোটের মাধ্যমে নেতা নির্বাচন করা হচ্ছে। ফলে দীর্ঘদিনের পরীক্ষিত ও ত্যাগী নেতারা নেতৃত্বে আসছেন। এ প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখা হবে।'
দলের শৃঙ্খলা রক্ষায় কোনো ছাড় দেওয়া হচ্ছে না জানিয়ে শফিকুল আলম তুহিন বলেন, 'কোনো নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠলে মনিটরিং সেলের মাধ্যমে বিষয়টি তদন্ত, অভিযোগকারী-অভিযুক্ত সামনা-সামনি জিজ্ঞাসা করে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ফলে দলের নাম ব্যবহার করে কেউ অপকর্ম করার সুযোগ পাবে না।'