বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়

স্বকীয়তা রক্ষায় পৃথকভাবে ভর্তি পরীক্ষার পরিকল্পনা

ডিন কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত

প্রকাশ | ১০ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

মো. আমান উলস্নাহ, বাকৃবি প্রতিনিধি
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বাকৃবি) উদ্যোগে ২০১৯ সালে কৃষি গুচ্ছভর্তি পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গুচ্ছ পদ্ধতির যাত্রা শুরু। পরীক্ষার্থীদের সুবিধা দিতে গুচ্ছ পদ্ধতি প্রণয়ন করা হলেও, এতে সুবিধার চেয়ে বিতর্ক ও সমালোচনা বেশি হয়েছে। এখন গুচ্ছের পাঁচটি ভর্তি পরীক্ষার অভিজ্ঞতার আলোকে এই পদ্ধতি থেকে বের হয়ে আসার পক্ষে মত দিচ্ছেন বাকৃবির শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। বর্তমানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমসহ বিভিন্ন পস্ন্যাটফর্মে বাকৃবির স্বকীয়তা রক্ষায় অতীতের মতো পৃথক ভর্তি পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জোরালো হয়েছে। এদিকে, ইতোমধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন কাউন্সিলে গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রাব্বানী। এ বিষয়ে বাকৃবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মো. আসাদুজ্জামান সরকার বলেন, 'আমি ব্যক্তিগতভাবে কৃষি গুচ্ছভর্তি পরীক্ষার পক্ষে নই। আমাদের অবশ্যই কৃষি গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসা উচিত। এই পদ্ধতি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব মানদন্ড ও স্বকীয়তা বজায় রাখতে বাধা সৃষ্টি করছে। আমরা আমাদের মান অনুযায়ী মেধাবী শিক্ষার্থী বাছাই করতে চাই, যা গুচ্ছ পদ্ধতিতে সম্ভব হচ্ছে না।' বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষিতত্ত্ব বিভাগের অধ্যাপক ড. পারভেজ আনোয়ার বলেন, 'বাকৃবির ভর্তি পরীক্ষা আলাদা হওয়া উচিত। শুরু থেকেই আমাদের ভর্তি পরীক্ষা স্বচ্ছ ও অনন্য ছিল। আমরা শুধু সরকারি মুক্তিযোদ্ধা ও উপজাতি কোটা মেনে চলেছি, অন্য কোনো কোটা কখনো মানিনি। গুচ্ছভর্তি পরীক্ষায় আমাদের মান বজায় রাখা কঠিন, ফলে প্রকৃত মেধাবীরা বঞ্চিত হচ্ছে। পৃথক ভর্তি পরীক্ষা নিলে মেধার সর্বোচ্চ মূল্যায়ন সম্ভব হবে।' বাকৃবির মাইক্রোবায়োলজি অ্যান্ড হাইজিন বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. গোলজার হোসেন বলেন, 'প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব দায়িত্ব ও কর্তব্য থাকা উচিত, কারণ প্রতিটি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য ভিন্ন। এক মেধাতালিকায় সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী বাছাইয়ের পদ্ধতি আমি সমর্থন করি না। গুচ্ছ পদ্ধতির ফলে একটি নির্দিষ্ট অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি ভর্তি হচ্ছে, ফলে সাংস্কৃতিক আদান-প্রদান কমে যাচ্ছে এবং ভালো শিক্ষার্থীরা মান হারাচ্ছে।' উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের স্নাতকোত্তর শিক্ষার্থী মো. বকুল আলী বলেন, 'গুচ্ছ পদ্ধতিতে অংশ নেওয়ার মাধ্যমে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় তার রং হারাচ্ছে। একক ভর্তি পরীক্ষায় কখনো কোনো ভুল বা অনিয়মের প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কিন্তু গুচ্ছ পরীক্ষায় অন্যান্য কেন্দ্রে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে বারবার। একসময় শীর্ষস্থানীয় মেধাবীরা বাকৃবিতে ভর্তি হতে পারত, কিন্তু গুচ্ছ পদ্ধতিতে কম জিপিএ-ধারীরাও ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে। এতে বাকৃবির স্বকীয়তা নষ্ট হচ্ছে।' ভেটেরিনারি অনুষদের পঞ্চম বর্ষের শিক্ষার্থী মো. ওমর ফারুক বলেন, 'গুচ্ছভর্তি পদ্ধতির কারণে সেশনজট তৈরি হচ্ছে। শুধু যাতায়াতের সুবিধার কথা বিবেচনা করে গুচ্ছ পরীক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হলেও এ উদ্যোগ তেমন ফলপ্রসূ হয়নি।' কৃষি প্রকৌশল ও প্রযুক্তি অনুষদের প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী সাদিয়া জাহান খুকি মনে করেন, 'গুচ্ছে নিজস্ব প্রশ্ন কাঠামোতে ভর্তি পরীক্ষা নেওয়া যাচ্ছে না বলে মেধাবী শিক্ষার্থী যাচাইয়ের সুযোগ কমে আসছে।' বাকৃবি ডিন কাউন্সিলের আহ্বায়ক অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রাব্বানী বলেন, 'আমাদের ডিন কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়েছে যে আমরা কৃষি গুচ্ছ থেকে বেরিয়ে আসব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয় এককভাবে ভর্তি পরীক্ষা আয়োজন করছে। আমরা আগে থেকেই আলাদাভাবে ভর্তি পরীক্ষা পরিচালনা করতাম, যা আমাদের জন্য সুবিধাজনক ছিল। গুচ্ছ ভর্তি পদ্ধতিতে বিভিন্ন জটিলতা তৈরি হয়েছে। দুই-এক দিনের মধ্যে আমাদের অ্যাকাডেমিক কাউন্সিল বসবে এবং সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।' কৃষি গুচ্ছের বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কে ফজলুল হক ভূঁইয়া বলেন, 'এই প্রতিষ্ঠান থেকে উচ্চ শিক্ষিত জনশক্তি তৈরি হবে, যা দেশের কৃষি খাতকে আরও শক্তিশালী করবে। বাকৃবির স্বাতন্ত্র্যতা ও আদর্শকে বজায় রাখতে আমরা গুচ্ছ থেকে বের হয়ে আসার সর্বোচ্চ চেষ্টা করব।'