সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া :খুলনায় বাড়ছে খুন ও চাঁদাবাজি

প্রকাশ | ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০০:০০

খুলনা অফিস
দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে খুলনায় ফিরতে শুরু করেছে দীর্ঘদিন পালিয়ে থাকা চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা। সেই সঙ্গে সন্ত্রাসীদের কেউ সাজা খেটে, কেউ জামিনে আবার কারও বিরুদ্ধে দায়ের মামলা প্রত্যাহার হওয়ায় এলাকায় জড়ো হতে শুরু করেছে তারা। এদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে কিশোর গ্যাং, বখাটে ও উঠতি সন্ত্রাসীরা। গত দুই সপ্তাহ ধরে এরা বেপরোয়া হয়ে ওঠায় নগরীতে বেড়েছে হত্যা, প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, চাঁদাবাজি ও ডাকাতির ঘটনা। সন্ত্রাসীরা পাড়া-মহলস্নায় সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। আর এমন উদ্বেগজনক পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ভূমিকায় সন্তুষ্ট হতে পারছেন না নগরবাসী। তাদের অভিযোগ, একের পর এক হত্যা, ডাকাতি হলেও পুলিশ-প্রশাসনের তেমন তৎপরতা কম, যার সুযোগ নিচ্ছে সন্ত্রাসীরা। জানা গেছে, গত অক্টোবর ও চলতি মাসে খুলনা জেলা ও নগরীতে তিনটি হত্যাকান্ড, কুপিয়ে জখমের ঘটনা তিনটি, একটি স্বর্ণের দোকানে ডাকাতি, মাছ বহনকারী পিকআপ ভ্যানে ডাকাতির দুটি ঘটনা ও পুলিশের ওপর হামলা করে আসামি ছিনতাইয়ের একটি ঘটনা ঘটেছে। এ ছাড়া সাত-আট দিন মোটর সাইকেলে সন্ত্রাসীদের মহড়া দিতে দেখা গেছে। নগরীর আলকাতরা মিল এলাকায় গত ২ নভেম্বর রাতে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও কুপিয়ে রাসেল নামে এক যুবককে হত্যা করে। সেখানে সজীব ও ইয়াসিন নামে দুই যুবককে কুপিয়ে আহত করা হয়। নিহত রাসেলের বিরুদ্ধে অস্ত্র, ডাকাতিসহ ১১টি মামলা রয়েছে। একই রাতে নগরীর বাবু খান রোডে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে জেলা যুবদলের সাবেক যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রহমান বেলালকে আহত করে। বসুপাড়া এলাকায় ৫ নভেম্বর রাতে অস্ত্রধারীরা রফিকুল ইসলাম মুক্তা নামে এক ব্যবসায়ীকে হত্যার চেষ্টা করে। তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, পাঁচটি মোটর সাইকেলে মুখোশ পরা সন্ত্রাসীরা ওই প্রতিষ্ঠানের সামনে যায়। এর মধ্যে একজন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ঢুকে মুক্তাকে টেনেহিঁচড়ে বের করে। তাদের হাতে চাপাতি, রামদা ও পিস্তল ছিল। পুলিশের একটি সূত্র বলছে, হামলার সময় কালা বাবলু, নাছির ও অমিত নামে তিন সন্ত্রাসী ছিল। এর আগে ২৮ অক্টোবর দুপুরে সন্ত্রাসীরা গুলি করে ও বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে দৌলতপুর থানার কালীবাড়ি বাজারের দত্ত জুয়েলার্সে ডাকাতি করে। জুয়েলার্সের সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে, পাঁচজন ডাকাত প্রাইভেটকারে সেখানে যায়। এর মধ্যে চারজন জুয়েলার্সে ঢোকে। একজন বাইরে বোমা বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আতঙ্ক তৈরি করে। জুয়েলার্সে ঢোকা চারজনের মধ্যে একজন জুয়েলার্স মালিক উত্তম দত্তকে মারধর এবং একজন গুলি করে। স্বর্ণালংকার ও নগদ দুই লাখ টাকা লুট করে তারা। পরে প্রাইভেটকারসহ একজনকে অল্পকিছু স্বর্ণালংকারসহ আটক করে পুলিশ। এ ছাড়া পরের্ যাব নগদ ১ লাখ ৩৩ হাজার টাকা ও ৪৯ স্বর্ণের নাকফুলসহ দুই নারীকে আটক করে। জুয়েলার্স মালিক অ্যাসোসিয়েশন খুলনার সাধারণ সম্পাদক শংকর কর্মকার বলেন, 'দিনেদুপুরে এমন ডাকাতির ঘটনায় আমরা উদ্বিগ্ন।' অন্যদিকে মাছ ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, খুলনা-সাতক্ষীরা মহাসড়কে কয়েক দিন ধরে মাছের পিকআপে ছিনতাই, ডাকাতি ও চাঁদাবাজি হচ্ছে। এগুলো বন্ধের দাবিতে ৫ নভেম্বর ডুমুরিয়া এলাকায় মানববন্ধন করেছেন তারা। নগরবাসীর অভিযোগ, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ঢিলেঢালা অবস্থানের কারণে সন্ত্রাসীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। প্রায় প্রতি রাতেই উঠতি বয়সি সন্ত্রাসীরা মোটর সাইকেলে করে নগরী দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। সন্ত্রাসী আশিক ও নূর আজিম, গ্রেনেড বাবু বাহিনীর সদস্যরা মোটর সাইকেলে করে নগরীর জিন্নাহপাড়া, মোলস্নাপাড়া, লবণচরা, শিপইয়ার্ড এলাকায় সশস্ত্র মহড়া দিচ্ছে। চাঁদা দাবি করছে ব্যবসায়ীদের কাছে। ভয়ে তারা অভিযোগও করছে না। দৌলতপুরে প্রকাশ্যে ঘুরছে হুজি শহীদ হত্যাসহ একাধিক মামলার আসামি রিফুজি মঈন ও আসলাম ওরফে ট্যারা আসলাম। প্রকাশ্যে ঘুরছে বড় শাহীন। পুলিশের অভিযান ঝিমিয়ে পড়ায় নগরীর অলিগলিতে মাদক বেচাকেনা চলছে। গত বুধ ও বৃহস্পতিবার রাতে পিটিআই, মৌলভীপাড়া, শান্তিধাম, ফেরিঘাট, ময়লাপোতা ও শিববাড়ী মোড়ে পুলিশের টহল গাড়ি তেমন দেখা যায়নি। এ বিষয়ে খুলনা নাগরিক সমাজের আহ্বায়ক আ ফ মহসীন ও সদস্য সচিব বাবুল হাওলাদার এক বিবৃতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তারা বলেন, 'প্রশাসনের অনেকটা নিষ্ক্রিয়তায় চুরি, ছিনতাই, এমনকি খুনের মতো ঘটনা ঘটছে। মানুষ রাস্তাঘাটে চলাফেরাসহ সব জায়গায় নিরাপত্তাহীনতা বোধ করছেন।' সোনাডাঙ্গা থানার ওসি শফিকুল ইসলাম বলেন, 'সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় পুলিশ তৎপর আছে। প্রতি রাতে পুলিশের সাতটি এবং দিনে পাঁচটি টিম থানা এলাকায় নিয়মিত টহল দিচ্ছে।' খুলনা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার আবু রায়হান মোহাম্মদ সালেহ বলেন, 'আমরা প্রতিটি ঘটনায় জড়িতদের শনাক্ত এবং দ্রম্নত গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছি। অপরাধ দমনে পুলিশের বিশেষ অভিযান চলছে।'