পাইকারি মার্কেটে শেষ সময়ের ভিড়

প্রকাশ | ২৩ মে ২০১৯, ০০:০০

এসএম মামুন হোসেন
ঈদকে সামনে রেখে বাড়ছে কেনাবেচা। তাই ব্যস্ততা বাড়ছে পাইকারি পণ্যের মার্কেটগুলোতে। গ্রাহকের চাহিদা অনুযায়ী তৈরি শার্ট প্যাকেটজাত করছেন দোকানিরা। ছবিটি বুধবার রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেট থেকে তোলা -যাযাদি
ঈদের আর মাত্র দু'সপ্তাহ বাকি থাকায় রাজধানীর পাইকারি মার্কেটগুলোতে চলছে শেষ সময়ের রমরমা বিকিকিনি। দেশের প্রত্যন্ত জেলা-উপজেলার দোকানিরা পাইকারি ক্রয়ের জন্য এখন রাজধানীর বড় মার্কেটগুলোতে ভিড় করছেন। প্রতিদিন সকাল থেকে গভীর রাত অবধি তাই পাইকার বাজারগুলোতে এখন চলছে বিক্রিবাট্টার বেজায় ধুম। পাইকার বিক্রেতারাও বলছেন, তারা এরই মধ্যে প্রত্যাশিত ক্রেতা পেয়েছেন। তবে আর ক'দিন যেতেই পাইকারি বিক্রিতে ভাটা পড়বে বলে মনে করছেন তারা। রাজধানীর বড় পাইকার মার্কেটগুলোর মধ্যে গুলিস্তান, ফুলবাড়িয়া, চকবাজার, জিনজিরার মার্কেটগুলো অন্যতম। তবে আজিজ সুপার, নিউমার্কেট ও এর আর পাশের কিছু মার্কেটেও পাইকারি বিক্রি হয়ে থাকে। এসব মার্কেটের সামনে দাঁড়ালে এখন চোখে পড়বে সারিসারি বস্তা ভরে মাল কিনে নিয়ে যাওয়া দোকানিদের ভিড়। রোজা শুরুর পরপরই সাধারণত ঈদের খুচরা বিক্রি শুরু হয়ে যায়। যা চলে ঈদের ঠিক আগ মুহুর্ত পর্যন্ত। তবে পাইকার মার্কেটে বিক্রিবাট্টা রোজার আগ থেকেই শুরু হয়। এবং তা চলে প্রায় রোজার মাঝ সময় পর্যন্ত। কারণ রোজার মাঝামাঝি সময়ের পর খুচরা বিক্রি পুরোদমে শুরু হয়ে যায়। ফলে এর আগেই পাইকার মার্কেটের বিক্রিবাট্টা মোটামুটি শেষের পথে চলে আসে। সে হিসেবে এখন পাইকারি মার্কেটে চলছে শেষ সময়ের বিক্রিবাট্টা। তবে এবার রোজা শুরুর আগ থেকেই প্রচুর গরম পড়ায় অনেকেই প্রথম দিকে কেনাকাটা শেষ করেননি। কিন্তু গরম কমার কোন সম্ভাবনা না দেখে এখন তারাও কেনাকাটা করতে আসছেন। ফলে শেষ সময়ে এসে পাইকারি মার্কেটগুলো ব্যাপক জমজমাট। রাজধানীর বড় বড় পাইকার মার্কেটগুলো সাধারণত দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মার্কেটের যোগান দিয়ে থাকে। এছাড়া রাজধানীর খুচরা মার্কেটগুলোর যোগনেরও বড় অংশই এখান থেকেই আসে। সপ্তাহ দু'এক আগেও পাইকার মার্কেটগুলোতে গিয়ে পোশাক, পাদুকাসহ অন্যান্য ঈদ আইটেমের যে গুদাম দেখা গিয়েছিলো তা এখন অনেকটাই শেষের পথে। দোকানগুলো তাদের পণ্য বিক্রি করে প্রায় শেষের পথে চলে এসেছে। জেলা উপজেলা থেকে আসা ক্রেতারাও মনের মতো করে নিজ নিজ দোকান সাজাতে তাদের শেষ সময়ের কেনাকাটা করে মার্কেট ছাড়ছেন এমন দৃশ্য এখন প্রতিটি পাইকারি মার্কেটের সামনের সাধারণ দৃশ্য। আর এসব মার্কেট করে পাইকার ক্রেতারা কেউ লঞ্চে আবার কেউ বাস বা ট্রাকে করে পণ্য নিয়ে নিজের জেলার উদ্দেশ্যে রওনা হচ্ছেন। রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ পাইকার মার্কেট গুলিস্তানের বঙ্গবাজার। বুধবার এ মার্কেটের সামনে গিয়ে দেখা যায় শতশত পাইকার ক্রেতা কেনাকাটা করে বের হচ্ছেন। মার্কেটের ভেতর ক্রেতাদের উপছে পড়া ভিড়। বিক্রেতারাও তাদের সঙ্গে দামদরে ব্যস্ত। তবে অধিকাংশ দোকানে গিয়েই দেখা গেল, ক্রেতারা বেশিরভাগই পূর্ব পরিচিত এবং আগে থেকেই যোগাযোগ করে এসেছে। কিছু ক্রেতা আগেভাগে দামদরও ঠিক করে এসেছে। ফলে তাদের দামদরের কিছু নেই। পাইকার বিক্রেতারা তাদের জন্য আগে থেকেই মাল প্যাকেট করে রেখেছে। বিক্রেতারা এসে তা নিয়ে চলে যাচ্ছেন। কয়েকজন ক্রেতা জানালেন, তারা কেউ কেউ একই দোকান থেকে ১০ বছর পর্যন্ত মাল কেনাকাটা করছেন। ফলে তাদের সঙ্গে পাইকার মালিকরা কোন ধরনের প্রতারণা করেন না। কারণ তারা তাদের নির্ধারিত ক্রেতা। এ কারণে তাদের মাল দেখাশোনার প্রয়োজন পড়ে না। আবার যদি দুই এক পিছ মাল খুববেশি খারাপ হয়েও থাকে তবে তা পরের চালানে ফেরত পাঠালে তা মালিক পক্ষ গ্রহণ করে। ফলে তাদের এ নিয়ে খুব বেশি চিন্তা করতে হয়না। শুধু কাপড়ের মার্কেটই নয় বরং জুতা, টুপি, সেমাই, চিনি, কিচমিচ সহ ঈদে বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন প্রায় প্রতিটি পণ্যের পাইকার মার্কেটে এখন চলছে শেষ সময়ের বিকিকিনি রমরমা। পাইকার ক্রেতারাও তাদের স্ব স্ব মার্কেট সাজাতে এখন শেষ সময়ের কেনাকাটায় ব্যস্ত। বিক্রেতারা জানালেন, দুই একদিনের মধ্যেই তাদের কেনাকাটার বড় পর্যায় শেষ হবে। এরপর যা সামান্য বিক্রি হবে তা মূলত পাইকারের চেয়ে খুচরাই বেশি। ফলে এখনকার পর তাদের বিক্রিবাট্টা আর খুববেশি হবে না। রাজধানীর আজিজ সুপার মার্কেটের ইজি শো-রুমে গিয়ে দেখা যায়, বিশাল দোকানের মাঝে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কাপড় ক্রেতা বিক্রেতা মিলে দেখছেন। খুলনা থেকে ক্রয়ের জন্য আসা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, 'আগে দুই ধাপে এসে কিনে নিয়ে গেছি। এটি শেষ ধাপ। আজই আমার পাইকার কেনাকাটা শেষ। আজকের পর আর মার্কেটে আসা হবে না। এর পর থেকে খুলনায় নিজের শো-রুমেই বিক্রি করব।' এ বিক্রয় কেন্দ্রের ম্যানেজার সাইদ খান বলেন, 'রাজধানীর ভেতর আমাদের কিছু খুচরা মার্কেটও আছে। তবে আজিজ সুপারের এটি মূলত পাইকার মার্কেট। এখান থেকে সারাদেশে সেল করে থাকি। আমাদের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় নির্দিষ্ট কাস্টমার আছেন। তারা রোজা শুরুর আগ থেকেই এসে কাপড় নিয়ে যাচ্ছেন। এখনো নিচ্ছেন। তবে এখন একেবারে শেষ সময়ের কেনাবেচা চলছে। আর দুই একদিন পর পাইকার ক্রেতা থাকবে না বললেই চলে। তখন আমরা আবার খুচরা শো-রুমগুলোর বিক্রিতেই আমাদের কর্মচারীদের কাজে লাগাব।'