কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করতে বিএনপির ১২ দফা

প্রকাশ | ২৬ মে ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন -যাযাদি
কৃষিপণ্যের ন্যায্য মূল্যের জন্য সরকারে কাছে ১২ দফা দাবি জানিয়েছে বিএনপি। বিএনপির অভিযোগ, আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের পকেট ভারী করার জন্য তাদের ধান কেনার অনুমতি দিয়ে সরকার কৃষকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে। শনিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এ দাবিগুলো তুলে ধরেন। মির্জা ফখরুল বলেন, 'আমরা কৃষকের পণ্যের ন্যায্য মূল্য, বিশেষ করে ধানের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার দাবি জানাচ্ছি।' দাবিগুলো তুলে ধরে তিনি বলেন, কৃষি উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ বৃদ্ধি করতে হবে, কৃষিঋণ মওকুফ করতে হবে। অন্য দাবির মধ্যে আছে কৃষকদের উৎপাদিত ধানের বিপরীতে সরকারঘোষিত মূল্য অনুযায়ী কৃষককে কমপক্ষে তিন মাসের জন্য সমপরিমাণ টাকা বিনা সুদে প্রদান করা, সরকারি পর্যায়ের ধানচাল গুদামজাত করার ক্ষমতা হলো প্রায় ২১ দশমিক ৮ লাখ মেট্রিক টন, এই ধারণক্ষমতা বাড়িয়ে বেশি পরিমাণে সরকারকে ধান ক্রয় করতে হবে। কৃষকদের সহায়তার জন্য বেসরকারি গুদাম ভাড়া করে সেখানে ধানচাল সংগ্রহ করতে হবে, কৃষকের কাছ থেকে বেশি পরিমাণ ধান ক্রয়ের জন্য ১০ হাজার কোটি টাকার অতিরিক্ত বরাদ্দ দিতে হবে। কৃষকদের হয়রানি কমিয়ে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে ধান বা চাল কিনতে হবে, প্রান্তিক চাষি ও খেতমজুরদের জন্য বিশেষ সুদবিহীন ঋণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে, ধানচাল ক্রয়ের ক্ষেত্রে অসৎ কর্মকর্তাদের জড়িত করা যাবে না এবং অসৎ কর্মকর্তাদের শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ফখরুল ইসলাম অভিযোগ করেন, দলীয় নেতাকর্মীদের পকেট ভারী করার জন্য তাদের ধান কেনার অনুমতি দিয়ে সরকার কৃষকদের ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত করছে। দেশে ধান উৎপাদন সম্পর্কে সরকার মিথ্যাচার করছে। মৌসুমের আগেই ধানের সংগ্রহ মূল্য ঘোষণা করা এবং সংগ্রহ মূল্য অবশ্যই উৎপাদন খরচের চেয়ে যৌক্তিক পরিমাণ বেশি হবে। তিনি বলেন, দেশের ১৬ কোটি মানুষের খাদ্যের জোগানদাতা কৃষক পরিবারের অবস্থা আজ খুবই নাজুক ও দুর্বিষহ। কিন্তু কৃষকেরা ধানের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে হতাশাগ্রস্ত। দেশের প্রায় দেড় কোটি কৃষক পরিবারের আজ ত্রাহি অবস্থা। মির্জা ফখরুল বলেন, 'কৃষকদের বিশেষ করে ধানচাষিদের চাওয়া হচ্ছে সরকার ন্যায্য মূল্যে চাষিদের কাছ থেকে সরাসরি ধান ক্রয় করুক। কৃষকদের চাওয়া খুবই সামান্য ও যৌক্তিক। আমরা কৃষকদের এই যৌক্তিক দাবির সঙ্গে একমত।' তিনি আরও বলেন, চাল আমদানির ক্ষেত্রে দুর্নীতির মাত্রা এতই ব্যাপকতা লাভ করেছে যে সরকারের অংশীদারি একটি দলের প্রধান সাবেক মন্ত্রী রাশেদ খান মেননও চাল আমদানিতে সরকারের দুর্নীতির কথা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছেন। এ ছাড়া সরকারি দলের সাংসদ রমেশ চন্দ্র সেনও এই পরিস্থিতির জন্য এ সরকারের সাবেক খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলামকে দায়ী করেছেন। বিএনপির মহাসচিব ফখরুল ইসলাম আরও বলেন, 'গত বছরের উৎপাদনকে হিসাবে নিলে বোরো ধানের উৎপাদন হবে প্রায় দুই কোটি মেট্রিক টন। আর সরকার সংগ্রহ করবে মাত্র ১৩ লাখ টন, যা উৎপাদনের মাত্র ৬ দশমিক ৫ শতাংশ। আমাদের দাবি, ধান অথবা চাল সংগ্রহের পরিমাণ কমপক্ষে বোরো উৎপাদনের ১৫ শতাংশ করা হোক। এতে বেশি পরিমাণ কৃষককে সহায়তা দেয়া যাবে।' খেলাপি ঋণের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, 'আপনারা জানেন বর্তমানে ব্যাংকব্যবস্থায় খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় এক লাখ কোটি টাকা। এই খেলাপি ঋণগ্রহীতাদের জন্য সরকার বিশেষ ছাড় দিয়েছে। যদিও এই ছাড় মহামান্য হাইকোর্ট আটকে দিয়েছেন। সরকার ব্যাংক লুটপাটকারীদের দুধকলা দিয়ে পুষছে। অথচ এই খেলাপি ঋণের মাত্র ১০ শতাংশ বরাদ্দ দিলে সরকার আরও প্রায় ৩৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কৃষকদের কাছ থেকে সংগ্রহ করতে পারে। এতে দেশের ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক চাষিরা উপকৃত হবেন। বর্তমানে কৃষকদের যে দুরবস্থা, তা দূর করতে বিশেষ পদক্ষেপ নেয়ার জন্য জোর দাবি জানাচ্ছি।' মির্জা ফখরুল বলেন, সরকারের দুর্নীতি ও অদূরদর্শিতার কারণে কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের কৃষি আজ ধ্বংসের মুখে। বারবার গরিব কৃষক তার উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্য না পেয়ে ফসল উৎপাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন। এর সুদূরপ্রসারী পরিণাম অত্যন্ত ভয়াবহ। জাতীয় অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তি কৃষি খাতকে একটি আধুনিক ও টেকসই খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে এবং কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য নিশ্চিত করার জন্য আজ বড়ই প্রয়োজন সত্যিকার অর্থে একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে খুব দ্রম্নত সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের একটি সরকার। সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুস সালাম, ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। মহিলা দলের বিক্ষোভ বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসার দাবিতে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে জাতীয়তাবাদী মহিলা দল। একই সময় বিক্ষোভ করেছে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপি। শনিবার বেলা ১১টায় নয়াপল্টন বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল করেন মহিলা দলের নেতাকর্মীরা। মিছিলটি বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শুরু হয়ে নাইটিঙ্গেল মোড় ঘুরে আবারো নয়াপল্টন কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলের আগে মানববন্ধনে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন, সরকারপ্রধানের নির্দেশেই জামিনযোগ্য মামলায় খালেদা জিয়ার জামিন আটকিয়ে রেখে মুক্তিতে বাধার সৃষ্টি করা হচ্ছে। সরকারের বাধার কারণে খালেদা জিয়ার মুক্তি মিলছে না। প্রধানমন্ত্রীর প্রতিহিংসার আগুনে দেশনেত্রীর জীবন এখন সংকটাপন্ন। আমরা দেশনেত্রীর অবনতিশীল শারীরিক অবস্থা নিয়ে বারবার তার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানালেও সরকার গায়ের জোরে সেই দাবিকে অগ্রাহ্য করছে। মিছিলে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সিনিয়র সহসভাপতি নুরজাহান ইয়াসমিন, সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হেলেন জেরিন খান, মানব উন্নয়নবিষয়ক সম্পাদক ফারহানা ইয়াসমিন আতিকা, মহিলা দলের নেত্রী মুকুল আক্তার অনা, শাহজাদী কোহিনুর পাপড়ি, এলিজা মুন্নী, শাহিদা মির্জা, মুনমুন আক্তার, নীলুফার ইয়াসমিন, শিল্পী রেজা, রুমা আক্তার, আজমেরী আজিম, তানজীম ইসলাম লিলি, মম আক্তার, মাসুদা খান লতা, নাজিয়া হক রুনা, রুখসানা মির্জা প্রমুখ নেতাকর্মী অংশ নেন। মহানগর দক্ষিণ বিএনপির বিক্ষোভ ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে আরো একটি বিক্ষোভ মিছিল হয়। এ মিছিলটিতেও নেতৃত্ব দেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী। মিছিল শেষে বর্তমানে শারীরিকভাবে ভয়ানক অসুস্থ খালেদা জিয়ার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির জোরালো দাবি জানান তিনি। মিছিলে অংশগ্রহণ করেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, সহসভাপতি ইউনুস মৃধা, নবী উলস্নাহ নবী, মোশাররফ হোসেন খোকন, ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, মীর হোসেন মিরু, সাংগঠনিক সম্পাদক তানভীর আহমেদ রবিন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন, সহ-সাধারণ সম্পাদক আকবর হোসেন ভূঁইয়া নান্টু, জাফর আহমেদ, প্রচার সম্পাদক আব্দুল হাই পলস্নব, বংশাল থানা বিএনপি নেতা তাইজুদ্দিন আহমেদ, সূত্রাপুর থানা বিএনপি নেতা আব্দুল আজিজ প্রমুখ।