কুমিলস্নায় জামায়াত আমির

আমরা প্রতিশোধ চাই না সব হত্যার বিচার চাই

প্রকাশ | ০৭ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

স্টাফ রিপোর্টার, কুমিলস্না
কুমিলস্না টাউন হল ময়দানে শুক্রবার জামায়াতের কর্মিসম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের আমির ডা. শফিকুর রহমান -যাযাদি
অন্তর্বর্তী সরকারকে যৌক্তিক সময়ে নির্বাচন দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে জামায়াতে ইসলামের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'এ দেশকে গড়তে হলে কিছু চাঁদাবাজমুক্ত হাত দরকার। কিছু দুর্নীতিমুক্ত মানুষ দরকার। দেশপ্রেমিক চিন্তাশীল মানুষ দরকার। এ বিচারটা করবে কি আমাদের হাইকোর্ট-সুপ্রিম কোর্ট? বিচার করবে জাতির আদালত। এখন তাদের বোকা ভাবার কোনো সুযোগ নেই। জনগণ বিচার করবে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ কার কেমন ছিল। আমরা সেই সিদ্ধান্তের অপেক্ষায়। আমরা ব্যক্তিগত ও দলগতভাবে কারোর ওপর প্রতিশোধ নিতে চাই না। প্রতিশোধ মানে আইন হাতে তুলে নেওয়া। আমরা সেটা চাই না। আমরা বিচার চাই। প্রতিটি হত্যা ও অপরাধের বিচার চাই।' শুক্রবার কুমিলস্নার টাউনহল ময়দানে জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ১৯ বছর পর হওয়া জামায়াতের কর্মী সম্মেলনে জনতার ঢল নামে। অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা ছিলেন সংগঠনের নায়েবে আমির ডা. সৈয়দ আব্দুলস্নাহ মুহাম্মদ তাহের। সভাপতিত্ব করেন কুমিলস্না মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির কাজী দ্বীন মোহাম্মদ। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে জামায়াতের আমির বলেন, 'মৌলিক সংস্কার শেষে একটি নির্বাচন দেন। আমরা চাপ দিচ্ছি না। আমরা অনুরোধ করবো দীর্ঘায়িত না করে যৌক্তিক সময়ের মধ্যে নির্বাচন দেন। গত ১৭ বছর ৪২ ভাগ যুবক একটি ভোটও দিতে পারেনি। আমরা চাই যারা রক্ত দিয়েছে তারা ভোট দিবে না শুধু তারা নেতৃত্বও দেবে জাতিকে।' ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'প্রবাস এবং দেশে থেকে যারা যুদ্ধ করেছে তাদের লাল গোলাপের শুভেচ্ছা। ২০০৯ সালের ক্ষমতা হাতে নিয়ে বিডিআর বিদ্রোহের নামে দেশের সম্পদ চৌকস কর্মকর্তাদের হত্যা করা হয়েছিল। অনেকের লাশ ড্রেনে ভাসিয়ে দিয়েছিল। অনেকের লাশ পুঁতে দিয়েছিল। অনেকের লাশ পাওয়াও যায়নি। এই হত্যাকান্ডের পর প্রধানমন্ত্রী সেনাবাহিনীর সদস্যদের এনে আদর আপ্যায়ন করেছিলেন। কথিত দুটি তদন্ত কমিটি করেছিলেন। ঐ তদন্ত কমিটি কথা জানার দরকার ছিল দেশের সেনাবাহিনীকেও। তাদের সহকর্মীদের কে হত্যা করেছে তা জানার দরকার ছিল। কিন্তু তাদের জানতে দেওয়া হয়নি। আমি সরকারকে বলবো এই হত্যার বিচার করতে হবে। একসময় বিজিবি ছিল সীমান্তের রাইফেল, তাদের করা হয়েছে সীমান্তের চৌকিদার।' তিনি বলেন, 'ষড়যন্ত্র করে জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের হত্যা করা হয়েছে। এই দলকে সবচেয়ে বেশি আঘাত দিয়েছে আওয়ামী লীগ সরকার। আলেমদের ওপর আঘাত দিয়েছে, সাংবাদিকদের ওপর আঘাত দিয়েছে। তারা হত্যার মিশন নিয়ে নেমেছিল। শেষ দিন পর্যন্ত তারা মানুষকে হত্যা করেছে। জাতি এদের বিচার চায়। তাদের বিচার করতে হবে।' ডা. শফিকুর বলেন, বাংলাদেশ আমাদের সবার। আমরা বারবার বলেছি বাংলাদেশের কোনো মেজরিটি মাইনরিটি মানি না। মাইনরিটি শব্দ বলে বলে একটি গোষ্ঠীকে ব্যবহার করে ষড়যন্ত্র করছে। ভারতীয় হলুদ মিডিয়া বাংলাদেশের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করেছে। তখন জগন্নাথ হল থেকে আমাদের হিন্দু ছেলেমেয়েরা বের হয়ে তাদের প্রমাণ করেছে সেটা ষড়যন্ত্র। কেন ভারত আমাদের সাথে এটা করে আমরা তাদের কি ক্ষতি করেছি? আমরা কি ভারতের কোনো অভ্যন্তরীণ বিষয় হস্তক্ষেপ করেছি।' তিনি বলেন, 'আপনারা দেখেছেন, চট্টগ্রামের আদালতে একজন আইনজীবীকে কারা খুন করেছে। বাংলাদেশের মানুষ তাদের মুখে চুনকালি লেপে দিয়েছে। বাংলাদেশের মানুষ বলে দিয়েছে এই খুনের বিচার হবে। কিন্তু নির্বিচার সবার গায়ে হামলা করতে চাই না। ভারত কি এমন একটা উদাহরণ দেখাতে পারবে? তাদের দেশের বুকে কী আছে?' প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন এ দেশ আমাদের সবার। এখানে আমরা সাম্প্রদায়িক কোনো বিভাজন চাই না। ধন্যবাদ জানাই আমাদের প্রধান উপদেষ্টাকে এই মহৎ উদ্যোগ নেওয়ার জন্য। এই যাত্রা আমাদের অভ্যস্ত রাখতে হবে। এর আগেরদিন সব রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে তিনি বসেছিলেন। আমরা বলেছি 'আমরা এমন সুযোগ দেবো না, আমরা বাংলাদেশে আধা ইঞ্চি জমিও কারো জন্য ছেড়ে দেবো না। এটি আমাদের কমিটমেন্ট'- বলেও উলেস্নখ করেন তিনি। সম্মেলনে জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা আবু তাহের মুহাম্মদ মাছুম ও মাওলানা আব্দুল হালিম, কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদ সদস্য মো. মোবারক হোসাইন ও মুহাম্মদ আব্দুর রব, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য অ্যাডভেকেট জসীম উদ্দিন সরকার, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য অধ্যাপক লিয়াকত আলী ভূঁইয়া, মো. আব্দুস সাত্তার, কুমিলস্না দক্ষিণ জেলা আমির অ্যাডভোকেট মো. শাহাজাহান, উত্তর জেলা আমির অধ্যাপক আব্দুল মতিন, ঢাকা মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি মাওলানা ইয়াছিন আরাফাত, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরা সদস্য ড. মোবারক হোসাইন, কুমিলস্না মহানগর জামায়াতের নায়েবে আমির মুহাম্মদ মোছলেহ উদ্দিন, দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সেক্রেটারি ড. সৈয়দ সরোয়ার উদ্দিন সিদ্দিকী, উত্তর জেলা সেক্রেটারি সাইফুল ইসলাম শহীদ, কুমিলস্না মহানগর জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি কামরুজ্জামান সোহেল, অ্যাডভোকেট নাছির আহাম্মদ মোলস্না ও মেশাররফ হোসাইন, ইসলামী ছাত্রশিবির কুমিলস্না মহানগর সভাপতি নোমান হোসেন নয়ন ও কুমিলস্না বিশ্ববিদ্যালয় সভাপতি হাফেজ ইউসুফ ইসলাহী বক্তব্য রাখেন। সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন ফেনী জেলা জামায়াতের আমির মুফতী আবদুল হান্নান, লক্ষ্ণীপুর জেলা আমির রুহুল আমিন, নোয়াখালী জেলা সাবেক আমির মাওলানা আলাউদ্দিন, কুমিলস্না উত্তর জেলা জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি অধ্যক্ষ মুফতি আমিনুল ইসলাম, নাগাইশ দরবারের পীর মোস্তাক ফয়েজী, ইবনে তাইমিয়া কলেজের অধ্যক্ষ শফিকুল আলম হেলাল ও তামিরুল মিলস্নাত কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ ড. হিফজুর রহমান।