বেরোবিতে শিক্ষার্থী বাড়ে প্রতি বছর, কমে বাস
সাড়ে ৮ হাজার শিক্ষার্থীর ৫ বাস
প্রকাশ | ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০
গাজী আজম হোসেন, বেরোবি
রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) প্রতি বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও কমে যাচ্ছে বাসের সংখ্যা। বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে সাড়ে আট হাজারের বেশি শিক্ষার্থী রয়েছেন। এর বিপরীতে বাস আছে মাত্র ৫টি। বাধ্য হয়েই অটোরিকশা কিংবা লোকাল বাসে যাতায়াত করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। এতে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে তাদের।
এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বহনের জন্য এসব বাস সপ্তাহে পাঁচ দিন পাঁচ রুটে নিয়মিত যাতায়াত করার কথা থাকলেও সংকটের কারণে তাজহাট-শাপলা চত্বরের রুটটি (রুট নং-১) বন্ধ আছে প্রায় আড়াই বছরেরও অধিক সময় ধরে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয়টি অনুষদে শিক্ষার্থী প্রায় সাড়ে আট হাজার কিন্তু তাদের জন্য হল রয়েছে তিনটি। ফলে অধিকাংশ শিক্ষার্থীকে থাকতে হচ্ছে মেস কিংবা বাসাবাড়ি ভাড়া করে। ক্লাস করতে যাওয়ার সময় তারা বাসে ঠিকমতো জায়গা পান না। যার ফলে অনেকেই অটোরিকশার ওপর নির্ভর
করতে হয়। এছাড়া অনেকের টিউশনি শহরকেন্দ্রিক হওয়ায় তারাও বাসের ওপর নির্ভরশীল। কিন্তু বাস সংকটে তাদেরও অটো কিংবা রিকশায় যাতায়াত করতে হয়।
রেবোবির পরিবহণ পুল সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের তিনটি বাস প্রায় চার বছর ধরে পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে আছে। এর মধ্যে একটি বাস বিক্রির অভিযোগ আছে। সম্প্রতি একটি বাস মেরামতের জন্য কমিটি করেছে পরিবহণ পুল। অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা মৌখিকভাবে একটি বাস দেওয়ার কথা বললেও লিখিতভাবে তার কোনো নিশ্চিতকরণ মেলেনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী তালেব ইসলাম বলেন, 'আমাদের জন্য বাসের সংখ্যা বৃদ্ধি করা উচিত কিন্তু আমরা দেখছি দিনে দিনে বাসের সংখ্যা কমে যাচ্ছে। আমি নিজে টিউশন করি এবং শহরের বিভিন্ন কাজে বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস ব্যবহার করতে হয়। কিন্তু প্রায়ই বিকালের বাসগুলোতে দাঁড়িয়ে থাকার মতোও জায়গা পাই না। বিশেষ করে মেডিকেল মোড় রুটের বাসগুলোতে এই সমস্যা বেশি হয়। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আমাদের ভোগান্তি কমাতে দ্রম্নত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবেন।'
বিশ্ববিদ্যালয়ের জেন্ডার অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী আল হুমাইরা জান্নাতি ঐশী বলেন, 'বাসে চলাচল করতে গেলে প্রায়ই ভিড়ের ভিতর গাদাগাদি করে যেতে হয়। যেটা মূলত মেয়েদের জন্য একটু বেশিই কষ্টকর। আমরা অনেকেই নিজের খরচ চালানোর জন্য টিউশনি করি। টিউশনের বেশির ভাগই শহরকেন্দ্রিক হয়। আমরা যদি অটো কিংবা লোকাল বাসের মাধ্যমে যাতায়াত করি তাহলে মাসে আমাদের অনেক টাকা ভাড়া দিতে চলে যায়। এই সমস্যা দ্রম্নত নিরসন করার জোর দাবি জানাচ্ছি। আবার দেখা যায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শনিবারে বাস চললেও আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে তা বন্ধ থাকে।'
পরিবহণ পুলের পরিচালক ও ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মাসুদ রানা বলেন, 'আমাদের পরিবহণ পুলে গাড়ি সংকট আছে। তাছাড়া যে গাড়িগুলো চলছে তার প্রত্যেকটির অবস্থা খুবই করুণ। দেখা যাচ্ছে প্রায় প্রতিদিনই কোনো না কোনো গাড়ি মেরামত করতে হচ্ছে। এমনও দিন রয়েছে যেদিন দুটি গাড়ি একসাথে নষ্ট হওয়ার কারণে আমাদের কর্মচারীদের বাস শিক্ষার্থীদের রুটে চালাতে হয়েছে।'
তিনি আরও বলেন, 'নতুন বাস যেন আমাদের পরিবহণ পুলে সংযুক্ত হয় সেজন্য আমরা কিছু উদ্যোগও নিয়েছি। আমরা পাঁচটি ব্যাংকে ৫২ সিটের বাসের জন্য আবেদন করেছি এবং তাদের কেউ কেউ আমাদের বাস দেওয়ার জন্য আশ্বাস দিয়েছেন। যেহেতু ব্যাংক এতগুলো টাকার বাস দেবে তাই অনেক প্রসিডিউর ফলো করতে হয়, সে ক্ষেত্রে কিছুটা সময় প্রয়োজন। আবার আমরা প্রধান উপদেষ্টা বরাবর দুটি দোতলা বিআরটিসি বাসের জন্য আবেদন করেছি। আমাদের ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয় প্রধান উপদেষ্টার দপ্তরে নিজে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন। আশা করছি এখান থেকেও হয়তো আমরা পজিটিভ ফিডব্যাক পাবো।'