সিন্ডিকেটের কারসাজি

বোতলজাত সয়াবিনের দাম এখনো চড়া

প্রকাশ | ০৯ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রান্নার অতি প্রয়োজনীয় সয়াবিন তেল হঠাৎ করে বাজার থেকে উধাও হয়ে গেছে। বিশেষ করে, বিভিন্ন ব্র্যান্ডের এক থেকে দুই লিটারের বোতলজাত সয়াবিন যেন 'সোনার হরিণ' হয়ে উঠেছে। বাড়তি দামেও মিলছে না বোতলজাত সয়াবিন তেল। এতে বিপাকে পড়েছেন সাধারণ মানুষ। ত্রেতাদের অভিযোগ সিন্ডিকেটের কারসাজিতে বাজারে দুষ্প্রাপ্য হয়ে উঠেছে বোতলজাত সয়াবিন তেল। রাজধানীর কাওরান বাজার থেকে শুরু করে মহাখালী, মিরপুর, শ্যামলী, শান্তিনগর, মতিঝিল, নিউমার্কেট, আগারগাঁও এলাকা ঘুরেও বোতলজাত সয়াবিন তৈল পাওয়া যাচ্ছে না। রাজধানীর কোথাও একটি বা দুটি বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া গেলে দাম রাখা হচ্ছে ২০ টাকা বেশি। ক্রেতারা অভিযোগ করেছেন, আসন্ন রমজান মাসকে সামনে রেখে সয়াবিন তেলের দাম বৃদ্ধির পাঁয়তারা করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে ব্যবসায়ীদের কারসাজির কারণে তেল নিয়ে সরকারের আমদানি শুল্ক ছাড় কোনো কাজেই আসেনি। এতে প্রতিদিনই ভোজ্য তেলের বাজার নিয়ন্ত্রণহীন হয়ে উঠছে। অন্যদিকে বিক্রেতাদের দাবি, ডিলারদের কাছে অর্ডার দিয়ে চাহিদার অর্ধেকও পাওয়া যাচ্ছে না। সরকার শুল্ককর কমালেও চাহিদা অনুযায়ী সয়াবিন তেলের আমদানি বাড়েনি। ভোজ্য তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে সরকার শুল্ককর কমালেও এর কোনো ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি বাজারে। আমদানিকারকরা বলেছেন, বর্তমানে বিশ্ববাজারে ভোজ্য তেলের দাম বাড়তির দিকে। এ অবস্থায় তারা ভোজ্য তেলের দর সমন্বয়ের চেষ্টা করছেন। এদিকে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে অভিযানে নেমে আইনশৃখলা বাহিনীর সদস্যরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবৈধ মজুত রাখা বোতলজাত সয়াবিন তেল উদ্ধার করেছেন। রোববার সকালে মিরপুর ছয় নম্বর কাঁচা বাজারে এক লিটারের বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে আসেন স্থানীয় কাপড় ব্যবসায়ী আক্রাম আলী। প্রায় ঘণ্টাখানেক দোকানে দোকানে ঘুরে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাননি। ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে খোলা সয়াবিন তেল নিয়ে বাড়ি যান তিনি। বাজারের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ী মুসলিম মিয়া বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ভোজ্য তেল পরিশোধন কোম্পানিগুলো বোতলজাত সয়াবিন তেল দিচ্ছে না। এর মধ্যে দুই-একটি কোম্পানি কিছু দিলেও তা চাহিদার তুলনায় খুবই কম। এই ব্যবসায়ী বলেন, বাজারে সরবরাহ কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেলের কৃত্রিম সংকট তৈরি করা হচ্ছে। পরিচিত ক্রেতাদের কাছে আমরা ছোট হচ্ছি। রমজানকে সামনে রেখে কোম্পানিগুলো সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানোর জন্য এখনই সরবরাহ বন্ধ করে দিচ্ছে। কাওরান বাজারের বাতেন জেনারেল স্টোরের স্বত্বাধিকারী আবুল কালাম বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ নেই। কোম্পানিগুলো তেল সরবরাহ করছে না। সরকারের বিপণন সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) তথ্য বলছে, রোববার খুচরা পর্যায়ে বর্তমানে এক লিটার খোলা সয়াবিন ১৬৫ থেকে ১৬৮ টাকা, এক লিটারের খোলা পাম অয়েল ১৫৭ থেকে ১৫৯ টাকা ও এক লিটারের সুপার পাম অয়েল ১৬২ থেকে ১৬৩ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও বাজারে এরচেয়ে বেশি দামে তা বিক্রি হতে দেখা গেছে। ভোক্তারা জানান, যে দুই-একটি দোকানে বোতলজাত সয়াবিন তেল পাওয়া যাচ্ছে, তারা নির্ধারিত দরের চেয়ে বাজার বেঁধে ৫০ টাকা বেশিতে বিক্রি করছেন। ক্যাবের পক্ষ থেকে আমিরুল ইসলাম বলেন, বিশ্ববাজারে দাম বৃদ্ধির অজুহাতে এখন দেশে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু বর্তমানে বাজারে যে তেল বিক্রি হচ্ছে তা আগে আমদানি করা। তিনি বলেন, ভোক্তাদের জিম্মি করে ভোজ্য তেলের দাম বাড়ানোর পাঁয়তারা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, দেশের বাজারে ভোজ্য তেলের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে দুই দফায় আমদানি শুল্ক কর কমিয়েছে সরকার। প্রথম দফায় ১৭ অক্টোবর ও দ্বিতীয় দফায় ১৯ নভেম্বর শুল্ককর কমিয়ে তা ৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে। এতে প্রতি কেজি অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেলে শুল্ককর কমেছে ১০ থেকে ১১ টাকা। কিন্তু বাজারে এর ইতিবাচক কোনো প্রভাব পড়েনি। শুল্ককর কমানোর ফলে ভোজ্য তেলের আমদানি বাড়ার কথা, উলটো আমদানি আরও কমেছে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) তথ্য বলছে, চলতি বছরের অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল আমদানি হয়েছে ৩ লাখ ৬৮ হাজার টন। গত বছরের একই সময়ে আমদানি হয়েছিল ৪ লাখ ৬০ হাজার টন। সে হিসেবে আমদানি কমেছে প্রায় ২০ শতাংশ। পাইকারি বাজারে তেলের কোনো সংকট নেই বলে জানান পুরান ঢাকার মৌলভীবাজারের পাইকারি তেল বিক্রেতা ও আমদানিকারকরা। তারা বলেন, বড় বড় গ্রম্নপের মিল মালিকরা ঠিকমতো তেল সরবরাহ করছেন না। সময়মতো তেল সরবরাহ না করায় খুচরা বাজারে চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে তেল।