আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস উপলক্ষে রোববার ঢাকার মানিক মিয়া এভিনিউয়ে জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে টিআইবি আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সংস্থাটির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান -সংগৃহীত
কমিশন না থাকায় নড়বড়ে অবস্থায় রয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। সংস্থাটির কর্মকান্ডেও অনেকটাই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। রুটিন ওয়ার্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে দুদক। নতুন চেয়ারম্যান ও কমিশন না আসা পর্যন্ত এমন অবস্থা বিরাজ করার সম্ভাবনাই বেশি। এ পরিস্থিতিতে আজ পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। এ বছর দিবসের প্রতিপাদ্য 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে তারুণ্যের একতা: গড়বে আগামীর শুদ্ধতা'।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর থেকে দুদক মূলত অকার্যকর সংস্থায় পরিণত হয়েছে। কারণ দুদকের চেয়ারম্যান। নেই কোনো কমিশন। এক মাসের বেশি সময় ধরে সংস্থাটিতে কমিশন না থাকায় দুদকের গুরুত্বপূর্ণ কাজ থেমে আছে। অনেকটাই অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে সংস্থাটিতে। যদিও রুটিন ওয়ার্ক চলছে। চেয়ারম্যান ও দুই কমিশনার পদত্যাগ করার পর থেকে শত শত অভিযোগ জমা পড়ে আছে। সেগুলো সেভাবেই পড়ে আছে। সেসব অভিযোগ বাছাই পর্যন্ত করা হয়নি। তবে অক্টোবরের আগ পর্যন্ত জমা পড়া অভিযোগের মধ্যে মাত্র ২০ থেকে ২৫ শতাংশের মতো আমলে নেওয়া হয়েছে। যার অনেকগুলোই অনুসন্ধানের জন্য আগেই অনুমতি পেয়েছে। সেগুলোর অনুসন্ধান চলছে। এ ছাড়া আরও কিছু অভিযোগের অনুসন্ধান শেষে রিপোর্ট জমা পড়েছে। সেগুলোর মধ্যে অধিকাংশই মামলা হিসেবে দায়ের করার অনুমতি পেয়েছে। দায়েরকৃত মামলাগুলোর তদন্তকারী কর্মকর্তা নিয়োগ করা হয়েছে। তদন্তকারী কর্মকর্তারা তদন্ত কার্যক্রম চালাচ্ছেন। তবে দুদকে পড়া অভিযোগের অন্তত ৭৫ শতাংশই নথিজাত করা হয়। অর্থাৎ প্রাথমিক অনুসন্ধানে অভিযোগের কোনো সুনির্দিষ্ট তথ্য-প্রমাণ বা দলিলাদি পাওয়া যায় না।
যদিও দুদক আইনে মিথ্যা অভিযোগ দায়েরকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার বিধান রয়েছে। অধিকাংশ অভিযোগই বেনামে জমা পড়ার কারণে অভিযোগকারীদের সম্পর্কে কোনো তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় না। এমনকি তাদের পরিচয় মেলে না। যে কারণে তাদের বিরুদ্ধে আর আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হয়ে ওঠে না। সেসব মিথ্যা অভিযোগকারীদের শনাক্ত করা হয়েছে, কমিশন না থাকায় তাদের বিরুদ্ধেও কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া সম্ভব হচ্ছে না।
এসব বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা ও উপ-পরিচালক মো. আকতারুল ইসলাম যায়যায়দিনকে বলেন, কমিশন না থাকায় সংস্থাটির কার্যক্রমে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। তবে অন্যান্য দাপ্তরিক কাজ বা আগে অনুমতি পাওয়া অভিযোগের তদন্তসহ মামলা দায়ের প্রক্রিয়া নিয়মিতভাবেই চলছে। দ্রম্নত কমিশন দায়িত্ব নিলে দুদকের কার্যক্রম আরও গতিশীল হবে।
এদিকে, নানা অনুষ্ঠান ও দুর্নীতিবিরোধীর্ যালি এবং সচেতনতামূলক কর্মসূচির মধ্যদিয়ে আজ সারা দেশে পালিত হবে আন্তর্জাতিক দুর্নীতিবিরোধী দিবস। সোমবার সকাল ৮টায় ঢাকার সেগুনবাগিচায় অবস্থিত দুদক কার্যালয়ে দিবসটির উদ্বোধনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হবে। প্রথমেই মিট দ্যা প্রেসের মাধ্যমে দিনের কর্মসূচি শুরু হবে। এদিন সকাল ১০টায় ঢাকার কাকরাইলের ডিপেস্নামা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটটের মুক্তিযুদ্ধ স্মৃতি মিলনায়তনে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হবে। অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি থাকবেন আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি থাকবেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের সংস্কার কমিটির প্রধান ড. ইফতেখারুজ্জামান।