ভোটার তালিকা প্রণয়ন

'বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয় আপগ্রেড' চায় বিএনপি

প্রকাশ | ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান -ফোকাস বাংলা
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সঠিক ভোটার তালিকা প্রণয়নে 'বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয়, আপগ্রেড' চায় বিএনপি। দলের নির্বাচন সংস্কার-বিষয়ক কমিটির আহ্বায়ক ও স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান এ কথা উলেস্নখ করে বলেছেন, আসলে সত্যিকার অর্থে অনেস্টলি সঠিক ভোটার তালিকা আমরা করতে চাই, তাহলে কিন্তু আমরা বাড়ি বাড়ি যাওয়া নয়, আমরা কম্পিউটার এআই, আজকে কিন্তু আমরা কম্পিউটারকে বলে দিলে সে নিজেই করে দিতে পারে, সেটা এ্যাবসুলেটলি একুরেট হবে। সোমবার বিকালে গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে ড. আবদুল মঈন খান বলেন, 'আমি কোনদিন কে ১৮ মাস হয়ে যাব, সেটাও কিন্তু কম্পিউটার করে দিতে পারে। সেটার জন্য বাংলাদেশের ১৮ কোটি মানুষের বাড়ি বাড়ি যাওয়ার প্রয়োজন নেই। বাড়ি বাড়ি যাওয়া এটা অত্যন্ত সময়সাপেক্ষ এবং অপ্রয়োজনীয় এবং এটাতে ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। যিনি মারা গেছেন, তার নামটা অটোমেটিক্যালি বাদ চলে যাবে। এ বিষয় (ভোটার তালিকা) আমরা সংস্কার প্রস্তাবে স্পষ্ট করেছি, এটা আপগ্রেড হবে।' তিনি বিগত সরকারের আমলে আরপিও'র সংশোধনে যে সম্পূরক আদেশ এনেছিল তা বাতিল, নির্বাচনী পরিচালনায় কিছু বিধিমালা সংশোধন, রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের জন্য আচরণ বিধিমালা ও রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের নীতিমালা সংশোধন, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ নীতিমালা আপগ্রেড করা, নির্বাচন কমিশনের সক্ষমতা বৃদ্ধি, গণমাধ্যমের নির্বাচনী আচরণ বিধিমালাসহ ১০ দফা সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরে জানান, এই সংস্কার প্রস্তাব তারা সরকারের গঠিত নির্বাচন সংস্কার কমিশনের কাছে দিয়েছেন। তিনি বলেন, 'লেভেল পেস্নয়িং ফিল্ড তৈরির জন্য যাতে সত্যিকারভাবে মানুষ নিজের ভোট নিজে দিতে পারেন এবং জনগণের সত্যিকার প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে পারে, ডামি প্রতিনিধি না, ভুয়া প্রতিনিধি না সেজন্য আমাদের এই সংস্কার প্রস্তাব। প্রশাসনের মাধ্যমে নির্বাচনকে কুক্ষিগত করতে বিগত সরকার অনেক কিছু করেছে। আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী তারা যাতে রাজনৈতিক ভূমিকা পালন করতে না পারে, তারা নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করে, সে জন্য আমরা ফ্যাসিস্ট সরকারের প্রণীত বিধিমালার সংশোধন চেয়েছি।' 'সংস্কার করে নির্বাচনের জন্য ২-৩ মাসই যথেষ্ট' সংবাদ সম্মেলনে স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'আমরা যেসব প্রস্তাব করেছি, এগুলো প্রস্তাব অনুযায়ী নির্বাচন প্রক্রিয়া দ্রম্নত অনুষ্ঠান সম্ভব। এখানে এমন কোনো প্রস্তাব করা হয়নি, যেটা নতুন করে কোনো কিছু করতে হবে। আমরা নির্বাচন কমিশন শক্তিশালী করার কথা বলেছি, নির্বাচনের সচিবালয় করা এবং তাদের কিছু ক্ষমতা দেওয়া ইত্যাদি, আমরা প্রচলিত আইনগুলোর সংশোধন, সংস্কার- এগুলোর জন্য অধিক সময়ের প্রয়োজন হয় না।' নজরুল ইসলাম খান বলেন, 'আমরা প্রস্তাব যেটা করেছি, সেটা হলো- যাদের নেতৃত্বে যেসব অপকর্ম হয়েছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে তারা বিতাড়িত হয়েছে, পলায়ন করেছে। যাদের মাধ্যমে অপকর্ম করা হয়েছে, তাদের ব্যাপারে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছি, যাতে তারা আগামীতে নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় না থাকে, সেই প্রস্তাব আমরা করেছি।' স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আমরা যেসব সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছি, দলের পক্ষ থেকে সুচিন্তিতভাবে, এক্সপার্ট কমিটির সঙ্গে বসেছি, অনেকের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা যেসব সংস্কারের কথা বলেছি, সেগুলো অধিকাংশ আইনি সংস্কারের বিষয়, কাগজের বিষয়- প্রাকটিক্যালি যে কাজগুলোর জন্য নির্বাচন কমিশন সময় নেয়, যেমন ভোটার তালিকা প্রণয়ন, নতুন ভোটার সংযোজন, কী কী ভুলভ্রান্তি আছে, ভুয়া ভোটার বাদ দেওয়া, এরপর নির্বাচন কাজে অফিসার নিয়োগ, ডিলিমিটেশন ইত্যাদি সব কাজ গুছাতে প্রাকটিক্যালি ২-৩ মাসের বেশি সময় লাগার কথা না।' 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার হলেই ' এক প্রশ্নের জবাবে সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'কেয়ারটেকার সরকার ইনপ্রেইস আছে বা হবে, এটাই ছিল সবচেয়ে বড় বাধা, একটা ফ্রি ফেয়ার ইলেকশন না হওয়ার। ডিলিমিটেশন, অপকর্মে জড়িতদের নির্বাচন প্রক্রিয়া থেকে বাদ রাখা, এসব হচ্ছে উপসর্গ। আসল রোগ হচ্ছে, কেয়ারটেকার সরকার না থাকাটা। কেয়ারটেকার সরকার পুনর্বহাল হলে এসব উপসর্গ আর থাকবে না। কেয়ারটেকার সরকার হলে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন হতে বাধ্য।' সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য ইসমাইল জবিহউলস্নাহ উপস্থিত ছিলেন। ভারতের মনে অনেক কষ্ট : রিজভী  এদিকে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ভারতের মনে অনেক কষ্ট, কারণ তাদের প্রিয় মানুষ হাসিনা এখন বাংলাদেশে নেই। হাসিনার কাছ থেকে তারা (ভারত) ব্যাপক সুবিধা পেত। সোমবার বিকালে মানিকগঞ্জের শিবালয় উপজেলার রুপসা গ্রামে শহীদ রফিকুল ইসলামের বাড়িতে 'আমরা বিএনপি পরিবার' আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। রিজভী বলেন, 'ছাত্র-জনতার আন্দোলনে শহীদ এবং আহতদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞ থাকতে হবে। তাদের অবদানের কথা স্মরণ রাখতে বিভিন্ন স্থাপনা ও সড়কের নামকরণ করব। বিএনপি জনগণের দল, আগামীতে জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করলে শহীদের যথাযথ মর্যাদা দেওয়া হবে।' তিনি বলেন, 'অন্যের জন্য গর্ত করলে, সেই গর্তে নিজেকেই পড়তে হয়, এর জ্বলন্ত প্রমাণ শেখ হাসিনা। আপসহীন নেত্রী খালেদা জিয়াকে বিনা অপরাধে কারাগারে বন্দি রেখেছিলেন। ছাত্র-জনতার গণ-আন্দোলনের মুখে দুই হাজার ছাত্র-জনতা হত্যার দায় নিয়ে শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে গেছেন। তিনি ভেবেছিলেন, তার প্রভু ভারত সরকার তাকে টিকিয়ে রাখবে, কিন্তু পারেনি।' তিনি আরও বলেন, 'শেখ মুজিবুর রহমান বাক্‌শাল কায়েম করতে চেয়েছিলেন, ওই সময় অনেক পত্র-পত্রিকা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। ঠিক একই কায়দায় তার মেয়েও (শেখ হাসিনা) ক্ষমতায় এসে দিগন্ত টেলিভিশন, ইসলামী টেলিভিশন, চ্যানেল ওয়ান এবং আমার দেশ পত্রিকা বন্ধ করে দেয়।' বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব আরও বলেন, 'সাতটি বিদু্যৎকেন্দ্রের কাজ চলছে, এর সঙ্গে ভারতের এক ব্যবসায়ী জড়িত আছেন। ওপরে দেখিয়েছে বাংলাদেশের কিছু ব্যক্তির নাম, তাও আবার সব শেখ পরিবারের আত্মীয়স্বজন। বিনা টেন্ডারে সব কয়টি বিদু্যৎকেন্দ্রের কাজ দেওয়া হয়েছে। কম দামি কয়লা দিয়ে বিদু্যৎ উৎপাদন করছে ভারতের ব্যবসায়ী আদানি। তিনি আবার হুমকি দিয়েছেন, টাকা পরিশোধ না করলে বিদু্যৎ উৎপাদন বন্ধ করে দেবেন।' এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন- বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও মানিকগঞ্জ জেলা বিএনপির সভাপতি আফরোজা খান রিতা, বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও 'আমরা বিএনপি পরিবার'- এর উপদেষ্টা এম রশিদুজ্জামান মিলস্নাত, আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনসহ জেলা-উপজেলা পর্যায়ে কয়েক শতাধিক নেতাকর্মী।