রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এলজিইডি ভবনে শনিবার প্রতিবন্ধীদের সঙ্গে বিএনপি আয়োজিত মতবিনিময় সভায় ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। পাশে দলের জ্যেষ্ঠ নেতাদের দেখা যাচ্ছে -স্টার মেইল
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, প্রতিবন্ধীদের পেছনে রেখে কখনো এগিয়ে যাওয়া যায় না। অথচ ক্ষমতাচু্যত আওয়ামী লীগ প্রতিবন্ধীদের ভাতাও লুটে নিয়েছে। আগামীতে প্রতিবন্ধীসহ সবাইকে নিয়ে বৈষম্যহীন গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে।
শনিবার বিকালে রাজধানীর আগারগাওয়ে এলজিইডি ভবনে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস উপলক্ষে বিএনপি আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হন তারেক রহমান। এ সময় প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পাশে থাকার প্রতিশ্রম্নতি দিয়ে তাদের নিয়ে আগামী দিনে বিএনপির পরিকল্পনার কথা জানান তারেক রহমান। মতবিনিময় সভায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ছাড়াও আরও বক্তব্য রাখেন দলের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, সহ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. পারভেজ রেজা কাকন ও 'আমরা বিএনপি পরিবার'র আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমন। মতবিনিময়ে অংশ নেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের উপদেষ্টা ড. মাহাদী আমিন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজীব আহসান, বিএনপি মিডিয়া সেলের সদস্য ডা. মোস্তফা আজিজ সুমন, ফারজানা শারমিন পুতুল, সাংবাদিক জাহিদুল ইসলাম রনি, ডিইউজে'র সাংগঠনিক সম্পাদক সাংবাদিক এম সাঈদ খান, জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম-সম্পাদক ফারহান আরিফ প্রমুখ। দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে আসা অন্তত দেড় শতাধিক প্রতিবন্ধী নাগরিক এই মতবিনিময় অনুষ্ঠানে অংশ নেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন প্রতিবন্ধী নাগরিক সংগঠনের পরিষদের (পিএনএসপি) সাধারণ সম্পাদক
সালমা মাহবুব এবং ইফতেখার মাহবুব।
তারেক রহমান বলেন, 'গত ১৬ বছর ধরে আমরা এমন একটি বাংলাদেশে বসবাস করেছি, যেখানে আমাদের প্রাপ্য নাগরিক অধিকার ও স্বাধীনতা একে একে কেড়ে নেওয়া হয়েছে। সমাজের প্রতিটি শ্রেণি ও পেশার মানুষ রাষ্ট্রীয় সহায়তা থেকে বঞ্চিত হয়েছে। প্রতিবন্ধীরাও তার ব্যতিক্রম নন। এর ফলে জীবনের মান উন্নয়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, যা ব্যক্তিগতভাবে আমিও অনুভব করেছি।'
তিনি বলেন, 'বিএনপি জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করলে সবসময় প্রতিবন্ধীদের পাশে থাকবে। আমি বিশ্বাস করি, আপনারা কেউ প্রতিবন্ধী নন বরং আপনারা সকলে বিশেষভাবে সক্ষম নাগরিক। আপনাদের প্রত্যেকের রয়েছে অসীম সক্ষমতা।'
তারেক রহমান বলেন, 'শারীরিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করেও যারা নিজ উদ্যোগে অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন, তাদের বিজয়ের গল্প আমাদের আলোর পথ দেখায়। আমি প্রতিশ্রম্নতি দিচ্ছি, আগামীর বাংলাদেশে শারীরিক সীমাবদ্ধতা যেন কাউকে বৈষম্যের শিকার না করে, পিছিয়ে না রাখে, সেই বহুমুখী উদ্যোগ নিয়ে, জীবনযুদ্ধে বিজয়ের অজস্র প্রেরণাদায়ী গল্প সৃষ্টি করা হবে। এক সাথে কাজ করে আমরা এমন একটি সমাজ গড়ে তুলব, যেখানে প্রতিটি মানুষ তার পূর্ণ সম্ভাবনায় পৌঁছাতে পারবে।'
তারেক রহমান বলেন, 'সুচিকিৎসা, শিক্ষার সুযোগ, চাকরির ক্ষেত্রে সমান সুযোগ এবং দেশের প্রতিটি স্থাপনা ও যাতায়াত ব্যবস্থাকে প্রতিবন্ধীদের জন্য এক্সিসেবল করে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।'
তিনি বলেন, নতুন আইন প্রণয়ন, বিদ্যমান আইনের সঠিক বাস্তবায়ন, বরাদ্দকৃত অর্থের পরিমাণ বৃদ্ধি, কিংবা সেই অর্থের সুষ্ঠু বণ্টন যেভাবেই হোক, আমরা চেষ্টা করবো আপনাদের অধিকার ও সুযোগ নিশ্চিত করতে। আমাদের লক্ষ্য এমন একটি বাংলাদেশ গড়ে তোলা, যেখানে প্রত্যেকের জন্য সমান ন্যায্যতা ও একটি ফেয়ার শেয়ার নিশ্চিত থাকবে। সেই লক্ষ্যেই আজকের এই মতবিনিময় অনুষ্ঠান।'
তিনি আরও বলেন, 'আমাদের প্রতিশ্রম্নতি হলো বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিদের জীবনের মানোন্নয়নে দৃঢ় পদক্ষেপ গ্রহণ করা, যার ভিত্তি হবে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা, সামাজিক ক্ষমতায়ন এবং মানবিক মর্যাদা নিশ্চিত করা। আমরা একটি স্বতন্ত্র অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠা করার উদ্যোগ নেব, যা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য সুনির্দিষ্ট কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের কার্যক্রম সমন্বয় করবে।'
তারেক রহমান বলেন, '২০০১ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকার বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিবন্ধীদের ভাতা প্রদান শুরু করলেও আওয়ামী লীগ সেই ভাতাকে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির সঙ্গে সামঞ্জস্য না রেখে, নিজেদের নেতাকর্মীদের মাঝে লুটে নিয়েছে। অর্থনৈতিক বাস্তবতার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে, আমরা প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য ভাতার পরিমাণ বাড়িয়ে, তা ন্যায্যভাবে পুনর্নির্ধারণ করতে চাই। নিবন্ধন প্রক্রিয়াকে সহজ ও স্বচ্ছ করার লক্ষ্যে, আমরা সমাজকল্যাণ, স্বাস্থ্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ গ্রহণ করবো, যাতে একজন প্রতিবন্ধীও সামাজিক সুবিধা থেকে বাদ না পড়ে।'
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, 'বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন ব্যক্তিদের নিয়োগ দেওয়া হলে আমরা সেসব ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলোকে কিছু ট্যাক্স সুবিধা বা কমপস্নায়েন্স সার্টিফিকেট প্রদান করার চিন্তাও করতে পারি। 'সুবর্ণ নাগরিক কার্ড' নামক যে তথাকথিত কার্ড রয়েছে, সেটিকে গতিশীল করে আমরা এর আওতায় স্বাস্থ্যবীমা, শিক্ষাবৃত্তি, পরিবহণ ডিসকাউন্টসহ অন্যান্য সামাজিক সুবিধা প্রদান করতে চাই। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন ব্যক্তিরা যাতে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারেন, আমরা তাদের জন্য বাস্তবসম্মত ভোকেশনাল ও টেকনিকাল ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করবো। '
তিনি আরও বলেন, 'স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে, আমরা প্রতিটি জেলা সদর হাসপাতালে বিশেষায়িত স্বাস্থ্যসেবা ইউনিট স্থাপনের চেষ্টা করবো, যেখানে শারীরিক থেরাপি, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা, এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসার আধুনিক সুবিধা থাকবে। আমরা প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন জনগণের জন্য মোবাইল হেলথ ক্লিনিক চালুর উদ্যোগ গ্রহণ করবো। সহায়ক উপকরণ তৈরির জন্য কারখানা স্থাপন এবং আমদানির ক্ষেত্রে কর মওকুফের উদ্যোগ নেওয়ার পরিকল্পনা থাকবে। গুরুতর প্রতিবন্ধীদের জন্য নিবিড় পরিচর্যার বিশেষ কর্মসূচি প্রণয়ন করার চেষ্টা করা হবে।'
প্রতিবন্ধীদের উদ্দেশ্য তারেক রহমান আরও বলেন, 'আমরা সবসময় আপনাদের পাশে আছি এবং থাকবো। কারণ, আপনাদের প্রতিবন্ধকতা আমাদের সবার প্রতিবন্ধকতা। আমি বিশ্বাস করি, আপনাদের পেছনে রেখে আমরা কখনো এগিয়ে যেতে পারি না, আর এগোতে চাইও না। আমরা সবাই মিলে একসাথে যে গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলবো, সেটি হবে সবার জন্য ফেয়ার, সবার জন্য ইনক্লুসিভ, সবার জন্য বাসযোগ্য, এবং সবার জন্য উপভোগ্য। আসুন, আমরা সবাই মিলে একটি গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ে তুলি, যার ভিত্তি হবে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক, এবং উদারতান্ত্রিক সমাজ নির্মাণ। আপনাদের কল্যাণ এবং সাফল্য আমাদের অগ্রাধিকার।'