পুঁজিবাজারে অস্থিরতার নেপথ্যে পেস্নয়ার ও রেগুলেটররা : অর্থ উপদেষ্টা
প্রকাশ | ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০ | আপডেট: ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯:৪২
যাযাদি রিপোর্ট
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, পুঁজিবাজারে অস্থিরতার নেপথ্যে বিনিয়োগকারী নয়, পেস্নয়ার ও রেগুলেটররাই দায়ী। শনিবার সকালে সিরডাপ ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স সেন্টারে বাংলাদেশের ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তথ্যভিত্তিক গবেষণাগ্রন্থ 'ব্যাংকিং অ্যালমানাক' ষষ্ঠ সংস্করণের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
ব্যাংকিং অ্যালমানাকের বোর্ড অব এডিটরসের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. হোসেন জিলস্নুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে অর্থসচিব ড. মো. খায়রুজ্জামান মজুমদার, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার এবং বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকসের (বিএবি) চেয়ারম্যান ও ঢাকা ব্যাংকের চেয়ারম্যান আবদুল হাই সরকার বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন।
আরও বক্তব্য দেন ব্যাংকিং অ্যালমানাকের বোর্ড অব এডিটরসের সদস্য অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স বাংলাদেশের (এবিবি) সাবেক চেয়ারম্যান এবং গেস্নাবাল ইসলামি ব্যাংকের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ নুরুল আমিন এবং দেশের ব্যাংকিং সেবা-বৈচিত্র্যের তথ্য-উপাত্ত জনগণের কাছে পৌঁছে দিতে ব্যাংকিং অ্যালমানাকের প্রয়োজনীয়তা ও তাৎপর্য বিষয়ে বিশেষ প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অ্যালমানাকের প্রকল্প পরিচালক আবদার রহমান।
অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'বিবিএসকে বলা হয়েছে তথ্য যা আছে তাই যেন প্রকাশ হয়। এখানে কারচুপির কোনো ব্যাপার নেই। আমাদের ব্যাংকিং ও আর্থিক খাতের মতো পুঁজিবাজারে অবস্থাও একই রকমের। পুঁজিবাজারের শেয়ার প্রাইস কমে যাচ্ছে বলেই "চেয়ারম্যানকে রিমুভ কর" বলে মিছিল হচ্ছে। আপনারা জেড ক্যাটাগরির শেয়ার কিনছেন, যার কোনো অস্তিত্ব নেই। অথচ এ শেয়ার মহা আনন্দে কিনছেন। নূ্যনতম কোনো মূল্য নেই, এগুলো কয়েক দিন পরই ওয়েস্ট পেপার হিসেবে ব্যবহার হবে। এজন্য একটু কষ্ট করতে হবে। আমি বিনিয়োগকারীদের দায় দিচ্ছি না। পুঁজিবাজারের পেস্নয়ার ও রেগুলেটরদের অনেক দায় রয়েছে।'
এজন্য সচেতনতা বাড়াতে এটা প্রচার করা দরকার বলেও উলেস্নখ করেন তিনি। তিনি বলেন, 'সঠিক তথ্য-উপাত্ত ছাড়া কোনো কিছু মূল্যায়ন হয় না। বিগত ১৫ বছরের তথ্য বিভ্রাট নিয়ে বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। মূল্যস্ফীতি নিয়ে তথ্য বিভ্রাটের পেছনে অনিচ্ছাকৃত কিছুটা ভুল রয়েছে আবার নীতি নির্ধারাকরাও তথ্য লুকানোর চেষ্টা করেন।'
অর্থ উপদেষ্টা বলেন, 'আমরা কোনো পাওয়ার দেখাতে আসিনি একটা দায়িত্ব নিয়ে এসেছি। বিগত ১৫ বছরের তথ্য নিয়ে নানা বিভ্রাট রয়েছে। তথ্য লুকানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আমরা এগুলো পরিবর্তন ও সংস্কারের চেষ্টা করছি।'
তিনি আরও বলেন, 'ন্যাশনাল সিঙ্গেল উইন্ডো করার চেষ্টা করছি। যাতে করে ব্যবসায়ী এক স্থান থেকে সব তথ্য পাবেন। তথ্যের জন্য ব্যবসায়ীদের ১০ জায়গা দৌড়াতে হবে না।'
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে অর্থ সচিব ড. খায়রুজ্জামান মজুমদার বলেন, 'আমরা সেক্টরগুলোতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছি। আর্থিক খাতে শৃঙ্খলা ফেরাতে উন্নয়ন সহযোগীদের সহযোগিতা প্রয়োজন। এজন্য বিভিন্ন বোর্ডে পরিবর্তন আনা হয়েছে।'
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. হুসাইন জিলস্নুর রহমান বলেন, 'এই মুহূর্তে বাংলাদেশের অর্থনীতির সামনে আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা, মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ,অর্থনীতির প্রক্রিয়াগুলো বেগবান করা, অলিগার্কিক মার্কেট পাওয়ার এবং তথ্যের সত্যতা, পেশাদারত্বের মতো পাঁচটি বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। আমরা জানি বিনিয়োগ থমকে আছে। সেটা শুধু অর্থনীতি পরিচালনার বিষয় নয়। সামগ্রিকভাবে আইন-শৃঙ্খলা থেকে শুরু করে অনেক কিছু আছে। এসব মোকাবিলা করতে সক্ষমতার সঙ্গে ব্যক্তি খাতকে আরও সম্পৃক্ত করতে হবে।'
এসব করতে পারলে ২০২৫ সালে কাঙ্ক্ষিত অবস্থানে পৌঁছতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
দেশের খ্যাতিমান অর্থনীতিবিদ, গবেষক ও ব্যাংক বিশেষজ্ঞদের সমন্বয়ে গঠিত শক্তিশালী উচ্চ মর্যাদাসম্পন্ন বোর্ড অব এডিটরসের নীতি-নির্দেশনায় ব্যাংকিং অ্যালমানাকের এই অগ্রযাত্রা। ২০১৬ সাল থেকে এডিটোরিয়াল বোর্ডের নেতৃত্বে আছেন বাংলাদেশের ব্যাংকিং জগতের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্ব ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতায় শিক্ষা বিষয়ক সাপ্তাহিক পত্রিকা শিক্ষা বিচিত্রার উদ্যোগে ২০১৬ সাল থেকে এই গবেষণা গ্রন্থটি নিয়মিত প্রকাশিত হয়ে আসছে।