বিএনপির সঙ্গে সমমনাদের বৈঠক

দ্রম্নত নির্বাচন দিতে সরকারকে সহযোগিতা করার সিদ্ধান্ত

প্রকাশ | ২৫ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
দ্রম্নততম সময়ে জাতীয় সংসদ নির্বাচন দেয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করবে বিএনপি ও সমমনারা। একইসঙ্গে তারা নূ্যনতম সংস্কার শেষে নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণারও দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাপাশি বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের চার মাসের সফলতা ও ব্যর্থতা নিয়ে আলোচনা হয় বৈঠকে। মঙ্গলবার রাজধানীর গুলশানে দলের চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে গণঅধিকার পরিষদ, বাম গণতান্ত্রিক ও ঐক্য ভাসানী ন্যাপের সঙ্গে বিএনপির লিয়াজোঁ কমিটির বৈঠকে এসব আলোচনা হয়। বিএনপির পক্ষে বৈঠকে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উলস্নাহ বুলু উপস্থিত ছিলেন। সূত্র জানায়, বৈঠকে সমমনা দলের নেতারা অন্তর্র্ব‌তীকালীন সরকারের উপদেষ্টাদের ভিন্নমুখী বক্তব্যে নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন। বলেন, সরকার গঠনের সময় চার মাস অতিবাহিত হলেও নির্বাচনের বিষয়ে এখনো সুনির্দিষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণা করা হয়নি। তারা প্রতি পদে পদে ব্যর্থ হচ্ছে। এরপরও এই সরকারকে রাজনৈতিক দলগুলো সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। কিন্তু তাদের নিজেদের তারা ব্যর্থ হলে তার দায়ভার রাজনৈতিক দলগুলো নেবে না। পাশাপাশি সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় রাজনৈতিক দল গঠনের বিষয়েও কেনো কোনো নেতা ক্ষোভ প্রকাশ করেন বৈঠকে। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, 'আমাদের চলমান যে কাজগুলো বাকি আছে, এরমধ্যে রয়েছে একটি রূপরেখা। সংস্কার বাস্তবায়ন। সে ব্যাপারে আমরা আলোচনা করেছি। এটা আমরা জনগণের কাছে নিয়ে যাচ্ছি। ৩১ দফা কার্যক্রম ও বাস্তবায়নের জন্য যে বিষয় ছিল, সেগুলোও আমরা আলোচনা করেছি। এখন সবার কাছে যেটা প্রত্যাশা সেটা হচ্ছে, দ্রম্নত নির্বাচনের মাধ্যমে একটি নির্বাচিত সরকার ও সংসদ। যারা আগামী দিনে এই ৩১ দফা বাস্তবায়ন করবে। কাজেই নির্বাচন অতিসত্বর হওয়ার দরকার। একটা নির্বাচিত সরকার যত তাড়াতাড়ি ক্ষমতায় আসবে দেশের অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিক এবং বৈদেশিক যে বিষয়গুলোর আমরা সম্মুখিন হচ্ছি- সেটা নির্বাচিত সরকারের পক্ষেই দ্রম্নত সমাধান করা সম্ভব।' খসরু বলেন, 'বৈঠকে সংস্কারের বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বলা হয়েছে, সংস্কার করতে হবে সংসদে। একটি নির্বাচিত সরকার সেই সংস্কারগুলো সংসদে বাস্তবায়ন করবে। এই অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারের জন্য যে কমিশনগুলো করা হয়েছে, তারাও যদি সংস্কারের কোনো প্রস্তাব রাখতে চান, তাদের সংস্কারের প্রস্তাবগুলোও আমরা সংসদে আলোচনা করব। আগামী দিনে সংসদ সেই সিদ্ধান্তগুলো দেবে।' গণফোরাম সভাপতি মোস্তফা মহসিন মন্টু বলেন, 'আজকে জাতীয় এক সংকটময় মুহূর্ত যাচ্ছে। আমাদের সীমান্তগুলোর কি অবস্থা। আন্তর্জাতিকভাবে আমরা একটা বলয়ের ভিতরে পড়ে গিয়েছি। বড় বড় শক্তি আমাদের নিয়ে নানা ধরনের ঘোরাফেরা করছে। এজন্য জাতীয়ভাবে আমাদের ঐক্যের কোনো বিকল্প নাই। একটা জাতীয় ঐক্যের প্রয়োজন আছে। এই ঐক্যটা হতে হবে '৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় ভিত্তিতে।' সংস্কার যা হবে তা নির্বাচনের পরে জাতীয় সংসদে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে হবে বলেও মন্তব্য করেন মন্টু। গণঅধিকার পরিষদের একাংশের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান বলেন, 'রাজনৈতিক দলগুলোর প্রত্যাশা ছিলো যে, অন্তর্বর্তী সরকার একটি রোডম্যাপ প্রকাশ করবে। কিন্তু এখনো পর্যন্ত সরকার দলগুলোকে ধোঁয়াশার মধ্যে রাখায় সন্দেহ সংশয় তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে উপদেষ্টাদের নানামুখী বক্তব্য, পিছন থেকে নতুন দল গঠনের সহযোগিতা, সেই দলের আবার আওয়ামী লীগের কাউন্সিলরদের সহযোগিতা চাওয়া এবং সরকারের সব সেক্টরে আওয়ামী সুবিধাভোগীদের পুনর্বাসন করা, আওয়ামী তালিকার ডিসি-এসপি নিয়োগ, আওয়ামী হাইকমান্ডের কাউকে গ্রেপ্তার না করা, শেখ পরিবারকে ধরাছোঁয়ার বাইরে রাখা, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ও দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন দাম বৃদ্ধি ইত্যাদি মানুষকে হতাশ করেছে। একই সঙ্গে সরকার আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ না করে বিএনপির ওপর দায় চাপাচ্ছে। আমাদের স্পষ্ট কথা, আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন যারা করবে, তাদের বিরুদ্ধে আমরা গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলবো। গণফোরামের পক্ষে দলটির সভাপতি মোস্তফা মোহসীন মন্টু, সাধারণ সম্পাদক ডা. মিজানুর রহমান, সভাপতি পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট এস এম আলতাফ হোসেন, সুব্রত চৌধুরী, প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক মুহাম্মদ উলস্নাহ মধু উপস্থিত ছিলেন। গণঅধিকার পরিষদের একাংশের পক্ষে দলটির সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, উচ্চতর পরিষদ সদস্য শাকিলউজ্জামান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।