সরকারের বাতাের্তই কাজ করছে ইসি: সুজন

প্রকাশ | ২৬ জুলাই ২০১৮, ০০:০০ | আপডেট: ২৬ জুলাই ২০১৮, ০০:৫৯

যাযাদি রিপোটর্
রংপুর, খুলনা ও গাজীপুর সিটি করপোরেশন নিবার্চনের উদাহরণ টেনে নাগরিক সংগঠন সুজন বলেছে, নিবার্চন কমিশন এখন সরকারের ‘বাতাের্তই’ কাজ করছে। রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি নিবার্চনের আগে বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে সংগঠনটি দাবি করেছে, স্থানীয় পযাের্য়র এই নিবার্চনেও ‘লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড’ নেই। আগামী ৩০ জুলাই অনুষ্ঠেয় রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেট সিটি নিবার্চন সুষ্ঠু হবে কি না, তা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন সুজনের সভাপতি তত্ত¡াবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা এম হাফিজউদ্দিন খান। রাজশাহী, সিলেট ও বরিশাল সিটি নিবার্চনে প্রতিদ্ব›দ্বী প্রাথীের্দর তথ্য উপস্থাপনের জন্য এই সংবাদ সম্মেলন ডাকে সুজন। এতে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়ক দিলীপ কুমার সরকার গত ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি নিবার্চনের সঙ্গে গত দুই মাসে অনুষ্ঠিত গাজীপুর ও খুলনার নিবার্চনের তুলনা করেন। তিনি বলেন, ‘রংপুরে ইলেকশন হয়েছে। আমরা নিবার্চন কমিশনের নিয়ন্ত্রণেই সবকিছু দেখেছি। সুষ্ঠুভাবে সবকিছু হয়েছে। পুলিশ প্রশাসনও ঠিকমতো কাজ করেছে, সংশ্লিষ্ট সকলে ভালোমতো কাজ করেছে। তার মানে ওখানে একটা বাতার্ গিয়েছিল, সরকার চাইলে এই নিবার্চন ভালো হবে।’ খুলনা ও গাজীপুর সিটি নিবার্চনে উল্টোটা ঘটেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা একটা জিনিস দেখেছি, সিল মারা হচ্ছে, পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে, তারা কিছু বলছে না। নিবার্চনী দায়িত্বে যারা প্রিসাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার, তারাও কিছু বলছেন না। তার মানে যাদের যে দায়িত্ব ছিল, সে দায়িত্ব তারা ঠিকভাবে পালন করছেন না। ‘তার মানে একই নিবার্চন কমিশন প্রথম সফল হচ্ছে, আবার একই নিবার্চন কমিশনের অধীনে তাদের যারা সহযোগী তারা ঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করছেন না। আমাদের কাছে মনে হয়েছে, এখানে সরকারের দিক থেকে যদি বাতার্টা ঠিকভাবে যায়, তবে তারা ঠিকভাবে পালন করেন, না গেলে তারা ঠিকভাবে কাজ করেন না।’ কে এম নূরুল হুদা নেতৃত্বাধীন বতর্মান নিবার্চন কমিশনকে ‘সরকারের আজ্ঞাবহ’ বলে আসছে বিএনপিও। তা প্রত্যাখ্যান করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, ইসির কাজে কোনো হস্তক্ষেপ করছে না সরকার। সংবাদ সম্মেলনে সুজন সভাপতি হাফিজউদ্দিন সুষ্ঠু নিবার্চন নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে বলেন, ‘একটা উদাহরণ দেব, সিলেটে একজনকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে গেল ... পুলিশ স্বীকারই করে না। পরে প্রাথীর্ অবস্থানের পর স্বীকার করল, বলল, আমরা তাকে রেগুলার মামলায় অ্যারেস্ট করেছি। নিবার্চনের সময় দেখা যাচ্ছে, কারও বিরুদ্ধে মামলা ছিল ছয় মাস আগে, এক বছর আগে। এতদিন তাদের ধরে নাই, এখন ধরতেছে। এটাকে তো উদ্দেশ্যমূলক বলব।’ আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এক কথায় বলতে গেলে, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড দেখা যাচ্ছে না। কারণ আজকের পত্রিকায় দেখলাম, প্রধানমন্ত্রীর প্রাইভেট সেক্রেটারি নিবার্চনী প্রচারে অংশ নিচ্ছে। সরকারি কমর্কতার্রা নিবার্চনী প্রচারে অংশ নিতে পারবেন না। ‘বরিশালের মেয়র ক্যান্ডিডেট সরওয়ার সাহেব, ওনার বাড়ির সামনে পুলিশ বসে আছে। তারা বলছে, সন্ত্রাসীদের আনাগোনার জন্য সেখানে পুলিশ আছে। কিন্তু আগে সন্ত্রাসের আনাগোনা ছিল না? তা থাকলে আগে থেকে করার দরকার ছিল। ইলেকশন কমিশনের যে দায়িত্ব, লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড প্রতিষ্ঠা করা, সেটা এখনও তারা করতে পারেনি।’ খুলনা ও গাজীপুরের নিবার্চন নিয়ে হাফিজউদ্দিন বলেন, ‘সেখানে সহিংসতা রিপোটের্ড হয়নি। গাজীপুরেই তো যা ভোট তার চেয়ে বেশি প্রিসাইডিং অফিসার লিখেছে ... তার বিরুদ্ধে কি ইলেকশন কমিশন কোনো অ্যাকশন নিয়েছে? আমরা তো শুনি নাই। জাল ভোট দেয়া হয়েছেÑ আপনারাই রিপোটর্ করেছেন।’ ‘এখন সরকারকে বলতে হবে, আমরা সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নিবার্চন করতে চাই। এটা ডেমোনেস্ট্রেট করতে হবে, যাতে দেশবাসী বোঝে, ইলেকশন কমিশন বোঝে, ভোটাররা বোঝে’Ñবলেন ২০০১ সালের তত্ত¡াবধায়ক সরকারে দায়িত্ব পালনকারী হাফিজউদ্দিন। সুজনের নিবার্হী সদস্য স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ তোফায়েল আহমেদ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘এখন যে নিবার্চনগুলো হচ্ছে, তা একটি বিশেষ মডেলের দিকে যাচ্ছে। এটা ভালোভাবে ব্যাখ্যা করা যাচ্ছে না। কী হচ্ছে, কীভাবে হচ্ছেÑএটা ভালোভাবে এক্সপ্লেইন করা যাচ্ছে না।’ নিজের বক্তব্যের ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, ‘একটা সংশয়, সন্দেহ, অবিশ্বাস থেকে যাচ্ছে। মানুষ মারা যায়নি আগের মতো, সহিংসতা হয়নি। কোনো ক্ষেত্রে দিনের ভোট রাতে হয়ে যাচ্ছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে লাইন থেকে যাচ্ছে, ভোট হয়ে যাচ্ছে। কোনো ক্ষেত্রে লাইন নেই, কাজ হয়ে যাচ্ছে। দেখা যাচ্ছে, ২ লাখ ভোট পাচ্ছে একজন প্রাথীর্, কিন্তু তার কোনো এজেন্ট নাই। ‘দুই লাখ ভোট যে প্রাথীর্ পায়, সে এজেন্ট দিতে পারে না! কেন পারে না? তার এজেন্টরা কেন যায় না, সেটা আনএক্সপ্লেইনেবল। এটা কি ভয়ের মডেল নাকি, আমি বলতে পারব না। নাকি মানুষ ভোটের ক্ষেত্রে উদাসীন হয়ে যাচ্ছেÑসেজন্য হচ্ছে। নাকি একটি বিশেষ দল আগ্রাসী হয়ে গেছে, সেজন্য হচ্ছে।’ রাজশাহী, বরিশাল ও সিলেটের প্রতিদ্ব›দ্বী প্রাথীের্দর হলফনামায় দেয়া তথ্যাবলি বিশ্লেষণ করে সুজনের সমন্বয়ক দিলীপ কুমার বলেন, সরকারের সহযোগিতা না পাওয়া গেলে নিবার্চন কমিশনের পক্ষে সুষ্ঠু নিবার্চন আয়োজন কখনই সম্ভব হবে না। তাই বিষয়টি নিয়ে সরকারের সঙ্গে বোঝাপড়া করা উচিত নিবার্চন কমিশনের। ‘যদি ইতিবাচক সাড়া পাওয়া না যায়, তবে প্রশ্নবিদ্ধ নিবার্চনের দায় না নিয়ে, আগেই নিবার্চন আয়োজনে অপারগতা প্রকাশ করা উচিত কমিশনের।’