ফিরে দেখা ২০২৪

বিশ্বে যুদ্ধ ছড়িয়ে পড়ার বছর

প্রকাশ | ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
সময়ের পরিক্রমায় মানব সভ্যতার বয়সে যুক্ত হলো আরেকটি বছর। মানব সভ্যতার বয়স বাড়লেও মানবিক সভ্যতার বয়স বেড়েছে কি না, সেই প্রশ্ন নিয়েই শেষ হচ্ছে ২০২৪ সাল। বিভিন্ন ঘটনার ঘনঘটা থাকলেও বছরটিকে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছিল যুদ্ধ। পশ্চিম এশিয়ার দেশগুলোতে উত্তেজনা বেড়ে ভূরাজনৈতিক অনিশ্চয়তা বেড়েছে। এ অঞ্চলে চারটি যুদ্ধে এবছর লিপ্ত থেকেছে ইসরায়েল। গাজায় ফিলিস্তিনের মুক্তিকামী গোষ্ঠী হামাসের সঙ্গে ইসরায়েলের যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে গিয়ে ইসরায়েল-হিজবুলস্নাহ যুদ্ধ থেকে ইসরায়েল-ইরান এমনকি ইসরায়েল-ইয়েমেন সংঘাতের রূপ নিয়েছে। সিরিয়ায় বিদ্রোহীদের ঝড়ো আক্রমণের মুখে পতন হয়েছে বাশার আল-আসাদের দীর্ঘদিনের শাসনের। গণ অভু্যত্থানে বাংলাদেশেও শেখ হাসিনার ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটেছে। মিয়ানমারে যুদ্ধ পরিস্থিতি অবনতির দিকে গেছে। দু'বছরের বেশি সময় ধরে চলতে থাকা রাশিয়ার সঙ্গে ইউক্রেইনের যুদ্ধে এবছরও অধরা থেকেছে শান্তির আশা। সংঘাতের এই বাড়-বাড়ন্তের মধ্যেও এবছর নির্বাচনী ডামাডোল ছিল বিশ্বের ৬০টির বেশি দেশে। যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প এবার বিপুল জয় নিয়ে ফের নির্বাচিত হয়েছেন। যুক্তরাজ্যে দীর্ঘ টোরি শাসনের অবসানে ক্ষমতায় এসেছে লেবার পার্টির সরকার। অনেকগুলো প্রাকৃতিক দুর্যোগ এবছরও সংবাদ শিরোনাম হয়েছে। মক্কায় হজ চলাকালে তীব্র উত্তাপে বহু মানুষের মৃতু্যও উলেস্নখযোগ্য ঘটনা হিসেবে সামনে এসেছে। গাজা যুদ্ধ : আগের বছরের ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনি ছিটমহল গাজার সীমান্ত সংলগ্ন ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের নজিরবিহীন হামলার জেরে শুরু হওয়া গাজা যুদ্ধ ২০২৪ এর পুরোটা জুড়ে চলেছে। নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির শুরুর দিকে ইসরায়েলি হামলায় গাজায় নিহত ফিলিস্তিনির সংখ্যা ছিল প্রায় ২৩০০০, কিন্তু জুলাইয়ের শেষ দিকে এ সংখ্যাটি ৪০০০০ ছুঁই ছুঁই ছিল। আর বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরের শেষ দিকে তা ৪৫ হাজার ছাড়িয়ে যায়। জাতিসংঘের আনুমানিক হিসাব অনুযায়ী, নিহতদের অধিকাংশই বেসামরিক আর তাদের মধ্যে ৫৬ শতাংশ নারী ও শিশু। হিজবুলস্নাহ-ইসরায়েল যুদ্ধ : গাজা যুদ্ধে হামাসের প্রতি সমর্থন জানিয়ে প্রায় এক বছর ধরে (২০২৩ এর ৮ অক্টোবর থেকে) ইসরায়েলের উত্তর সীমান্তবর্তী অঞ্চলে রকেটে, ক্ষেপণাস্ত্র ও বিস্ফোরকবাহী ড্রোন হামলা চালিয়ে আসছিল ইরান সমর্থিত লেবাননি গোষ্ঠী হিজবুলস্নাহ। ইসরায়েলেও পাল্টা গোলা ছুড়ে ও বিমান হামলা চালিয়ে জবাব দিয়ে আসছিল। কিন্তু চলতি বছরের ২৭ জুলাই ইসরায়েল অধিকৃত গোলান মালভূমিতে রকেট হামলায় ১২ শিশু ও কিশোর নিহত হওয়ার পর এই পাল্টাপাল্টি সংঘাত আরও তীব্র হওয়ার দিকে মোড় নেয়। গোলান মালভূমিতে হামলার ঘটনায় হিজবুলস্নাহর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেওয়ার অঙ্গীকার করে ইসরায়েল। এর জের ধরে ৩০ জুলাই ইসরায়েলের প্রতিশোধমূলক বিমান হামলায় হিজবুলস্নাহর ঊর্ধ্বতন কমান্ডার ফুয়াদ শোকর নিহত হন। গোলানে হামলার জন্য শোকরকে দায়ী করেছিল ইসরায়েল। শোকর হত্যার প্রতিশোধ নিতে অগাস্টের শেষ দিকে ইসরায়েলে তিনশরও বেশি রকেট ও ড্রোন যোগে হামলা চালায় হিজবুলস্নাহ। ইসরায়েলে রকেট ও ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে হিজবুলস্নাহ, ইসরায়েলি সামরিক বাহিনীর এমন মূল্যায়নের ভিত্তিতে এর আগে দক্ষিণ লেবাননে হিজবুলস্নাহর অবস্থানগুলো লক্ষ্য করে ব্যাপক বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। এর মাধ্যমে কমান্ডার শোকর হত্যার প্রতিশোধমূলক আক্রমণের 'প্রথম পর্যায়' সম্পন্ন হয়েছে বলে জানায় হিজবুলস্নাহ। ফুয়াদ হত্যার পূর্ণ জবাব দিতে 'আরও কিছু সময়' লাগতে পারে বলে জানায় তারা। ইরান-ইসরায়েল সংঘাত : গাজা যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে যে উত্তেজনা তৈরি করেছিল তা হিজবুলস্নাহ-ইসরায়েলের যুদ্ধে রূপ নেওয়ার এক পর্যায়ে ইসরায়েলের সঙ্গে সরাসরি সংঘাতে জড়ায় আঞ্চলিক শক্তি ইরান। ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্কে ইরানি কনসু্যলেটে বিমান হামলায় দেশটির সামরিক বাহিনীর দুই ব্রিগেডিয়ারসহ ১৬ কর্মকর্তা নিহত হন। নিহতদের মধ্যে ইরানের রেভলু্যশনারি গার্ডের শীর্ষ কয়েকজন কমান্ডার ছিলেন। এই হামলার জন্য ইসরায়েলকে দায়ী করে এর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রত্যয় জানায় ইরান। প্রায় দুই সপ্তাহ পর ১৩ এপ্রিল মধ্যরাতের দিকে ইসরায়েল লক্ষ্য করে ব্যাপক ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন হামলা চালায় ইরান। ইসরায়েলে হামলা চালাতে ইরান প্রায় ১৭০টি ড্রোন, ৩০টিরও বেশি ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ১২০টিরও বেশি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষা বাহিনী তাদের উন্নত ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী পদ্ধতি ব্যবহার করে এগিয়ে আসতে থাকা বহু অস্ত্র ধ্বংস করে। মার্কিন, ব্রিটিশ ও জর্ডানের বিমান বাহিনীও গুলি করে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ভূপাতিত করে। এই জোট ইরানের ছোড়া ৯৯ শতাংশ অস্ত্র ইসরায়েলি আকাশসীমায় প্রবেশ করার আগেই ধ্বংস করেছে বলে দাবি করে ইসরায়েল। ইয়েমেন-ইসরায়েল সংঘাত : বছরের শেষ দিকে এসে ইয়েমেনে বড় ধরনের হামলা চালায় ইসরায়েল। এতে কমপক্ষে ৯ জন মারা যায়। ইয়েমেনের 'সামরিক স্থাপনায়' এ হামলা হয়। এর মধ্যে ছিল রাজধানী সানা, বন্দর ও জ্বালানি অবকাঠামো। ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে এ হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করে ইসরায়েল। ওদিকে, হুতি গোষ্ঠী এর আগে জানিয়েছিল, তারা ইসরায়েলের মধ্যাঞ্চলীয় শহর জাফার একটি সামরিক লক্ষ্যের উদ্দেশ্যে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। এই নিয়ে এক সপ্তাহের মধ্যে তারা ইসরায়েল লক্ষ্য করে দু'টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ে বলে ধারণা হয়। ইরানের সমর্থন পাওয়া ইয়েমেনের হুতিরা ইসরায়েলের দিকে বারবার ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে আসছে। গাজার ফিলিস্তিনিদের প্রতি সংহতি জানিয়ে তারা এসব হামলা চালাচ্ছে বলে দাবি হুতিদের। বাশার আল আসাদের পতন : বিশ্বকে চমকে দিয়ে বছরের শেষ দিকে সিরিয়ার বিদ্রোহীরা মাত্র ১২ দিনের এক বিদু্যৎগতির আক্রমণে রাজধানী দামেস্ক দখল করে দীর্ঘদিনের শাসক বাশার আল-আসাদের পতন ঘটায়। এর মাধ্যমে সিরিয়ায় আসাদ পরিবারের অর্ধ শতাব্দীর এবং বার্থ পার্টির ৬১ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। বাশার আল-আসাদ ছেড়ে পালিয়ে মস্কো চলে যান, সেখানে রাজনৈতিক আশ্রয় পান তিনি। ১৩ বছর ধরে গৃহযুদ্ধ চলার পর সিরিয়ার বিদ্রোহীরা প্রেসিডেন্ট আসাদকে পরাজিত করার মতো সুযোগ পায়। ইসরায়েলের সঙ্গে যুদ্ধ ও সংঘাতে লেবাননের হিজবুলস্নাহ ও ইরানের দুর্বল হয়ে পড়ার সুযোগে বিদ্রোহীরা আক্রমণ শানায়। বিদ্রোহীদের জোট ছয় মাস আগেই তাদের পরিকল্পনা নিয়ে তুরস্কের সঙ্গে যোগাযোগ করে এবং মৌন সমর্থন পেয়েছে বলে বুঝতে পারে। এই জোটের নেতৃত্বে থাকা প্রধান উপদল হায়াত তাহরির আল-শামকে (এইচটিএস) তুরস্ক জঙ্গি সংগঠন হিসেবে বিবেচনা করলেও অন্য উপদল সিরিয়ান ন্যাশনাল আর্মি (এসএনএ) আঙ্কারার সমর্থনপুষ্ট। আসাদ পরিবারের পতন মধ্যপ্রাচ্যে ইরানের প্রভাবের জন্য এক বড় ধাক্কা। ইসরায়েলের হাতে হাসান নাসরালস্নাহ খুন ও হিজবুলস্নাহ দুর্বল হওয়ার মধ্য দিয়ে ইরানের প্রভাবে ক্ষুণ্‌ন হতে শুরু করার পর দ্রম্নতই আসাদের পতন হয়। মাটি হারাচ্ছে মিয়ানমারের জান্তা : মিয়ানমারের শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জয়ী নেত্রী অং সান সু চির নেতৃত্বাধীন নির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতাচু্যত করে ২০২১ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে দেশটির নিয়ন্ত্রণ নেয় সামরিক বাহিনী। তারপর থেকেই মিয়ানমারজুড়ে অস্থিরতা চলছে। সামরিক অভু্যত্থান বিরোধী বিক্ষোভ জান্তা সরকার রক্তপাতের মধ্য দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করার পর এর বিরোধীরা অস্ত্র তুলে নিয়ে সশস্ত্র বিদ্রোহ শুরু করে। মিয়ানমারে বিভিন্ন দিক থেকে জান্তাবিরোধী একাধিক বিদ্রোহী গোষ্ঠী গণতন্ত্রপন্থি সরকারের সমর্থনে জান্তার বিরুদ্ধে লড়াই করছে। এই বিদ্রোহীদের কাছে অনেক শহর ও সামরিক ফাঁড়ি খুইয়েছে জান্তা। ইউক্রেইন যুদ্ধ : ২০২২ সালের ফেব্রম্নয়ারিতে শুরু হওয়া ইউক্রেইন যুদ্ধ ২০২৪ এ দ্বিতীয় বছর পার করে তৃতীয় বছরে পড়ে। বছরজুড়ে চলা এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও ওয়াশিংটনের নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট নেটো ইউক্রেইনকে অবিরাম আধুনিক অস্ত্র সরবরাহ করে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ চালিয়ে নিতে সহায়তা করে। অপরদিকে রাশিয়াকে ইরান সামরিক ড্রোন সরবারহ অব্যাহত রাখে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য অবরোধের মধ্যেও চীনের সমর্থনে রাশিয়া তাদের অত্যাধুনিক যুদ্ধোপকরণের উৎপাদন অব্যাহত রাখতে সক্ষম হয়। বছরের শেষ দিকে ইউক্রেইনের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে রাশিয়ায় উত্তর কোরিয়ার সেনা পাঠানোর প্রতিক্রিয়ায় কিইভকে যুক্তরাষ্ট্রের সরবরাহ করা দীর্ঘ পালস্নার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে রাশিয়ার গভীরে আঘাত হানার জন্য ওয়াশিংটনের দেওয়া অনুমতিতে যুদ্ধের তীব্রতা উলেস্নখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়। যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্সে পরিবর্তনের হাওয়া : যুক্তরাজ্যের ৪ জুলাইয়ের সাধারণ নির্বাচনে বিপুল বিজয় পায় কিয়ার স্টারমারের নেতৃত্বাধীন লেবার পার্টি। এতে দেশটিতে টানা ১৪ বছর ধরে চলা টোরি শাসনের অবসান হয়। যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ হাউস অব কমন্সের ৬৫০টি আসনের মধ্যে সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজন অন্তত ৩২৬টি। সেখানে ৪১০টি আসন জিতে নিয়ে নিরঙ্কুশ জয় পেয়ে মধ্য বামপন্থি দল লেবার পার্টি সরকার গঠন করে। ভোটের প্রচারে পরিবর্তনের ডাক দেওয়া ৬১ বছর বয়সি স্টারমার বিপুল বিজয়ের পর ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, যুক্তরাজ্যে 'পরিবর্তনের সূচনা' হল। ২০১০ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা রক্ষণশীলদের যে ভরাডুবি হতে চলেছে, তা অনুমিতই ছিল। ৬৩৮টি আসনের ঘোষিত ফলাফলে প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাকের দল কনজারভেটিভ পার্টি পায় মাত্র ১১৭টি। অর্থাৎ প্রায় আড়াইশ আসন তারা হারায়। ওদিকে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্যতম নেতৃস্থানীয় দেশ ফ্রান্সের পার্লামেন্ট নির্বাচনের আনুষ্ঠানিক ফলাফলে কট্টর ডানপন্থিদের হতাশ করে জয় পায় বামপন্থিরা। ট্রাম্পের ঐতিহাসিক প্রত্যাবর্তন : হোয়াইট হাউজ ছেড়ে যাওয়ার চার বছর পর ফের অবিশ্বাস্য প্রত্যাবর্তনে পুরো বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ডনাল্ড ট্রাম্প। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক ইতিহাসে একে সবচেয়ে নাটকীয় প্রত্যাবর্তন বলছেন কেউ কেউ। এখন থেকে আট বছর আগে (২০১৬) যেবার প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে দাঁড়িয়েছিলেন, বিশ্বের খুব কম লোকই তখন ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিলারি ক্লিনটনের পরিবর্তে তাকে নিয়ে বাজি ধরেছিল। কিন্তু 'রাজনৈতিক ভূমিকম্পের' বছর হিসেবে পরিচিতি পাওয়া ওই সময়ে ট্রাম্প ভূমিকম্পের মতোই নতুন যুগের সূচনা করে ক্ষমতায় এসেছিলেন। এই প্রত্যাবর্তন স্বপ্নের মতো হলেও কলঙ্ক তার পিছু ছাড়েনি। গুরুতর অপরাধের দোষী সাব্যস্ত হওয়া প্রথম প্রেসিডেন্ট হয়ে আরেক ইতিহাস তৈরি করতে যাচ্ছেন তিনি। দক্ষিণ এশিয়ায় পরিবর্তনের হাওয়া : বাংলাদেশে এক অভূতপূর্ব গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে ৫ অগাস্ট শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকারের দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ব্যাপক গণরোষের কারণে ভীত প্রধানমন্ত্রী হাসিনাকে দ্রম্নততম সময়ের মধ্যে দেশ ছেড়ে যাবার সিদ্ধান্ত নিতে হয়। সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে ৩৬ দিন আগে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন শুরু হয়েছিল তা সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হওয়ার পর দেশজুড়ে সংঘাত আর আট শতাধিক মানুষের মৃতু্যর মধ্যে দিয়ে শেখ হাসিনাকে ক্ষমতা ছাড়তে হয়। এভাবে প্রবল গণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের সাড়ে ১৫ বছরের শাসনের অবসান ঘটে। ৮ অগাস্ট নোবেল পুরস্কার জয়ী মুহাম্মদ ইউনুস বাংলাদেশের অন্তর্র্ব‌তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব নেন। ১৯ এপ্রিল থেকে ১ জুন পর্যন্ত সাত দফায় ভারতের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ নির্বাচনে লোকসভায় ক্ষমতাসীন দল বিজেপি এক সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারায়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন জোট ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক অ্যালায়েন্স (এনডিএ) সরকার গঠনের জন্য প্রয়োজনীয় ২৭২টির চেয়ে বেশি আসন (২৯৩টি) পেলেও মোদীর ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আর আগের দুইবারের মতো (২০১৪, ২০১৯) একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি, এবার তারা পায় ২৪০টি আসন। ৩০ জানুয়ারি পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা ফাঁস করার দায়ে ১০ বছর কারাদন্ড দেওয়া হয়। এর ৮ ফেব্রম্নয়ারি অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে ইমরানের নেতৃত্বাধীন নিষিদ্ধ ঘোষিত রাজনৈতিক দল পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ পার্টির (পিটিআই) সদস্যরা স্বতন্ত্রপ্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে সবচেয়ে বেশি আসনে জয় পান। কিন্তু দল নিষিদ্ধ থাকায় তারা সরকার গঠন করতে পারেননি। সামরিক বাহিনীর নেতৃত্বে নির্বাচনে কারচুপি হয়েছে এমন অভিযোগের মধ্যেই পাকিস্তান মুসলিম লীগ (পিএমএল-এন) এর নওয়াজ শরীফ জয় দাবি করেন। এ বছরের আরেক উলেস্নখযোগ্য রাজনৈতিক হওয়া বদলের ঘটনা ঘটে শ্রীলঙ্কায়। ইতিহাস সৃষ্টি করে সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে জয়ী হন বামপন্থি প্রার্থী অনুরা কুমারা দিশানায়েকে। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েই দিশানায়েকে পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের ডাক দেন। নভেম্বরে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকের ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার জোট নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে।