চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের বার্ন ইউনিট নির্মাণ প্রকল্পে পাহাড় কাটার অভিযোগ ওঠায় বিষয়টি নিয়ে মুখ খুললেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তছলিম উদ্দীন। তিনি পাহাড় কাটার কথা স্বীকার করেন এবং এ বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেওয়া হয়নি বলে জানান। বিষয়টি নজরে আসার পরপরই স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও পরিবেশ উপদেষ্টার নির্দেশে কাজ বন্ধ রাখা হয়। আমরা পরিবেশে অধিদপ্তরের কাছে ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করবো। ছাড়পত্র পেলে সে অনুযায়ী কাজ করবো।
বুধবার চমেক হাসপাতাল পরিচালকের সভাকক্ষে অংশীজনদের সঙ্গে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেন হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তছলিম উদ্দীন।
মতবিনিময় সভায় চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. তসলিম উদ্দিন বলেন, অভিযোগ আসার পর থেকেই আমরা কাজটি বন্ধ রেখেছি। বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় নিউজ হওয়ার পর রিজওয়ানা ম্যাডাম স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ম্যাডামকে কল দিয়ে বিষয়টি জানায়। এরপর স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ম্যাডাম আমাকে কল দিয়ে পাহাড়ে যে কাজটি চলছে সেটা বন্ধ রাখতে বলেন। পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি নিয়েই পরে কাজ শুরু করার জন্য বলেন আমাকে।
তসলিম উদ্দিন বলেন, আমরা আপাতত এটার কাজ বন্ধ রেখেছি। এপ্রুভ হলেই আমরা কাজ শুরু করব। অনুমতি না নেওয়া আমাদের ভুল হয়েছে। এটা প্রক্রিয়াধীন আছে। ম্যাডাম বলেছে আপাতত কাজ স্টপ রাখতে। তাই স্টপ রেখেছি। চমেক পরিচালক তসলিম বলেন, ভৌত অবকাঠামোগত কাজ করার আগে ঝুঁকিপূর্ণ পাহাড়কে ঢালু আকারে কেটে এতে চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার করে কলাম বসানো হবে। এর ফলে ভবিষ্যতে পাহাড় ধসের শঙ্কা কমে আসবে। যে জায়গায় পাইলিং করা হবে সেখানে উন্নতমানের ঘাস লাগানো হবে। যাতে বৃষ্টি হলে তা গড়িয়ে ড্রেনেজ ব্যবস্থার মাধ্যমে নিষ্কাশন করা যায়।
তিনি আরও বলেন, এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছে ২ বছর। কিন্তু চীনা প্রতিনিধি দল নির্ধারিত সময়ের আগে এই কাজ শেষ করে ফেলতে পারবে বলে জানিয়েছে। তাদের হিসেব অনুযায়ী, ২০২৬ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। পরিবেশবাদী সংগঠন বেলা চট্টগ্রামের ফিল্ড অফিসার ফারমিন এলাহী বলেন, গত বছরও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে একটি বৈঠক হয়েছিল। তখন তারা বলেছিলেন, পাহাড় রক্ষা করে কাজ করবেন। আজ আবার তারা বলছেন, পাহাড় ধসে পড়ার কারণে তারা পরিকল্পনায় পরিবর্তন এনেছেন। যেকোনও প্রকল্প করতে হলে পরিবেশগত প্রভাব পর্যালোচনা (ইআইএ) করতে হয়। কিন্তু ইআইএ না থাকায় আমরা অবাক হয়েছি। চমেক হাসপাতালের মতো একটি দায়িত্বশীল প্রতিষ্ঠান থেকে এ ধরনের অবহেলা আশা করা যায় না। কর্তৃপক্ষের কাছে অনুরোধ রাখা হয়েছে, সৌন্দর্যবর্ধক গাছের সঙ্গে দেশিয় প্রজাতির গাছও লাগাতে হবে।
প্রকল্পের চীনা প্রতিনিধি দলেন প্রধান মে ইইউ চ্যং বলেন, পাহাড়টা দেখার পর মনে হয়েছে- পাশে ভবন হলে জায়গাটি নিরাপদ হবে না। কারণ ভবনে বেইজ করার সময় পাহাড় ধসে পড়ার সম্ভাবনা থাকে। পাহাড়ের মাটিগুলো খুবই নরম। পানির স্পর্শ পেলে নিচের দিকে চলে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রকৌশলীরা সয়েল নেইলিং প্রযুক্তির মাধ্যমে পাহাড়টি ড্রেসিং করে কলাম বসিয়ে কাজ করবে এবং সেখানে ঘাস রোপণ করা হবে।
জানা যায়, নগরের চট্টেশ্বরী সড়কের গোয়াছিবাগান এলাকায় চমেক ছাত্রাবাস সংলগ্ন পাহাড়ে ১৫০ শয্যার বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি হাসপাতাল নির্মাণের জন্য পাহাড় কাটার অনুমতি চেয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরের কাছে আবেদন করেছিল চমেক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু অনুমতি পাওয়ার আগেই পাহাড় কেটে সেখানে প্রকল্পের কাজ শুরু করে দেওয়া হয়। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়ে চমেক কর্তৃপক্ষ। পাহাড়ের কিছু অংশ কাটার পর বিষয়টি নজরে আসে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নুরজাহান বেগম ও পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের।
প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৯ মে একনেকে অনুমোদন পায় ১৫০ শয্যার বার্ন অ্যান্ড পস্নাস্টিক সার্জারি ইউনিট নির্মাণ প্রকল্প। নগরের চট্টেশ্বরী রোডে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ ছাত্রাবাসের পশ্চিমে গোয়াছি বাগান এলাকায় ২৮৫ কোটি টাকার এ প্রকল্পের মধ্যে চীন সরকার অর্থায়ন করবে ১৮০ কোটি টাকা এবং বাংলাদেশ সরকার দেবে ১০৫ কোটি টাকা। প্রকল্পের আওতায় একটি ছয়তলা ভবন নির্মিত হবে।