তিন গাড়িতে আগুন

সাভারে পুড়ে মারা গেলেন অ্যাম্বুলেন্সে থাকা ৪ জন

টাঙ্গাইলে নিহতদের বাড়িতে শোকের মাতম

প্রকাশ | ১০ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
বুধবার ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পুলিশ টাউন এলাকায় দুটি যাত্রীবাহী বাসের সংঘর্ষে দুমড়ে মুচড়ে ও পুড়ে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্স -সংগৃহীত
সাভারে একটি অ্যাম্বুলেন্স ও দুটি যাত্রীবাহী বাসে অগ্নিকান্ড ঘটেছে। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। তবে ততক্ষণে অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে থাকা চার জন পুড়ে মারা যান। নিহতদের মধ্যে দুজন পুরুষ, একজন নারী ও একজন শিশু। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন অন্তত সাত জন। বুধবার রাত পৌনে ২টার দিকে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের পুলিশ টাউন এলাকায় এই অগ্নিকান্ড ঘটে। নিহতরা একই পরিবারের। ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, রাত পৌনে ২টার দিকে ঢাকাগামী একটি অ্যাম্বুলেন্স নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুলিশ টাউনের সামনে আইল্যান্ডে ধাক্কা লাগে। এ সময় পেছন দিক থেকে আসা একটি বাস ওই অ?্যাম্বুলেন্সকে ধাক্কা দেয়। একই সময় পাশে থাকা শ?্যামলী পরিবহনের অপর একটি বাসের মধ্যেও সংঘর্ষ হয়। এ সময় হঠাৎ করেই অ?্যাম্বুলেন্সে আগুন ধরে যায়। পরে পাশে থাকা দুটি যাত্রীবাহী বাসেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। তবে বাসের যাত্রীরা নিরাপদে নামতে পারলেও অ্যাম্বুলেন্সের ভেতরে আটকা পড়েন চার জন। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় অ্যাম্বুলেন্সের ভেতর থেকে চার জনের পোড়া মরদেহ উদ্ধার করা হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করে সাভার ফায়ার সার্ভিসের ওয়ার হাউস ইন্সপেক্টর মেহেরুল ইসলাম বলেন, 'খবর পেয়ে দ্রম্নত ঘটনাস্থলে পৌঁছে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এক ঘণ্টা চেষ্টার পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এ সময় বাসের যাত্রীরা নিরাপদে নেমে গেলেও অ?্যাম্বুলেসের ভেতরে থাকা চার জন পুড়ে মারা যান। তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।' নিহতদের বাড়িতে শোকের মাতম স্টাফ রিপোর্টার, টাঙ্গাইল ও ঘাটাইল (টাঙ্গাইল) প্রতিনিধি জানান, সাভারে অ্যাম্বুলেন্সে আগুনের ঘটনায় নিহত চারজন একই পরিবারের সদস্য। তাদের বাড়ি টাঙ্গাইলের ঘাটাইল উপজেলার ভবনদত্ত গ্রামে। নিহতরা হচ্ছেন- ভবন দত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এএইচ ফারুক সিদ্দিকী, তার স্ত্রী মহসিনা খন্দকার, ছেলে মোহাইমিন সিদ্দিকী ফুয়াদ ও স্ত্রীর বড় বোন সীমা খন্দকার। নিহত শিক্ষকের ছোট ভাই কম্পিউটার ব্যবসায়ী মো. মামুন সিদ্দিকী ও মা নুরুন্নাহার প্রিয় সন্তান আর স্বজনের মৃতু্য সংবাদে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েন। বার বার মুর্চ্ছা যাচ্ছেন তারা। সোমা সিদ্দিকী কাঁদতে কাঁদতে বলেন, 'আমার সঙ্গে সর্বশেষ কথা হয় রাত ১১টায়। তার পর থেকেই তাদের মোবাইল বন্ধ। আমাদের এক আত্মীয় দুর্ঘটনার কথা শুনে হাইওয়ে থানায় গিয়ে লাশ শনাক্ত করেন।' বৃহস্পতিবার সকালে সরেজমিনে ভবনদত্ত গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে চারটি খাটিয়া সাজিয়ে রাখা হয়েছে। নিহতদের লাখ তখনও বাড়িতে এসে পৌঁছেনি। বাড়ির ছোট ছেলে ফাহিম সিদ্দিকী এখনও জানে না তার স্বজনরা মারা গেছেন। ফুয়াদ ঊঠানে খেলছে আর আনমনে খাটিয়ার দিকে তাকাচ্ছে। পরিবারের সদস্যরা জানান, বাড়ির বড় ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী কিছুদিন থেকে অসুস্থ। শরীরে রক্ত কমে গেছে। চিকিৎসার জন্য গত রাতে ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকীসহ পরিবারের চার সদস্য অ্যাম্বুলেন্সে করে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। ৩টার দিকে সাভারে বাসের সঙ্গে অ্যাম্বুলেন্সের সংঘর্ষ হয়। এতে অ্যাম্বুলেন্সে থাকা একই পরিবারের চারজন নিহত হন। নিহত ফারুখ হোসেন সিদ্দিকীর ছোট ভাই মামুন সিদ্দিকী জানান, তারা তিন ভাই এক বোন। বোন সবার বড়। তিনি ইতালি প্রবাসী। বড় ভাই ফারুখ সিদ্দিকী ভবনদত্ত সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন। তার বড় ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী স্থানীয় ভবনদত্ত গণ উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। হঠাৎ করেই কিছুদিন থেকে সে অসুস্থ। শরীরে রক্ত কমে যায়। তবে থ্যালাসেমিয়া নয়। ঢাকায় ডাক্তার দেখানোর জন্য গত রাত ১১টার দিকে টাঙ্গাইলের গোপালপুর উপজেলা থেকে ছেলে ফুয়াদ সিদ্দিকী ও তার বোনকে নিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে রওনা দেন ঢাকার উদ্দেশে। ঘাটাইল উপজেলার হামিদপুর থেকে অ্যাম্বুলেন্সে ওঠেন ফারুখ সিদ্দিকী। ফারুখ সিদ্দিকীর সহকর্মী মো. রুবেল মিঞা জানান, প্রধান শিক্ষক খুব নীতিবান মানুষ ছিলেন। এমন একজন মানুষের মৃতু্যতে এলাকায় শোকের ছায়া নেমে এসেছে। খবর পেয়ে তারা সবাই ওই বাড়িতে এসেছেন। এমন শিক্ষক আর হবে না। তাদের সবসময় আগলে রাখতেন তিনি। দেওপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান রুহুল আমিন হেপলু জানান, রাতে তিনি ফারুখ সিদ্দিকীকে অ্যাম্বুলেন্সে তুলে দিয়ে বাড়ি ফেরেন। তারা একসঙ্গে চা পান করেছেন। তার ভাষ্য, 'এলাকায় ফারুখ সিদ্দিকীর মতো ভালো মানুষ আর হবে না। তার মৃতু্যতে কাঁদছে পুরো গ্রামের মানুষ।'