সংসদে কোনো নারী কোটা থাকা যাবে না -ইসলামী আন্দোলন

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শুক্রবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে 'ইসলামী যুব আন্দোলনের' কনভেনশনে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানান চরমনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম -যাযাদি
জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য কোনো সংরক্ষিত আসন দেখতে চান না বাংলাদেশ ইসলামী আন্দোলনের নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। তিনি বলেন, নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসন রাখা হলে তাদের দুর্বল ভাবা হয়। শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ইসলামী আন্দোলনের যুব সংগঠন 'ইসলামী যুব আন্দোলনের' কনভেনশনে এসব কথা বলেন তিনি। সমাবেশ ফয়জুল করীম বলেন, 'সংসদে ৫০৫টা আসন রাখা হয়েছে (সংস্কার কমিশনের সুপারিশে)। আসন কম হোক, বেশি হোক, সব জায়গায় নির্বাচনের ভিত্তিতে সংসদ সদস্য নির্বাচন হতে হবে।' সংবিধান সংস্কারে অন্তবর্তীকালীন সরকারের গঠিত কমিশন যেসব সুপারিশ করেছে, তাতে দুই কক্ষবিশিষ্ট সংসদের কথা বলা হয়েছে, যেখানে আসন থাকবে ৫০৫টি। এর মধ্যে নিম্নকক্ষে থাকবে ৪০০টি আসন। এর মধ্যে ১০০টি নারীদের জন্য সংরক্ষিত থাকবে। এই সুপারিশ প্রসঙ্গে ফয়জুল করীম বলেন, 'নারীদের জন্য সংরক্ষিত একশ আসন, এটা আমরা মানি না। নারীদের জন্য এই আসন রাখা হলে তাদের দুর্বল ভাবা হয়। আমরা তো কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলাম। তাহলে এখানে নারীদের জন্য কোটা রাখা হলে বলতে হবে, আন্দোলন সফল হয়নি। নারীদের জন্য কোনো কোটা থাকবে না।' এদিকে, বিএনপির দ্রম্নত নির্বাচনের দাবিকে ভালো চোখে দেখছেন না ইসলামী আন্দোলনের আমির, চরমোনাইয়ের পীর মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিম; সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন পদ্ধতির বিরোধিতা করার কারণেও বিএনপির সমালোচনা করেছেন তিনি। এ সমাবেশ সামনে রেখে কয়েকদিন ধরেই প্রস্তুতি চলছিল। শুক্রবার দুপুর নাগাদ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সমাবেশস্থল কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায়। গণপূর্ত অধিদপ্তর সমাবেশের অনুমতি বাতিল করলেও শেষ পর্যন্ত ঠিকই তা করেছে ইসলামী যুব আন্দোলন। সমাবেশে আসা বাসগুলোর কারণে শাহবাগ থেকে মৎস্যভবন সড়কে যান চলাচল একরকম বন্ধ হয়ে যায়। যুব আন্দোলনের সভাপতি নেছার উদ্দিনের সভাপতিত্বে কনভেনশনে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি রেজাউল। সমাবেশে ইসলামী আন্দোলন ও যুব আন্দোলনের নেতারা ছাড়াও হিন্দু মহাজোটের সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন, যুব জাগপার সভাপতি নজরুল ইসলাম বাবলু বক্তব্য দেন। রেজাউল করিম বলেন, 'গত ৫৩ বছর যারা দেশ চালিয়েছে। তাদের মানুষকে নতুন করে উপহার দেওয়ার মত কিছু নাই, নতুন কোনো কথা নাই। গ্রামে একটা কথা আছে গোদা পা দিয়ে লাথি মারলে শক্তি থাকে না। এটা আমাদের জানা হয়ে গেছে। আপনারা দেশ ৫৩ বছর পরিচালনা করেছেন, তাতে আমাদের কী দিয়েছেন? নতুনভাবে ওই পা দিয়া ভয় দেখাইয়া আর লাভ নেই।' বিএনপির উদ্দেশ্যে মুফতি রেজাউল বলেন, 'যারা নাকি নির্বাচন করতে অস্থির হয়ে গেছেন। পিআর নির্বাচন (সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি) পছন্দ করছেন না। আমি বলব মানুষ সজাগ হয়েছে। জরিপ করে দেখেন। আপনাদের পায়ের নিচে মাটি সরে গেছে। এখন বাংলাদেশে এই চাঁদাবাজদের, এই দখলকারী, খুনীদের বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায় না। পরিবর্তন করতে হবে।' বিএনপি আওয়ামী লীগকেও নির্বাচনে চায়ু এমন ইংগিত করে ইসলামী আন্দোলনের আমির বলেন, 'যারা হাজার মায়ের কোল খালি করেছে, তাদেরকে আবার নির্বাচনের জন্য আহ্বান করছেন, আপনারা কী ইঙ্গিত দিচ্ছেন। এখনো মায়ের কান্না শেষ হয়নি। আর আপনারা তাদের নির্বাচনে আহ্বান করবেন। তাদের নিয়ে এসে ক্ষমতা দখল করবেন। এই ধোঁকাবাজি জনগণ বুঝে গেছে। ভারতের আচরণে আমরা বন্ধুত্ব পাইনি। আর আপনারা তাদের দোসরদের খুশি করবেন।' মুফতি রেজাউল বলেন, 'পিআর সিস্টেমের নির্বাচনের মাধ্যমেই বাংলাদেশে জাতীয় সরকার গঠন হবে। এটা আপনারা (বিএনপি) কেন চাচ্ছেন না। আবার আপনারা এককভাবে ক্ষমতায় গিয়ে আমাদের ওপর স্টিম রোলার চাপিয়ে দেবেনু সেটা হবে না। মায়ের কোল খালি করার রাজনীতি মানুষ আর দেখতে চায় না। দেশের টাকা পাচার করবেন, বিদেশে বেগম পাড়া তৈরি করবেন- এটা বাংলার মানুষ আর দেখতে চায় না। এই পরিবর্তন আমাদেরই করতে হবে। এর জন্য প্রয়োজনে আমরা আবার রক্ত দেব।' অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে মুফতি রেজাউল বলেন, 'আমাদের দায়িত্বশীলরা বলেছেন, আপনারা জনগণের ভোটে নির্বাচিত সরকার নয়। আপনারা গণঅভু্যত্থান, ছাত্র-জনতা, হাজারো মায়ের কোল খালি করার বিনিময়ে আপনারা ক্ষমতায় বসেছেন। কিন্তু আপনাদের কাজকর্মগুলো অনেকাংশে প্রশ্নবিদ্ধ। এসব দেখে আমাদের দুঃখ হয়।' সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবিতে আন্দোলনের ডাক দেন মুফতি রেজাউল। তিনি বলেন, 'পিআর সিস্টেমে নির্বাচন হতে হবে। প্রত্যেকটা ভোটারের ভোটের অধিকার বাস্তবায়ন করতে হবে। বাংলাদেশে জাতীয় সরকার হবে। এজন্য লাগলে আন্দোলন করব, সংগ্রাম করব।' সমাবেশে অংশ নেওয়া যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'সামনে জাতীয় নির্বাচন আসবে। এই নির্বাচনে উলেস্নখযোগ্য ভূমিকা পালন করতে হবে যুবকদের। সেন্টারভিত্তিক দাওয়াতের মাধ্যমে প্রতি মাসে চারজনকে তৈরি করতে পারলে সেদিন বেশি দেরী নয় বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে ইসলামের নীতি আদর্শ বাস্তবায়িত হবে। এখন পরিবর্তনের সময়। গত ৫৩ বছরে এত সুন্দর ইসলামের পক্ষের পরিবেশ আর তৈরি হয়নি।' সমাবেশ থেকে যুব আন্দোলনের ২০২৫ সালের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হয়। আতিকুর রহমান মুজাহিদকে সভাপতি ও মানসুর আহমেদ সাকিকে সেক্রেটারি জেনারেল ঘোষণা করেন ইসলামী আন্দোলনের আমির রেজাউল করিম। যুব আন্দোলনের সভাপতি নেছার উদ্দিনের সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলনের আমির মুফতি সৈয়দ মোহাম্মদ রেজাউল করিমও।