বাজারদর

মাছের বাজারে নাভিশ্বাস শীতের সবজিতে স্বস্তি

প্রকাশ | ১৮ জানুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শীতের প্রায় সব ধরনের সবজি মিলছে কাঁচাবাজারে। এতে দামেও কম পাচ্ছেন ক্রেতারা। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ ধরে অল্প অল্প করে বেড়েছে মাছের দাম। বিশেষ করে সস্তা মাছ হিসেবে পরিচিত তেলাপিয়া, পাঙ্গাসের মতো মাছগুলো এখন বিক্রি হচ্ছে ২০০ টাকার ওপরে। সবজি দামে কম হলেও মাঝ কিনতে গিয়ে নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। শুক্রবার সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে এমন চিত্র। বাজারে চাল ও ব্রয়লার মুরগির দাম স্থিতিশীল থাকলেও ২০-৩০ টাকা বেড়েছে সোনালী ও দেশি মুরগির দাম। আর মুদিপণ্যের সরবরাহ কমায় দাম বৃদ্ধির শঙ্কায় রয়েছেন ক্রেতারা। বাজারে শীতকালীন নানা সবজির সরবরাহ বেড়ে যাওয়ায় কম দামে কিনে স্বস্তি পাচ্ছেন ক্রেতারা। গত দুই সপ্তাহ ধরে বাজারে মানভেদে প্রতি কেজি বেগুন ৪০-৫০ টাকা, বাঁধাকপি ও ফুলকপি ৩০ টাকা, শিম ৩০ থেকে ৪০ টাকা, বরবটি ৬০ টাকা, মুলা ২০ টাকা, শসা ৪০-৫০ টাকা ও কচুর লতি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া কলার হালি ৩০, শালগম ৪০, গাজর ৫০, প্রতি কেজি পেঁপে ২৫-৩০ টাকা, ঝিঙা-ধুন্দল ৭০ টাকা, টমেটো ৫০, পালংশাক, লাল শাক, পেঁয়াজের কলি প্রতি আঁটি ১০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। প্রতি কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা, পাইকারিতে কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে আলু, পেঁয়াজের দাম। প্রতি কেজি আলু ৩৫ থেকে ৪০ টাকা, পেঁয়াজ ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে এসেছে। এদিকে, মাছ বিক্রেতারা জানিয়েছেন, বছরের শুরু ও শীত মৌসুমে বিয়েসহ বিভিন্ন অনুষ্ঠানের কারণে চাহিদা বেড়ে গেছে মাছের। তবে সেই তুলনায় বাজারে সরবরাহ কম, যে কারণে দাম বেড়েছে। তারা আরও জানান, শেষ প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে একটু একটু করে বেড়েছে মাছের দাম। এখন কেজি প্রতি ২০ থেকে ৩০ টাকা দাম বেশি। রামপুরা বাজারের মাছ বিক্রেতা আব্দুর রহিম বলেন, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় মাছের দাম বাড়ছে। কারণ এখন খাল বিল শুকিয়ে আছে। সব এলাকায় মাছ পাওয়া যাচ্ছে না। বাজারে প্রতি কেজি তেলাপিয়া ও পাঙ্গাস ২০০ থেকে ২২০ টাকা দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে। যা ১৮০-২০০ টাকার মধ্যে ছিল। এছাড়া একইভাবে দাম বেড়ে পাবদা ৩৬০-৪০০, চাষের শিং ৫০০ থেকে ৫৫০, এক কেজি সাইজের রুই-কাতল ৩০০-৩২০, বড় রুই-কাতল ৪০০-৫০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া সামুদ্রিক কোরাল ৭০০ থেকে ৭৫০ টাকা, প্রতি কেজি দেশি শিং ১ হাজার ২০০ থেকে দেড় হাজার, শোল ৯০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতি কেজি ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার টাকার ওপরে এবং ছোট ইলিশের দাম ৫০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি। অন্যদিকে, ব্রয়লার মুরগির দাম গত দুই সপ্তাহ ধরে একই অবস্থায় রয়েছে, প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০-২২০ টাকা। সোনালি মুরগি ৩৫০ থেকে ৩৬০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০-৬৫০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। খুলনায় মাছ-মাংস ও ডিমের দাম এদিকে, খুলনার বাজারে গত সপ্তাহের চেয়ে শীতকালীন সবজির দাম আরও কমেছে। মাছ-মাংস ও ডিমের দাম রয়েছে স্থিতিশীল। আর নিত্যপণ্যের সরবরাহ কম থাকায় দাম বৃদ্ধির শঙ্কায় রয়েছেন খুচরা ব্যবসায়ীরা। শুক্রবার খুলনার গলস্নামারি বাজার, মিস্ত্রিপাড়া বাজার, দৌলতপুর বাজার, ময়লাপোতা বাজারে দেখা যায়, ফুলকপি ও বাঁধাকপি বিক্রি হচ্ছে ১৫-২০ টাকায়, মুলা ২০ টাকা, বেগুন আকার ভেদে ৩০-৪০ টাকা, শিম প্রকারভেদে ২৫-৪০ টাকায়, লালশাক, পালং ও কলমি শাক ২০ টাকা কেজি দরে পাওয়া যাচ্ছে। টমেটোর দাম এক ধাপ কমে ৩০-৪০ টাকা ও গাজর ৫০-৬০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। আলুর দাম কমে আকারভেদে ২৫-৩০ টাকা কেজি, দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, দেশি রসুন ২২০ টাকা ও ভারতীয় রসুন প্রতি কেজি ১৮০-২০০ টাকা, প্রকারভেদে আদা পাওয়া যাচ্ছে ১০০-১৫০ টাকায়। বাজারে আটা-ময়দা, সুজি, তেলসহ বিভিন্ন কোম্পানির প্যাকেটজাত পণ্যের সরবরাহ নাই বললেই চলে। বোতলজাত সয়াবিন তেলের সরবরাহ নেই। খুচরা ব্যবসায়ীরা পণ্যের চাহিদা দিলেও কোম্পানির প্রতিনিধিরা পণ্য দিতে পারছেন না। এক সপ্তাহ আগে বোতলজাত পাঁচ লিটার সয়াবিন ৮৫০ এবং এক লিটার ১৭৫ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৮০-১৯০ টাকা, সোনালি মুরগি পাওয়া যাচ্ছে ৩৩০ টাকা, গরুর মাংস ৬৫০ টাকা কেজি দরে এবং খাসির মাংস ১১০০ টাকা কেজি দরে বিক্রয় হচ্ছে। বাজারে টেংরা ৫০০-৬০০ টাকা, পাইসা৬০০ টাকা, ঘেরের তেলাপিয়া ১২০-১৪০ টাকা কেজি, চিংড়ি প্রকারভেদে ৪৫০-৬৫০, পাবদা ৩৫০-৪০০ টাকা, মাঝারি ভেটকি ৪০০ টাকা, মাঝারি রুই প্রতি কেজি ৩০০ টাকা, পাঙাশ ১২০-১৪০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৮০-৮৫ টাকা, নাজিরশাইল ৮২-৮৬ টাকা, স্বর্ণা চাল ৫৫-৬০ টাকা, পুরাতন আটাশ ৬২-৬৫ টাকা, প্যাকেটজাত পোলাও চাল ১৫০ টাকা ও খোলা চাল ১২০-১৩০ টাকার মধ্যে পাওয়া যাচ্ছে। নিউ মার্কেট বাজারের সবজি বিক্রেতা আলম শেখ বলেন, এ সপ্তাহে শাকসবজির দাম অনেক কমেছে। সব সবজিতে ৫-১০ টাকা করে কমেছে। টমেটোর দাম কমে ৩৫-৪০ টাকায় নেমেছে দাম। ৫-১০ টাকা প্রতিদিন বাজারে উঠা-নাম করে। দৌলতপুর বাজারের চাল ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, 'সব জায়গাতেই চালের দাম বেড়েছে। মিলমালিকরা দাম বাড়ালে আমরা কী করতে পারি? মিনিকেট চাল বস্তাপ্রতি বিক্রয় করলে ১০০-১৫০ টাকা লাভ করা কষ্ট হয়ে যায়।' রুপসা বাজারের মাছ বিক্রেতা গাউস বলেন, 'দেশি মাছের দাম কমে না। সব মাছের দামই এখন বেশি। মাছের ফিডের দাম বাড়ছে বলে ঘেরের মাছেরও দাম বেশি। ফিডের দাম কমলে মাছের দামও কমে যাবে।' গলস্নামারি বাজারে আসা আবেদুল ইসলাম বলেন, 'শাক-সবজি, আলু পেঁয়াজের দাম অনেকটা কমেছে। চালের দাম তো বেড়েছে। এখন পর্যন্ত দাম কমার লক্ষণ নেই। সন্ধ্যা বাজারে মাছের দাম একটু বেশি থাকে।' নিউ মার্কেট বাজারে আসা বৈশাখী মন্ডল বলেন, বোতলজাত তেল নেই কোনো দোকানে। পরে একটি সুপারশপ থেকে নিয়েছি। চিনির দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়েছে। মুদি দোকানদার মেহেদী হাসান ওমর বলেন, 'গত সপ্তাহের পর থেকে অর্ডার করলেও চাহিদা মতো পণ্য দিতে পারছে না বিভিন্ন কোম্পানির বিক্রয় কর্মীরা। ভ্যাট বাড়ানোর কারণে সব পণ্যের দাম বৃদ্ধি হতে পারে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। প্যাকেটজাত পণ্যের চাহিদা বেশি।'