রাজশাহী সিটি নিবার্চন

তরুণ-নারী ভোটারেই নিহিত জয়ের সমীকরণ

নতুন ও নারী ভোটাররাই প্রতিবার প্রাথীের্দর ভাগ্য নিধার্রণ করেন। তাই শেষ মুহূতের্র প্রচারণায় তাদেরই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বেশি

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) নিবার্চনে এবার মোট ভোটার তিন লাখ ১৮ হাজার ১৩৮ জন। এর মধ্যে নতুন ভোটার ৩১ হাজার ২২১ জন। তারা সবাই তরুণ এবং প্রথমবার ভোট দেবেন। আর মোট ভোটারের মধ্যে এক লাখ ৬২ হাজার ৫৩ জনই নারী ভোটার। পুরুষ ভোটার এক লাখ ৫৬ হাজার ৮৫ জন। তাই এ হিসাবই বলে দিচ্ছে আসন্ন নিবার্চনে তরুণ ও নারী ভোটারই প্রতিদ্ব›দ্বী প্রাথীের্দর মূল নিয়ামক শক্তি। তাদের সিল দেয়া ব্যালটের রায়ই পাল্টে দিতে পারে জয়ের সমীকরণ। রাসিক নিবার্চনের ইতিহাস সাক্ষী- এই নতুন ও নারী ভোটাররাই প্রতিবার প্রাথীের্দর জয়ের ভাগ্য নিধার্রণ করেন। তাই শেষ মুহূতের্র প্রচারণা তাদেরই গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে বেশি। তাদের ভোট টানতে মেয়র নিবাির্চত হলে এক লাখ বেকারের কমর্সংস্থান সৃষ্টির প্রতিশ্রæতি এরই মধ্যে দিয়েছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত ১৪ দলের প্রাথীর্ এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন। এ ছাড়া রাজশাহী নিমার্ণাধীন হাইটেক পাকর্, মহানগরের বড়কুঠি ওয়াইফাই জোন আবারও চালু, নতুন নতুন এলাকা উন্মুক্ত ওয়াইফাইয়ের আওতায় আনা, উচ্চশিক্ষায় স্কলারশিপের ব্যবস্থা, তরুণদের স্বাবলম্বী করতে ফ্রিল্যান্সিং ক্যারিয়ার তৈরি করার চমক দেয়া সব প্রতিশ্রæতি যেন তাদের ঘিরেই। আর নারী ভোটারদের আকষর্ণ করতে রয়েছে বন্ধ থাকা গ্যাস সংযোগ আবারও চালু, গামের্ন্টশিল্প তৈরি করে কমর্সংস্থান সৃষ্টি, ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্পের প্রসার ঘটানোসহ নানান প্রতিশ্রæতি। শিক্ষা নগরে কমর্মুখী তরুণ প্রজন্মের ভোটারদের জন্য সহায়ক ও উপযোগী কমর্সূচি দেয়ার কথাও বলছেন আওয়ামী লীগের প্রাথীর্। আর এতেই নৌকার প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছেন তরুণ ভোটাররা। প্রচার-প্রচারণা শুরুর পর থেকে দেখা গেছে, এসব প্রতিশ্রæতিই মন কেড়েছে নগরের তরুণ ও নারী ভোটারদের। তাই তাদের ভাবনার জায়গায় এবার দাগ কেটেছে খায়রুজ্জামান লিটন। কথা হয় রাজশাহী কলেজের ইংরেজি দ্বিতীয় বষের্র ছাত্র ফাওজুল করিম জনির সঙ্গে। তিনি বলেন, এবার প্রথম ভোট দেবেন। তাই অনুভূতিটাই অন্যরকম। তবে প্রভাবিত হয়ে ধরাবঁাধা উন্নয়ন বা প্রতীক দেখে নয়, ভোট দেবেন বাস্তবতার নিরিখেই। লক্ষ্য রাখবেন তার প্রথম ভোট যেন নষ্ট না হয়। প্রাথীর্র কোন যোগ্যতাকে বিবেচনায় নিয়ে তাকে ভোট দেবেন- এমন প্রশ্নের জবাবে জনি বলেন, সারা দুনিয়ায় এখন তরুণদের জয়জয়কার। তরুণরাই ব্যবসা-বাণিজ্য থেকে শুরু করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় বসছেন। বদলে দিচ্ছে দেশ ও সমাজের চেহারা। কিন্তু রাজশাহীতে এখনো তরুণদের জন্য কাক্সিক্ষত জায়গা তৈরি হয়নি। তার কাছে যে প্রাথীের্ক মনে হবে তিনি তরুণদের জন্য কাজ করতে পারবেন তাকেই ভোট দেবেন। এক্ষেত্রে আধুনিক রাজশাহী রূপকার খ্যাত সাবেক মেয়র লিটন তার বিবেচনায় আছেন। মহানগরের সপুরা এলাকার অধিবাসী ফারজানা নওশীন নিশি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্সে পড়াশোনা করেন। প্রথম ভোটার হয়েছেন। নিশি বলেন, এবার নিবার্চনে পঁাচজন মেয়রপ্রাথীর্ থাকলেও জয়ের জন্য লড়াই হবে বড় দলের প্রাথীর্ লিটন ও বুলবুলের মধ্যেই। এক্ষেত্রে গত পঁাচ বছরে বুলবুল তরুণদের জন্য কিছুই করতে পারেননি। তার আগের মেয়র লিটন বড়কুঠি এলাকায় তরুণদের জন্য যে ওয়াইফাই জোন চালু করেছিলেন তাও বন্ধ হয়ে গেছে বুলবুলের আমলে। এই অবস্থায় রাজশাহীতে এখনো কোনো তথ্য-প্রযুক্তি কেন্দ্র গড়ে ওঠেনি। বঙ্গবন্ধু হাইটেক পাকর্ কেবলই নিমার্ণ হচ্ছে। তিনি চান না, এটার নিমার্ণকাজ থেমে যাক অথবা খুবই ধীরগতিতে চলুক। কারণ তারা এখানে চাকরি চান। আর খায়রুজ্জামান লিটন মেয়র হলে এর নিমার্ণকাজ দ্রæত শেষ করতে যে ভূমিকা রাখতে পারবেন, তা আর কেউ পারবেন না। তাই ভোটটা অন্য কাউকে দেবেন না। মহানগরের কাজলা এলাকার অধিবাসী আবু জাফরের ভাবনাটা আরও গভীর। জাফর গত বছর মাস্টাসর্ শেষ করে এখনো চাকরি পাননি। তিনি বলেন, রাজশাহী শিক্ষানগর। কিন্তু এখানে চাকরির জায়গা কম। হাসপাতাল আর বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়া এখানে তেমন চাকরি ক্ষেত্রই সৃষ্টি হয়নি। সিটি করপোরেশনের সদ্য বিদায়ী মেয়র নতুন কমর্সংস্থান সৃষ্টি করতে পুরোপুরি ব্যথর্ হয়েছেন। তাই এবার সুযোগটা খায়রুজ্জামান লিটনকে দেয়া উচিত বলে মনে করেন। অন্তত কমর্সংস্থানের আশায় তার মতো বেকাররা তাকে ভোট দেবে। লিটন মেয়র হলে রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্রæত চিকিৎসা কাযর্ক্রম চালু হবে। এদিকে ২০১৩ সালের ১৫ জুন নিবার্চনের ঠিক আগে তড়িঘড়ি করে গ্যাস সংযোগ দেয়া হয়েছিল মহানগরের বাসাবাড়িতে। দীঘির্দন ধরেই বন্ধ আছে আবাসিক গ্যাস সংযোগ। মোসাদ্দেক হোসেন বুলবুল নিবাির্চত হওয়ার পরও গ্যাস সংযোগ চালু করতে পারেননি। এতেই ত্যক্ত-বিরক্ত নারীরা। তাই সেটি মাথায় রেখে ক্ষমতাসীন দলের প্রাথীর্ এবার গ্যাস সংযোগ চালুর প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন। মহানগরের সপুরা এলাকার নারী ভোটার শাবনম মুসতারী বলেন, তারা হচ্ছেন নীরব ভোটার। যে যাই বলুক, নিবার্চনে তাদের প্রভাবই বেশি। প্রচারণার সময় মাঠেঘাটে দেখা না গেলেও ভোটের দিন কেন্দ্রে তারাই আগে যান, তাদের লাইনই বেশি লম্বা হয় আর তাদের সংখ্যাই বেশি। তাই যাকে ভোট দিয়ে নারীদের উপকার হবে, নারী কমর্সংস্থানের সুযোগ হবে তাকেই ভোট দেবেন। এক্ষেত্রে গ্যাস এনে দেয়া আগের মেয়র লিটনকেই এগিয়ে রাখছেন তিনি। বাকি সিদ্ধান্ত ভোটের দিন নেবেন বলে জানান। বিষয়টি স্বীকার করে সামাজিক অধিকার আদায়ের সংগঠন রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, বিগত সময় রাজশাহীবাসীর দীঘর্ আন্দোলনের পর সাবেক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন প্রধানমন্ত্রীকে রাজি করে রাজশাহীতে গ্যাস এনেছেন। বতর্মানে নানান আমলাতান্ত্রিক জটিলতায় গ্যাস সংযোগ বন্ধ হয়ে গেছে। তবে খায়রুজ্জামান লিটন এবারও মেয়রপ্রাথীর্। তিনি প্রতিশ্রæতি দিচ্ছেন নিবাির্চত হলে আবারও গ্যাস সংযোগ চালু হবে। তাই তারা আশাবাদী। তিনি আরও বলেন, নারীদের একটি বড় অংশ গৃহিণী। ফলে তাদের টানতে প্রচারণায় এসেছে গ্যাস। এটি অবশ্যই নিবার্চনের প্রতিদ্ব›দ্বী প্রাথীের্ক বিজয়ী করতে প্রভাব ফেলবে বলেও মন্তব্য করেন এই নেতা।