বরিশাল সিটি নিবার্চন

সাদিকে বিচলিত সরোয়ার

আ’লীগ মেয়রপ্রাথীর্ সাদিক আবদুল্লাহ দলগত বিরোধ মিটিয়ে নিবার্চনী মাঠেও একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করেছেন

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

আরিফুর রহমান বরিশাল
আসন্ন বরিশাল সিটি করপোরেশন নিবার্চনে দলের চেয়ে ব্যক্তিগত প্র্যাস্টিজ ইস্যু হয়ে দঁাড়িয়েছে বিএনপির প্রাথীর্ মজিবর রহমান সরোয়ারের জন্য। বিএনপি দলীয় এই মেয়রপ্রাথীর্র তুলনায় রাজনীতিতে একেবারে নবীন ও বয়সেও কম আওয়ামী লীগের প্রাথীর্ সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহর সঙ্গে এবার নিবার্চনী লড়াইয়ে এ বিষয়টি এখন বেশ প্রধান্য পাচ্ছে স্থানীয় রাজনৈতিক অঙ্গনে। বিশেষ করে বিএনপি নেতাকমীর্ এমনকি সরোয়ার নিজেও বিষয়টি আমলে নিয়ে ছক আঁকছেন কীভাবে এবারের অন্তত নিবার্চনী বৈতরণী পার পাওয়া যায়। চারবাবের সাংসদ ও একবার মেয়র হওয়ার বিএনপির এই নেতা নিজের জয়লাভ নিয়ে শঙ্কিত বলে আভাস পাওয়া গেছে। কারণ নিবার্চনের দীঘর্ প্রস্তুতির মধ্যে সাদিক আবদুল্লাহ নিজের ইমেজ সাধারণ ভোটারদের মাঝে তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এমনকি দলগত বিরোধ মিটিয়ে নিবার্চনী মাঠেও একচেটিয়া প্রাধান্য বিস্তার করে ফেলেছেন। কিন্তু বিষয়টি সরোয়ার দেখছেন ভিন্নভাবে। সরোয়ারের আশঙ্কা ক্ষমতাসীন দল তাদের প্রাথীের্ক বিজয়ী করতে নিবার্চন একপেশে করতে পারে। রিপোটার্সর্ ইউনিটিতে সংবাদ কমীের্দর সাথে মতবিনিময়কালে তার এই অভিমত প্রকাশ পায়। বিএনপি দলীয় একাধিক সূত্রের দাবি, দলের শীষর্ নেতা মজিবর রহমান সরোয়ার নিজেই নিবার্চনী মেজাজে নেই। এবার তিনি প্রাথীর্ হতে চাননি। দলীয় হাই কমান্ড ও তারেক রহমানের পরিকল্পনায় সরোয়ারকে দলীয় মনোনয়ন দিয়ে মাঠে রাখার কৌশল নেয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে দুটি দিক নিয়ে আলোচনা শোনা যায়। প্রথমত বরিশালের রাজনীতিতে সরকারবিরোধী আন্দোলনে দীঘির্দন ধরে মজিবর রহমান সরোয়ার গা-বাঁচিয়ে চলছেন বলে দলের ভেতর নানা অভিযোগ রয়েছে। এ অবস্থায় তাকে প্রাথীর্ করা হলে মাঠে থাকতে বাধ্য হবেন অন্তত নিজের রাজনৈতিক অস্তিত্ব রক্ষার তাগিদে। দ্বিতীয়ত আগে থেকেই বিএনপির হাই কমান্ড আওয়ামী লীগের চ‚ড়ান্ত প্রাথীর্ হিসেবে সাদিকের মনোনয়ন পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত ছিল। সবদিক বিবেচনায় সাদিকের সাথে লড়াইয়ে সরোয়ারই হতে পারেন মুক্ষম প্রাথীর্। এই দুই ভাবনাকে সামনে রেখে বিএনপি হাই কমান্ডও অনেক আগে থেকেই সরোয়ারকে দলীয় প্রাথীর্ হিসেবে চ‚ড়ান্ত করে রেখেছিল। কিন্তু রাজনৈতিক কৌশলগত কারণে বরিশাল জেলা বিএনপির সভাপতি এবায়েদুল হক চান ও কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক বিলকিছ আক্তার জাহান শিরিনের নাম সম্ভাব্য প্রাথির্তার তালিকার অগ্রভাগে রেখে আ’লীগের হাই কমান্ডকে একটি গোলকধাঁধার মধ্যে রাখতে চেয়েছিল। সূত্র জানায়, আওয়ামী লীগের হাই কমান্ডও বিএনপির এই কৌশল আঁচ করতে পেরে বিরোধী দলীয় প্রাথীর্ সরোয়ারের মুখোমুখি হওয়ার মতো যোগ্যতা রাখে এমন বিবেচনায় এনে একেবারে শেষ পযাের্য় এসে দলীয় প্রাথীর্ হিসেবে বয়সে তরুণ সাদিক আবদুল্লাহর মনোনয়ন নিশ্চিত করেন। এই মুহ‚তের্ বরিশাল রাজনীতিতে সাদিকের বিকল্প কাউকে মনোনয়ন দেয়া হলে নিবার্চনী পরিবেশ পাল্টে যাওয়ার আশঙ্কাও ছিল। কারণ বরিশালের রাজনৈতিক মাঠ এখন সাদিকেরই দখলে। খোদ বিএনপি নেতাকমীর্রাই বলছে, সাদিককে প্রাথীর্ করায় নিবার্চনী লাড়াইয়ের মাঠে বিএনপি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। আওয়ামী লীগের প্রাথীর্ সাদিকের ইয়াং ক্রেজ ও প্রশাসনিক মহলেও গ্রহণযোগ্যতা থাকায় এই তরুণ নেতা সবর্ত্র বেশ শক্তপোক্ত অবস্থান তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এমনকি বরিশালে বিভক্ত আওয়ামী লীগকে এক ছাদের তলায় নিয়ে এসেছেন সাদিক আব্দুল্লাহ। তাছাড়া অনেক আগেই নিবার্চনী প্রস্তুতি হিসেবে মহানগর আওয়ামী লীগ সিটি করপোরেশনের ৩০টি ওয়াডের্ শতাধিক ইউনিট কমিটি গঠন করে। সবকিছু মিলিয়ে সাদিকের নিবার্চনী পরিবেশ অনুক‚লে থাকায় সরোয়ার পড়েছেন বেকায়দায়। অনেকটা প্রেস্টিস ইস্যুর লড়াইয়ে অবতীনর্ হতে বাধ্য হচ্ছেন তেজষি এই নেতা। কেননা সিটি করপোরেশনের বতর্মান বিএনপি সমথির্ত মেয়র আহসান হাবিব গত ৫ বছরে উল্লেখযোগ্য তেমন কোনো উন্নয়ন করতে পারেননি। আর এটা এখন বিএনপি প্রাথীর্র ভোটের ইস্যু হয়ে দঁাড়িয়েছে। আর সিটি করপোরেশনের একবারের ও প্রথম আওয়ামী লীগের মেয়র শওকত হোসেন হিরন যে উন্নয়ন করে গেছেন সেটা দলটিকে নিবার্চনে জয়লাভে আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। ঠিক এটাই বিএনপির জন্য শংকার কারণ হয়ে দঁাড়িয়েছে। অন্যদিকে সাদিক আব্দুল্লাহ প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় হওয়ায় বিএনপি আরও বিচলিত হয়ে পড়েছে। স্বয়ং মজিবর রহমান সরোয়ারই বিভিন্ন সভা সমাবেশে এ কারণে সুষ্ঠু নিবার্চন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, যেহেতু সাদিক আব্দুল্লাহর ফুফু প্রধানমন্ত্রী ও বাবা মন্ত্রী তাই নিবার্চনে এর প্রভাব পড়বে। একইভাবে শঙ্কা প্রকাশ করে মহানগর বিএনপির সহ-সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুল হক তারিন বলেন, যদিও আমরা শঙ্কিত, তারপরও ভোটাররা যদি ভোট কেন্দ্রে যেতে পারে এবং ভোট দিতে পারে তবে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত। তাছাড়া সরোয়ার আজ পযর্ন্ত কোনো নিবার্চনে হারেননি বলে দাবি করেন তিনি। এদিকে বিএনপি প্রাথীর্ ও নেতৃবৃন্দের এরকম শঙ্কার কথা উড়িয়ে দিয়ে আওয়ামী লীগ প্রাথীর্ সাদিক আব্দুল্লাহ বলেন, আমার ফুফু প্রধানমন্ত্রী, আর বাবা মন্ত্রী এতে সুষ্ঠু ভোটের পরিবেশে বাধা হওয়ার প্রশ্নই আসে না। বরং সারাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারের উন্নয়ন দেখে ভীত হয়ে পড়েছে বিএনপি। তারা আরও ভীত বিএনপির বতর্মান মেয়রের ব্যথর্তায়। বরং আমি মেয়র হলে অন্যান্য সিটির চেয়ে বেশি উন্নয়ন সম্ভব হবে।