সুন্দরবন সুরক্ষা নীতিমালা করার দাবি

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

যাযাদি রিপোটর্
সুন্দরবন সংরক্ষণের জন্য আলাদা কোনো নীতিমালা নেই। বন বিভাগের যে নীতিমালা আছে, তা দিয়ে সুন্দরবন রক্ষা করা সম্ভব নয়। কারণ সুন্দরবন ও অন্য বনের প্রকৃতি সম্পূণর্ ভিন্ন। তাই সুন্দরবন রক্ষার জন্য আলাদা নীতিমালা করার দাবি জানানো হয়েছে। বৃহস্পতিবার খুলনা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা। আন্তজাির্তক ম্যানগ্রোভ দিবস উপলক্ষে ওই আলোচনা সভার আয়োজন করে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। ওই আলোচনা সভায় মুক্ত আলোচনায় বারবার উঠে আসে সুন্দরবনের পাশে রামপালে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন। বক্তারা বলেন, বলা হচ্ছে ওই বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করা হবে আল্ট্রাসুপার পদ্ধতিতে। কিন্তু ওই পদ্ধতি ব্যবহার করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে গেলে যে পরিমাণ খরচ হবে, তা দিয়ে অন্য কোনো মাধ্যমে স্বল্পখরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা যাবে। ভারতের তাজমহলের গায়ে থাকা পাথরের ওপর হালকা কালো কালো প্রলেপ পড়ায় ওই দেশের সরকার এর পাশের অনেক কলকারখানা বন্ধ করে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের দেশে হচ্ছে ভিন্ন। সুন্দরবনের পাশে গড়ে উঠছে একের পর এক কারখানা। ‘লাল তালিকাভুক্ত’ অনেক কারখানাও করার অনুমতি দিয়েছে সরকার। সরকারের এ ধরনের পদক্ষেপ ভবিষ্যতে সুন্দরবনকে হুমকির মধ্যে ফেলবে। বক্তারা সুন্দরবনকে ঘিরে অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা পযর্টনশিল্পকেও সুন্দরবনের জন্য হুমকি হিসেবে উল্লেখ করেন। তারা সুন্দরবন রক্ষার জন্য জাতীয় বাজেটে আলাদা করে বরাদ্দ রাখা, ইকো ট্যুরিজম-ব্যবস্থা গড়ে তোলা ও বন বিভাগের কমর্কতাের্দর আরও বেশি তৎপর হওয়ার আহŸান জানান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন খুলনা অঞ্চলের প্রধান বন সংরক্ষক মো. আমীর হোসাইন চৌধুরী। প্রধান আলোচক ছিলেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের (বিভাগ) অধ্যাপক দিলীপ দত্ত। সুন্দরবন একাডেমির নিবার্হী পরিচালক অধ্যাপক আনোয়ারুল কাদিরের সঞ্চালনায় ওই আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন খুলনা প্রেসক্লাবের সভাপতি ফারুক আহমেদ। দিলীপ দত্ত বলেন, মানুষের পদচারণা বেশি হলে সেখানে প্রতিবেশ টিকে থাকে না। চারপাশে মিল, কল-কারখানা ও স্থাপনা তৈরি করে সুন্দরবনকে এমনভাবে জড়িয়ে ধরা হয়েছে যে সুন্দরবন মারা যাচ্ছে। আমীর হোসাইন বলেন, ১৮৭৮ সালে সুন্দরবনকে সংরক্ষিত বন ঘোষণা করা হলেও সুন্দরবনের গাছের ওপর ভিত্তি করে নিউজপ্রিন্ট মিল, হাডের্বাডর্ মিলের মতো অনেক শিল্প-কারখানা গড়ে তোলা হয়েছিল। এ থেকে বোঝা যায়, ওই সময় সুন্দরবনকে রাজস্ব আয়ের একটি উৎস হিসেবে ধরা হতো। তবে বতর্মানে ওই ধারণা পরিবতর্ন হয়েছে। সুন্দরবন থেকে ধীরে ধীরে রাজস্ব আহরণ কমিয়ে দেয়া হচ্ছে। গরান, গেওয়া, সুন্দরীগাছ আহরণ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে অনেক আগেই। গোলপাতা আহরণও আগের চেয়ে কমিয়ে অধের্ক করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, সুন্দরবনের ৫২ শতাংশ অংশকে অভয়ারণ্য ঘোষণা করা হয়েছে। সুতরাং ধীরে ধীরে সুন্দরবনের মানুষের চলাচল কমে আসবে। বন বিভাগের পক্ষ থেকে হিরণ পয়েন্ট এলাকায় জেগে ওঠা বঙ্গবন্ধু চরকে মানুষের চলাচলের বাইরে রাখার পরিকল্পনা করা হলেও সরকারের একটি পক্ষ সেখানে ট্যুরিজম-ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছে বলে জানান তিনি।