নতুন বই এসেছে ৮৫টি

এখনো জমেনি লিটলম্যাগ চত্বর

আজ মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং পবিত্র শবেবরাত উপলক্ষে রাত ৯টার পরিবর্তে মেলা চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
বইমেলায় একটি স্টলে বই দেখছেন বইপ্রেমীরা -ফোকাস বাংলা
অমর একুশে বইমেলার ১৩তম দিন ছিল বৃহস্পতিবার। সপ্তাহের শেষ দিন হওয়ায় এদিন মেলার দুয়ার খোলার পর থেকেই পাঠক-দর্শনার্থীর সমাগম হতে থাকে। সন্ধ্যায় এসে তা পূর্ণতা পায়। মেলা হয়ে ওঠে সত্যিকার অর্থেই পাঠক-প্রকাশকের মিলনমেলায়। এদিন অনেকের হাতে বই দেখা গেছে। তবে মেলার ১৩তম দিনেও জমে ওঠেনি লিটলম্যাগ চত্বর। বেলা ৪টার পর এখানে গিয়ে দেখা যায়, চারিদিকে খাঁ খাঁ করছে। এখানে নেই কোনো পাঠক-দর্শনার্থী। হাতে গোনা কয়েকটি স্টল খোলা হলেও সেখানে স্টলকর্মী ছাড়া আর কারো উপস্থিতি নেই। কথা বলার মতো কোনো সম্পাদকেরও দেখা পাওয়া যায়নি। তবে মেলা প্রাঙ্গণে 'অনুভব' লিটলম্যাগের সম্পাদক তুষার প্রসূন জানালেন, লিটলম্যাগ চত্বর সাধারণত শেষ সপ্তাহে জমে। তবে এখনো কেন সব স্টল খোলা হয়নি সে ব্যাপারে তিনি কিছুই জানেন না। এদিকে দর্শনার্থী সমাগমের সঙ্গে বিক্রি বাড়ায় তারা খুশি বিক্রেতারা। বইপ্রেমীরাও স্টল ঘুরে ঘুরে বই দেখছেন, কিনছেন আর স্মৃতি হিসেবে নিজেদের মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ধরে রাখছেন ঘোরাঘুরি আর প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা হওয়ার ক্ষণটুকু। চব্বিশের রক্তঝরা গণআন্দোলনে ক্ষমতার পালাবদলে এবার এক ভিন্ন এক প্রেক্ষাপটে ১ ফেব্রম্নয়ারি পর্দা উঠেছে বইমেলার। ভাষা শহীদ, মুক্তিযুদ্ধের বীর শহীদদের পাশাপাশি জুলাই আন্দোলনে প্রাণ হারানো ছাত্র-জনতাকেও মেলায় শ্রদ্ধার আবহে রাখা হয়েছে। রঙ আর সাজসজ্জাতেও সেই ছটা ফুটেছে। মেলা শুরুর পর থেকে প্রতিদিনই আসছে নতুন বই। ক্রেতা-দর্শনার্থীরাও আসছেন দূর-দূরান্ত থেকে। কবি শাহেদ কায়েস বলেন, 'বইমেলার পরিবেশ এবার খুব ভালো। লিটলম্যাগ চত্বরকে এবার বিগত কয়েক বছরের মধ্যে সবচেয়ে নান্দনিক লাগছে। বসার জায়গাও করা হয়েছে। কিন্তু লিটলম্যাগ কর্মীদের অনেককেই মেলায় দেখছি না। প্রাণবন্ত আড্ডাটা নেই। লেখকদের উপস্থিতিও বিগত বছরের তুলনায় কম।' ক্ষমতার পালাবদলে পরিবর্তিত পরিস্থিতির মধ্যে হচ্ছে এবারের বইমেলা। ফলে আগের সরকারের সঙ্গে 'সখ্য থাকায়' কবি-লেখকদের অনেকে মেলা থেকে নিজেদের দূরে রাখছেন বলে বইমেলা সংশ্লিষ্টদের কেউ কেউ দাবি করছেন। নাম প্রকাশ না করে প্রকাশকদের একজন বলেন, 'অনেক লেখকই আছেন, যারা মেলায় আসলে ঝামেলা হতে পারে।ৃএজন্য অনেক লেখকই মেলায় আসছেন না। তবে এখন পর্যন্ত মেলার পরিবেশ ভালো।' বৃহস্পতিবার ৮৫টি নতুন বই এসেছে জানিয়ে বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ বিজ্ঞপ্তি জানিয়েছে, বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'ছাত্র-জনতার জুলাই অভু্যত্থান : প্রেক্ষাপট ও অভিমুখ' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সারোয়ার তুষার। আলোচনায় অংশ নেন যোবায়ের আল মাহমুদ এবং নুসরাত সাবিনা চৌধুরী। সভাপতিত্ব করেন মাহবুব মোর্শেদ। প্রাবন্ধিক বলেন, এ অঞ্চলের প্রত্যেকটি ঐতিহাসিক পর্বে ছাত্রসমাজ এগিয়ে এসেছে এবং রাজনৈতিক পরিণতির অভিমুখ নির্ধারণ করেছে। বৃহত্তর জনগণ ছাত্রশক্তির ডাকে সাড়া দিয়েছে এবং গণঅভু্যত্থান সৃষ্টি করেছে। রাজনৈতিক দলগুলো বরাবরই ছাত্র-শ্রমিক-জনতার পদাঙ্ক অনুসরণে বাধ্য হয়েছে। ২৪-এর জুলাই গণঅভু্যত্থানেও তার ব্যতিক্রম হয়নি। অতীতে অভু্যত্থানের পর রাজনৈতিক দলগুলো ছাত্র-জনতার আত্মদান ও বিসর্জনের মর্যাদা রক্ষা করতে পারেনি। জুলাই অভু্যত্থানের বিজয়ী ছাত্রশক্তি এ ইতিহাস সম্পর্কে সচেতন। তাই এবার তারা রাষ্ট্র ও সাংবিধানিক ব্যবস্থার গণতান্ত্রিক পুনর্গঠন করতে চায়। ছাত্র-জনতার সফলতা/ব্যর্থতার ওপর রাজনৈতিক জনগোষ্ঠী হিসেবে আমাদের ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে। আলোচকদ্বয় বলেন, বাংলাদেশের ইতিহাসে যত গণ-অভু্যত্থান হয়েছে তার মধ্যে সবচেয়ে তীব্রতর হয়েছে ২৪-এর গণঅভু্যত্থান। ফ্যাসিবাদী শক্তি দীর্ঘদিন এদেশের জনগণকে অবদমিত করে রেখেছিল। জুলাই অভু্যত্থানের মধ্য দিয়ে জনগণের অবদমিত আকাক্সক্ষার বিস্ফোরণ ঘটেছে। জনগণ ফ্যাসিবাদী কাঠামো বিলোপ করে জনগণের সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার জন্যই এই অভু্যত্থানে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছে। সভাপতির বক্তব্যে মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ২৪-এর অভু্যত্থানে বিভিন্ন শ্রেণিপেশার বিভিন্ন মতাদর্শে বিশ্বাসী মানুষের অংশগ্রহণ ছিল। এর তাৎক্ষণিকতা, এর আকস্মিকতা সবকিছু মিলিয়ে এটি ছিল একটি সফল গণ-অভু্যত্থান। লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি ফাতিমা তামান্না এবং কবি মুহাম্মদ আবদুল বাতেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী রবিউল আলম এবং নাসিম আহমেদ। আজ বইমেলার ১৪তম দিন মেলা শুরু হবে সকাল ১১টায় এবং পবিত্র শবে-বরাত উপলক্ষ্যে রাত ৯টার পরিবর্তে মেলা চলবে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত। বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'স্মরণ : আহমদ ছফা' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন তাহমিদাল জামি। আলোচনায় অংশ নেবেন নূরুল আনোয়ার এবং সাজ্জাদ শরিফ। সভাপতিত্ব করবেন সলিমুলস্নাহ খান।