আজ বসন্ত ও ভালোবাসা দিবস

ঝিনাইদহে দুই কোটি টাকার ফুল বিক্রি

প্রকাশ | ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

তারেক মাহমুদ, ঝিনাইদহ
পহেলা বসন্ত ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসকে সামনে রেখে বৃহস্পতিবার জমজমাট ছিল শাহবাগের ফুলের দোকানগুলো -ফোকাস বাংলা
পহেলা বসন্ত ও বিশ্ব ভালোবাসা দিবসে ঝিনাইদহের বড় দুই পাইকারী বাজারে প্রায় ২ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। ১১ থেকে ১৩ ফেব্রম্নয়ারি জেলার কালীগঞ্জের বালিয়াডাঙ্গা ও সদরের গান্না বাজারে ্‌এসব ফুল বিক্রি হয়। দেশের মোট ফুলের বড় একটি অংশ ঝিনাইদহের ফুলচাষিরা যোগান দিয়ে থাকে। অতিরিক্ত চাহিদার কারনে উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ে ঝিনাইদহের এ দুই ফুল বাজারে। আজ পহেলা ফাল্গুন, ঋতুরাজ বসস্ত। বাংলার আবহমানকাল থেকে নানা অনুষ্ঠানে মধ্যে পালিত হয়ে আসছে দিনটি। বাঙ্গালী সাংস্কৃতিতে বসন্ত বরণে তরুণ-তরুণীসহ সব বয়সের মানুষ যোগ দেয় নানা অনুষ্ঠানে। আর দিনটি পালনের প্রধান উপকরণ হলো ফুল। এ ফুলের বড় একটি অংশ যোগান দেয় ভারতীয় সীমান্তের জেলা ঝিনাইদহের ফুলচাষিরা। এছাড়া দেশের সবচেয়ে বেশি গাঁদাফুল উৎপাদন হয় এ জেলাতেই। এখানকার হলুদ ও কমলা রঙের গাঁদা ফুলের মান, আকার ও রং উন্নত হওয়ায় দেশের বড় বড় পাইকারদের নজর এ জেলার ফুলের দিকে। চলতি বছরে এখন পর্যন্ত জেলায় ২২৪ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের ফুলের আবাদ হয়েছে। ১৩ ফ্রেবুয়ারি এ দুই পাইকারী বাজারে একটি লাল গোলাপ বিক্রি হয়েছে ১৫ থেকে ২৫ টাকা। হলুল গোলাপ ২০ থেকে ২৫ টাকা। যা খুচরা বাজারে রং ও আকার ভেদে বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৭০ টাকা। গাদা ফুল পাইকারী বিক্রি হয়েছে ১২০ থেকে ২৫০ টাকা ধোপা। জারবেরা বিক্রি হয়েছে ৮ থেকে ১২ টাকা। রজনীগন্ধার স্টীক বিক্রি হয়েছে ৩ থেকে ৫ টাকা টাকা, যা এক সপ্তাহ আগে বিক্রি হয়েছিল ১ থেকে ২ টাকায়। গস্নাডিওলাস ৬ থেকে ৮ এবং চন্দ্রমলিস্নকা ২ থেকে ৪ টাকা বিক্রি হয়েছে। ঝিনাইদহ শহরের ফুল ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম জানান, বৃহস্পতিবার একটি লাল গোলাপ বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। গত কয়েকদিন যে ফুলের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩৫ টাকা। হলুদ গোলাপ ৬০ থেকে ৭০ টাকা। মাথার বেড়ি বিক্রি হয়েছে ১৫০ টাকা। যা আগে ছিল ৭০ থেকে ১০০ টাকা। আর প্রতি জারবেরা বিক্রি করছি ৪০ টাকা। প্রতিবছর বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসসহ কয়েকটি দিন আসলে ফুলের চাহিদা বাড়ে। এ দনিগুলোতে আমাদের ব্যবসাও ভালো হয়। ফুল কিনতে আসা জান্নাতী নামে এক তরুণী জানায়, কয়েক দিন আগেও যে ফুল ২০ থেকে ২০ টাকা কিনেছি। সে ফুল এখন ৫০ টাকা দাম চাচ্ছে। তারপর প্রিয়জনতে দেওয়ার জন্য কিনছি, কিছু করার নেই। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না বাজার ফুল চাষী ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারন সম্পাদক নজরুল ইসলাম এবং কালীগঞ্জ উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা ফুলচাষি ও ব্যবসায়ী সমিতির সাধারনক সম্পাদক ফজলুর রহমান জানান, বারোমাসই ফুল বিক্রি হয়। মুলত চাহিদা অনুযায়ি ফুলের দাম উঠা নামা করে। তবে বসন্ত বরণ ও ভালোবাসা দিবস এলে ফুলের চাহিদা অতিরিক্ত বেড়ে যায়। এসময় ফুলের দামও বেড়ে যায়। এ সময়ের আগেই ফুলচাষিরা ফুল প্রস্তুত করে বাড়তি দামের আশায়। ১২ ও ১৩ ফেব্রম্নয়ারি বালিয়াডাঙ্গা বাজার ও আশেপাশের ছোটখাটো আড়তে কোটি টাকার উপরে ফুল বিক্রি হয়েছে। এসব ফুল দেশের রাজধানীসহ বিভিন্ন শহরের পাঠানো হয়েছে। সব মিলিয়ে ১১ থেকে ১৩ ফেব্রম্নয়ারি পর্যন্ত এ দুই বাজারে দুই কোটি অধিক টাকার ফুল বেচাকেনা হয়েছে। ঝিনাইদহ সদর উপজেলার গান্না গ্রামের কৃষক মেহেদী হাসান রাজু জানান, বসন্ত ও ভালোবাসা দিবসে বাড়তি দামে ফুল বিক্রির আশায় গত ১০ থেকে ২০ আগে থেকেই রাতদিন গোলাপ পরিচর্যা করেছেন। কৃষক মেহেদী হাসান জানালেন, ২৫ শতাংশ জমিতে লাল ও হলুদ গোলাপের গাছ রয়েছে। পহেলা ফাল্গুন ভালবাসার দিবস ও একুশে ফেব্রম্নয়ারি ঘিরে অন্তত ১৫-২৫ টাকা পিস দরে ৪ হাজার গোলাপের স্টিক বিক্রি বরেছি। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ ষষ্টি চন্দ্র রায় বলেন, তিন দিবস ঘিরে জেলার কৃষকরা ক্ষেতে ফুল প্রস্তুত করেন। এ জেলার কৃষকরা ভালো দামে মানসম্মত ফুল উৎপাদন করেন। এজন্য ফুলের চাহিদাও বেশি থাকে। বিশেষ করে বিভিন্ন দিবসে চাহিদা বেশি হওয়ায় দামও বেশি পায় কৃষকরা।