এসেছে ১৭৫টি নতুন বই

বসন্তের ছোঁয়া বইমেলায়

মেলায় শিল্পীদের হাতে আঁকা ছবি মিলছে ১০ মিনিটে। এখানে ছবি আঁকছেন পার্থ রায়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এ মানুষটি কথা বলতে না পারলেও পেন্সিলের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন চমৎকার সব মুখাবয়ব

প্রকাশ | ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
শনিবার ছিল বইমেলার ১৫তম দিন, স্টলে বই দেখছেন ক্রেতারা -ফোকাস বাংলা
দেখতে দেখতে ভাষার মাস ফেব্রম্নয়ারির অর্ধেকের বেশি সময় পেরিয়ে এসেছে এবারের অমর একুশে বইমেলা। শনিবার ছিল বইমেলার ১৫তম দিন। এদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা থাকায় ছুটির দিনের নির্ধারিত সময় বেলা ১১টা পরিবর্তে মেলার দুয়ার খোলে বেলা ২টায়। তবে শুরু থেকেই ক্রেতা-দর্শকের উপস্থিতিতে প্রাণচঞ্চল হয়ে ওঠে মেলা প্রাঙ্গণ। শুক্রবার ছিল বিশ্ব ভালোবাসা দিবস। শনিবারও এর রেশ দেখা গেল বইমেলায়। মাথায় ফুল গুঁজে মেলায় ঘুরতে, বই কিনতে, ছবি তুলতে দেখা গেল অসংখ্য তরুণীকে। বসন্তের দ্বিতীয় দিনেও বইমেলা যেন রঙিন। এদিকে বাংলা একাডেমি জানিয়েছে, মেলার ১৫তম দিনে নতুন বই প্রকাশিত হয়েছে ১৭৫টি। হাতে আঁকা নিজের ছবি মিলছে ১০ মিনিটেই এদিকে. মেলায় শুধু বই নয়, মেলায় শিল্পীদের হাতে আঁকা ছবি মিলছে ১০ মিনিটে। এখানে ছবি আঁকছেন পার্থ রায়। বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন এ মানুষটি কথা বলতে না পারলেও পেন্সিলের মাধ্যমে ফুটিয়ে তোলেন চমৎকার সব মুখাবয়ব। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের সরাসরি শিষ্য পার্থ ২৫ বছর ধরে চালিয়ে যাচ্ছেন তার শিল্পকর্ম। শনিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বইমেলার প্রাঙ্গণে এ প্রতিবেদকের দেখা হয় তার সঙ্গে। কথা বলতে না পারলেও উচ্ছ্বাস প্রকাশে এতটুকুও ঘাটতি ছিল না তার। কাগজে লিখে লিখে উত্তর দিয়েছেন প্রতিটি কথার। পার্থ জানান, গত কয়েক বছর ধরে বইমেলায় মানুষের মুখাবয়ব বা পোট্রেট আঁকার কাজ করছেন। ১০ মিনিটের মধ্যেই কাগজে ফুটিয়ে তোলেন যে কারো ছবি। হাতে আঁকা নিজের ছবি দেখে ক্রেতারা যখন আনন্দিত হন, সেটা কাজ করে তার মধ্যেও। তবে পার্থ কিছুটা বিষাদের সুরেই হয়ত বলতে চাইলেন, আগের মতো মানুষ আর নিজেদের পোট্রেট করান না। এখন দিনে সর্বোচ্চ ৪ থেকে ৫টা পোট্রেট করেন তিনি। পার্থের কথার মিল পাওয়া যায় বইমেলায় আসা অন্য পোট্রেট শিল্পীদের কাছেও। '১০ মিনিটে আঁকুন নিজের ছবি' এমন বিজ্ঞাপনে গত কয়েক বছর ধরেই শিল্পীরা চেয়ার বসিয়ে আসছেন বইমেলার প্রাঙ্গণে। ছবি আঁকার এ কর্মযজ্ঞ বইমেলার কোনো আনুষ্ঠানিক পর্ব না হলেও বছরের পর বছর তা বাড়িয়ে এসেছে মেলার সৌন্দর্য। বরাবরের মতো এবারের বইমেলাতেও রয়েছে পোট্রেট শিল্পীদের উপস্থিতি। বুলবুল ললিতকলা একাডেমির শিক্ষক আশিকুজ্জামান সুজনের চিত্রশিল্পের ক্যারিয়ার প্রায় ১২ বছরের। অন্য শিল্পীদের পাশাপাশি তিনিও প্রতিবছর বইমেলায় মানুষের পোট্রেট এঁকে থাকেন। সুজন জানান, কেউ পোট্রেট করাতে চাইলে তার খরচ করতে হবে সর্বনিম্ন ৫০০ থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা। তবে ফোন থেকে দেখে আঁকার ক্ষেত্রে খরচটা একটু বেশি। মানুষের পোট্রেট আঁকার আগ্রহ কেন কমে গেছে, জানতে চাইলে সুজন সামনে আনেন প্রযুক্তির কথা। তিনি বলেন, প্রযুক্তির সহায়তায় এখন চাইলেই মুহূর্তের মধ্যে নিজের পোট্রেট বিনা পয়সায় তৈরি করা সম্ভব। তাই এভাবে ছবি আঁকাতে আগ্রহ তৈরি না হওয়াটাই স্বাভাবিক। নতুন ১৭৫টি বই আসার তথ্য দিয়ে বাংলা একাডেমি বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে, এদিন বইমেলার মূলমঞ্চে অমর একুশে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন- শিল্পী সুমন মজুমদার, শিল্পী প্রিয়াংকা গোপ ও শিল্পী রেজাউল করিম। বিকালে মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'জীবন ও কর্ম : সৈয়দ আলী আহসান' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুহম্মদ আবদুল বাতেন। আলোচনায় অংশ নেন তারেক রেজা এবং মহিবুর রহিম। সভাপতিত্ব করেন আবদুল হাই শিকদার। প্রাবন্ধিক বলেন, কবি, মনীষী সৈয়দ আলী আহসান আমাদের দেশ, জাতি ও ভাষার একজন সেরা পন্ডিত ব্যক্তিত্ব। তিনি একই সঙ্গে কবি ও বুদ্ধিজীবী হিসেবে দেশ ও দেশের বাইরে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও সম্মান অর্জন করেছেন। জ্ঞানের বিভিন্ন শাখায় তাঁর বিচরণ ছিল অবাধ। শিক্ষাবিদ, গবেষক, সাহিত্য ও শিল্প সমালোচক হিসেবে অসামান্য অবদান রেখেছেন তিনি। আধুনিক বাংলা কবিতায় ভাষা ও ভাবের স্বাতন্ত্র্য সৃষ্টিতে সৈয়দ আলী আহসান পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেছেন। কবিতার ভেতর দিয়েই যখন তিনি এই পৃথিবীকে জেনেছেন, তখনই হয়েছে তাঁর প্রকৃত চেনা ও একান্ত জানা। তাঁর অধিকাংশ কবিতার গঠন ও শব্দযোজনা এমনই বৈশিষ্ট্যমন্ডিত যে, সেগুলোকে অন্য কারও রচনা বলে ভুল করবার কোনো অবকাশ নেই। আলোচকদ্বয় বলেন, সৈয়দ আলী আহসানের কর্মপরিধি অত্যন্ত ব্যাপক। বাংলা গদ্যে ও কবিতায় নিজস্ব সৃষ্টিশীলতার ছাপ রেখেছিলেন তিনি। সাহিত্যের এমন কোনো ক্ষেত্র নেই যেদিকে তিনি দৃষ্টিপাত করেননি। বাংলা সাহিত্যের ইতিহাস রচনার পাশাপাশি বাংলাদেশের সমালোচনা-সাহিত্যকে সমৃদ্ধ করেছেন তিনি। বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে বাংলা সাহিত্যের সংযোগকে পরিপূর্ণতা দিয়েছিলেন সৈয়দ আলী আহসান। তাঁর অনুপম জীবন ও কর্ম নতুনভাবে জাতিকে জাগিয়ে তোলার প্রেরণা হতে পারে। সভাপতির বক্তব্যে আবদুল হাই শিকদার বলেন, সৈয়দ আলী আহসান ছিলেন বহুমাত্রিক বহুবর্ণিল প্রতিভা। তিনি একই সঙ্গে ঐতিহ্যসচেতন এবং আধুনিক। তাঁর জীবন ও কর্ম নিয়ে আলোচনার অর্থই হলো কল্যাণ ও মঙ্গলের দিকে অগ্রযাত্রা। এদিন লেখক বলছি অনুষ্ঠানে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন- কবি শহীদুলস্নাহ ফরায়েজী এবং কবি ও গবেষক মহিবুর রহিম। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি তারিফ রহমান, কবি জাহিদ হায়দার। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী সায়েরা হাবীব, শারমিন জুঁই ও শাহনাজ পারভীন লিপি। আজ বইমেলার ১৬তম দিন। মেলা শুরু হবে বিকাল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'জীবন ও কর্ম : জহির রায়হান' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন কবি সহুল আহমদ। আলোচনায় অংশ নেবেন মশিউল আলম এবং আহমাদ মোস্তফা কামাল। সভাপতিত্ব করবেন মাহবুব হাসান।