খোঁজ না পাওয়ায় উদ্বিগ্ন ওসি মোয়াজ্জেমের স্বজনরা

প্রকাশ | ১২ জুন ২০১৯, ০০:০০

যশোর প্রতিনিধি
মোয়াজ্জেম হোসেন
নুসরাতের 'ভিডিও ভাইরাল করার' অভিযোগ মামলার আসামি সোনাগাজী থানার সাবেক ওসি মোয়াজ্জেম হোসেন নিরুদ্দেশ। পৈত্রিক বাড়ি যশোরে তার কোনো খবর নেই। ওসি মোয়াজ্জেমের মা ও ভাইয়েরা তার অবস্থান নিয়ে উদ্বিগ্ন। আবার নানাজনের নানা কথায় তারা বিব্রতও। ওয়ারেন্ট জারির পর পরিবারের সঙ্গেও নেই যোগাযোগ। ওসি মোয়াজ্জেমের বাবার নাম খন্দকার আনসার আলী। পাঁচ ভাই ও এক বোনের মধ্যে তিনি বড়। তার এক ভাই সৌদি আরবে ও আরেক ভাই আমেরিকা প্রবাসী। তাদের আদি বাড়ি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার বৈডাঙ্গা গ্রামে। বাবার চাকরি সুবাদে তারা দীর্ঘদিন ধরে যশোর শহরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন। ১৯৯৭ সালে উপ-পরিদর্শক পদে পুলিশে যোগদান করেন মোয়াজ্জেম হোসেন। ২০১০ সালের দিকে পরিদর্শক পদে পদোন্নতি পান। প্রায় দেড় বছর সোনাগাজী থানায় ওসির দায়িত্ব পালন করেছেন। যশোর শহরের চাঁচড়া ডালমিল এলাকায় ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বাড়ি। পৈত্রিক দ্বিতল বাড়িটিতে ছোট দুই ভাই ও একমাত্র বিবাহিত বোন এখন মায়ের সঙ্গে থাকছেন। মোয়াজ্জেমের স্ত্রী-সন্তানদের কেউ থাকেন না। মঙ্গলবার তার বাড়িতে গিয়ে স্বজনদের সঙ্গে কথা হয়। তারা জানিয়েছেন, আদালতের ওয়ারেন্ট জারির পর থেকে পরিবারের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। কোথায় আছেন, কেমন আছেন, সেটিও তাদের জানা নেই। ওসি মোয়াজ্জেমের মা মনোয়ারা বেগম বলেন, আমার ছেলে জীবনে কোনো অন্যায় কাজ করেনি। তাকে ফাঁসানো হয়েছে। আমার ছেলে নিরাপদে ফিরে আসুক, এটাই আমার দাবি। নুসরাত হত্যার বিচার হোক। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হোক। নুসরাত যখন চিকিৎসাধীন ছিলেন তখনও আসামিদের গ্রেপ্তার না করে মামলা দায়ের বিলম্বিত করার চেষ্টার অভিযোগ রয়েছে ওসি মোয়াজ্জেমের বিরুদ্ধে। ৮ এপ্রিল নুসরাতের মৃতু্যর পর প্রধানমন্ত্রী এ ঘটনায় কোনো আসামি ছাড় পাবে না ঘোষণা দিলে ওসি মোয়াজ্জেমের ভিডিও ছড়ানোর অভিযোগ সামনে চলে আসে। এরপর গত ১৫ এপ্রিল সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ব্যারিস্টার সায়েদুল হক সুমন বাদী হয়ে তার বিরুদ্ধে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনে মামলা দায়ের করেন। ওসি মোয়াজ্জেম হোসেনের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলাটি পুলিশ বু্যরো অফ ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)কে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। একপর্যায়ে ফেনীর সোনাগাজী থানা থেকে তাকে প্রত্যাহার করে সাময়িক বরখাস্ত করা হয় এবং রংপুর রেঞ্জে তাকে সংযুক্ত করা হয়। রংপুর রেঞ্জে যোগ দিলেও ঈদের পর তাকে আর খুঁজে পাচ্ছে না পুলিশ। গত ২৬ মে ঢাকার সাইবার ট্রাইবু্যনালের বিচারক মোহাম্মদ আসসামস জগলুল হোসেন গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন। ১৭ জুন পরোয়ানা তামিল সংক্রান্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেয়া হয়। ওসি মোয়াজ্জেমের ভাই আরিফুজ্জামান খন্দকার বলেন, ওয়ারেন্ট জারির (২৬ মে) পরে আর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি ভাই। আগে নিয়মিত কথা হতো। এখন কোথায় আছেন, কেমন আছেন জানি না। তিনি বলেন, এলাকার মানুষের কাছে খোঁজ নেন, আমার ভাইয়ের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই। কর্মজীবনেও কোনো অপরাধের তথ্য নেই। সাধারণ জীবনযাপন করেন। এ ঘটনার পর নানারকম কথা শুনতে হচ্ছে। তবে ওসি মোয়াজ্জেমের ছোট ভাইয়ের স্ত্রী উম্মেহানি দাবি করেন, নুসরাতের শ্লীলতাহানির ঘটনায় জড়িতদের আটক করা সহজ ছিল না। ভাই সেটি করতে পেরেছিলেন নুসরাতে বক্তব্যের ভিত্তিতে। আমাদের ধারণা তিনি সেফটি ডকুমেন্ট হিসেবে ভিডিওটি ধারণ করেছিলেন। তবে তিনি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ করেননি। টেবিলের ওপর ফোন রেখে বাথরুমে গিয়েছিলেন। এই ফাঁকে তার মোবাইল থেকে ভিডিওটি হস্তান্তর হয়েছিল।