ঘুষ নেয়ার অভিযোগ পারলে প্রমাণ করুন: এনামুল

প্রকাশ | ১২ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
খন্দকার এনামুল বাসির
ঘুষ লেনদেনের কথোপকথনে ব্যবহৃত কণ্ঠ নিজের নয় বলে দাবি করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পরিচালক খন্দকার এনামুল বাসির। তিনি বলেছেন, 'এটি সম্পূর্ণ বানোয়াট।' মঙ্গলবার দুপুরে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ দাবি করেন। এ সময় নারী নির্যাতনের অভিযোগে দায়িত্ব থেকে প্রত্যাহার হওয়া পুলিশের উপমহাপরিদর্শক (ডিআইজি) মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ঘুষ নেয়ার অভিযোগের বিষয়ে এনামুল বাসির বলেন, 'এটিও বানোয়াট অভিযোগ। কেউ পারলে প্রমাণ করে দেখাক।' এর আগে সকালে একটি গণমাধ্যমের কাছে এনামুল বাসির দাবি করেন, ডিআইজি মিজানের বিরুদ্ধে ৪ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ বিষয়ে দুপুরে তাকে (এনামুল বাসির) আবারও প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, 'বিষয়টি তদন্তাধীন। এখনই কোনো মন্তব্য করতে পারব না।' গত সোমবার ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছে তদন্তের তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে খন্দকার এনামুল বাসিরকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তবে তার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগে দুদক বিব্রত নয় বলে জানান সংস্থাটির চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, এনামুল বাসিরের বিরুদ্ধে যে অভিযোগ, সেটি অসদাচরণ। এতে দুদক বিব্রত নয়। ব্যক্তির দায় প্রতিষ্ঠানের নয়। দুদকের ৮৭৪ জন কর্মীর সততার নিশ্চয়তা কমিশন দিতে পারে না। এনামুল বাসিরের সঙ্গে ডিআইজি মিজানুর রহমানের কথোপকথন নিশ্চিত হতে অডিও রেকর্ড ফরেনসিক পরীক্ষা করতে হবে। তা ছাড়া মিজানুর ঘুষ দিয়েছেন, তা প্রমাণিত হলে দুদক মামলা করবে বলে জানান তিনি। এনামুল বাসিরের বিরুদ্ধে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির আহ্‌বায়ক করা হয়েছে কমিশনের সচিব মো. দিলওয়ার বখতকে। অন্য সদস্যরা হলেন মহাপরিচালক (লিগ্যাল) মো. মফিজুর রহমান ভূঞা ও মহাপরিচালক (প্রশাসন) সাঈদ মাহবুব খান। ডিআইজি মিজানুর রহমানের অবৈধ সম্পদের তদন্ত শুরু করেছিল দুদক। কিন্তু এই তদন্ত করতে গিয়ে দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাসির ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নিয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মিজানুর রহমান। মাস ছয়েক ধরে দুজনের মধ্যে এ নিয়ে অনেক কথাবার্তা হয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে প্রথমে ২৫ লাখ ও পরে ১৫ লাখ টাকা দিয়েছেন মিজানুর। কিন্তু ২ জুন খন্দকার এনামুল বাসির মিজানুরকে জানান, তিনি প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন। তবে দুদক চেয়ারম্যান ও কমিশনারের চাপে তাকে অব্যাহতি দিতে পারেননি। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে মিজানুর টাকা-পয়সা লেনদেনের সব কথা ফাঁস করে দেন। প্রমাণ হিসেবে হাজির করেন এনামুল বাসিরের সঙ্গে কথোপকথনের একাধিক অডিও রেকর্ড। এ বিষয়ে গত রোববার প্রতিবেদন প্রচার করে বেসরকারি টিভি চ্যানেল এটিএন নিউজ। এনামুল বাসির অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। গতকালও তিনি বলেন, অডিও রেকর্ডটি বানোয়াট। তিনি টাকা-পয়সা নেননি। তিনি গত মাসের শেষ দিকে প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন এবং মিজানুরের বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করেছেন। মিজানুর রহমান বলেন, তিনি খন্দকার এনামুল বাসিরকে একটা স্যামসাং ফোন কিনে দিয়েছিলেন শুধু তার সঙ্গে কথা বলার জন্য। তার গাড়িচালক হৃদয়ের নামে সিমটি তোলা। এতে দুজনের কথা ও খুদে বার্তা বিনিময় হয়েছে। ডিআইজি মিজানুর ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত কমিশনার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। গত জানুয়ারির শুরুর দিকে তাকে প্রত্যাহার করে পুলিশ সদর দপ্তরে সংযুক্ত করা হয়। বিয়ে গোপন করতে নিজের ক্ষমতার অপব্যবহার করে দ্বিতীয় স্ত্রী মরিয়ম আক্তারকে গ্রেপ্তার করানোর অভিযোগ উঠেছিল তার বিরুদ্ধে। তখন তার বিরুদ্ধে নারী নির্যাতনের অভিযোগ ওঠে। মিজানুরের বিরুদ্ধে এক সংবাদপাঠিকাকে প্রাণনাশের হুমকি ও উত্ত্যক্ত করার অভিযোগে বিমানবন্দর থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) রয়েছে। গত বছরের ৩ মে অবৈধ সম্পদসহ বিভিন্ন দুর্নীতির অভিযোগে মিজানুরকে দুদক কার্যালয়ে প্রায় সাত ঘণ্টা জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। প্রাথমিক অনুসন্ধান প্রতিবেদনে মিজানুর রহমান ও তার প্রথম স্ত্রী সোহেলিয়া আনারের আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ কোটি টাকারও বেশি সম্পদের খোঁজ পায় দুদক। মিজানুরের নামে ৪৬ লাখ ৩২ হাজার ১৯১ টাকা এবং স্ত্রীর নামে ৭২ লাখ ৯০ হাজার ৯৫২ টাকার অসংগতিপূর্ণ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের খোঁজ পাওয়ার কথা দুদকের বরাত দিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশ পায়। তদন্ত শুরু হওয়ার এক বছরের মাথায় দুদক পরিচালকের বিরুদ্ধে ঘুষ নেয়ার এই অভিযোগ পাওয়া গেল।