মাতৃভাষা দিবসে জামায়াতের আমির

ইতিহাসের নামে আমরা আর কোনো গল্প দেখতে চাই না

প্রকাশ | ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
'ইতিহাসের নামে আমরা আর কোনো গল্প দেখতে চাই না। ইতিহাসটা উঠে আসুক' উলেস্নখ করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, ইতিহাসে যার যেখানে জায়গা রয়েছে, সেটা অবশ্যই দিতে হবে। আপনার ভালো লাগুক কিংবা না লাগুক, এরই নাম ইতিহাস। যদি ভালো লাগার মানুষকে সামনে নিয়ে আসেন, আর ভালো না লাগার মানুষকে যদি ফেলে দেন; এটা ইতিহাস নয়, এটা হবে গল্প।' শুক্রবার জাতীয় প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি। আমরা রাষ্ট্রে কোনো বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে চাই না বলে মন্তব্য করে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, 'কিন্তু আমাদের সঙ্গে কেউ যদি খেলে, তাহলে আমরা কারও দাবার ঘুঁটি হব না। কেউ আমাদের সঙ্গে খেলবেন, তা পছন্দ করি না। শুধু আমাদের সঙ্গে না, এ দেশের একজন নাগরিকের সঙ্গেও যেন কেউ খেলাধুলা না করে। আমরা ফ্যাসিস্ট আমলে একটা কথা শুনতাম খেলা হবে, ওই খেলা আর দেখতে চাই না।' ফ্যাসিবাদের পতন হলেও এখনো চাঁদাবাজি-দখলদারিত্ব বন্ধ হয়নি উলেস্নখ করে শফিকুর রহমান বলেন, 'চব্বিশের নিহত ও আহতদের রক্ত, জীবন, ইজ্জত ও আবেগকে অপমানিত করবেন না। কিন্তু আমরা দেখছি কতিপয় কাজ এখনো বন্ধ হচ্ছে না। আমরা দেশবাসীকে আহ্বান জানাব। আমরা বারবার আহ্বান জানিয়ে যাচ্ছি। কিন্তু এ আহ্বান কেয়ামত পর্যন্ত জানাব না। কারণ জুলুমটা পুরো জাতির ওপর হচ্ছে। ঘাটে ঘাটে যে চাঁদাবাজি হয়, এর কারণে দ্রব্যমূল্য বহুগুণ বেড়ে যায়। এর চাপ দেশের সব মানুষের ওপর পড়ে। আমরা কেন অন্যায়কে প্রশ্রয় দেব, নীরবে সহ্য করব। এ ব্যাপারে আমাদের সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।' দলমতনির্বিশেষে সবাইকে চাঁদাবাজি, দখলদারিত্ব বন্ধ করতে এগিয়ে আসার অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, 'জাতিকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে দিন। আবার যেন ফ্যাসিবাদের নতুন ধারা, অধ্যায় তৈরি না হয়। তার থেকে ফিরে আসুন। ফিরে না এলে আমাদের লড়াই অব্যাহত থাকবে।' ভুল করলে সমালোচনা করার অনুরোধ জানিয়ে জামায়াতের আমির বলেন, 'জোর করে আমাদের নামে কেউ কোনো ভুল তৈরি করলে তা মানব না। আমরা যেটা করি না, মানি না, সেটা যদি আমাদের নামে চালান দেওয়া হয়, তার প্রতিবাদ করা আমাদের দায়িত্ব। আপনার ভাষায় সমালোচনা করুন কিন্তু সেটাতে সত্যতা, যথার্থতা থাকবে হবে।' মানবতাবিরোধী অপরাধের সাজাপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এ টি এম আজহারুল ইসলামের ওপর আওয়ামী লীগ সরকার জুলুম করেছে, মিথ্যা অপবাদ দিয়ে 'ক্যাঙ্গারু কোর্টে' তাকে সাজা দেওয়া হয়েছে বলেও উলেস্নখ করেন দলটির আমির। তিনি বলেন, 'পটপরিবর্তনের সপ্তম মাসে আমরা আছি, এখনো কেন তাকে হাজতে থাকতে হবে? মনের কষ্ট থেকে বলেছি, আমার এখন বাইরে থাকার কোনো সার্থকতা নেই। প্রতিবাদে আমি স্বেচ্ছায় জেলে যেতে চাই। লাখো কর্মী আমার সঙ্গে জেলে যাওয়ার কথা বলেছেন। আমি তাদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের বলছি, লাখো লাগবে না। আমি একাই যাব। এ জমিনকে ঠিক করার জন্য আমার সহকর্মীদের বাইরে থাকতে হবে। সবাই ভেতরে থাকলে জঞ্জাল পরিষ্কার করবে কে, আমি মজলুমের প্রতীক হিসেবে জেলে থাকি।' শফিকুর রহমান আরও বলেন, 'বিভিন্ন মহল থেকে আমাকে অনুরোধ করা হয়েছে, অনেক ধৈর্য ধরেছেন, আর একটু ধৈর্য ধরুন।' আগামী ২৫ ফেব্রম্নয়ারি এ টি এম আজহারুল ইসলামের রায়ের পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) চেয়ে আবেদনের শুনানি আগামী ২৫ ফেব্রম্নয়ারি সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে হওয়ার কথা রয়েছে। ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস থেকে জামায়াতের প্রয়াত নেতা গোলাম আজমকে মুছে ফেলা হয়েছে বলে দাবি করে শফিকুর রহমান বলেন, 'ভাষা আন্দোলনে অধ্যাপক গোলাম আজম সাহেবের যতটুকু অবদান ততটুকু দিতে অসুবিধা কোথায়? বিচারপতি আবদুর রহমান চৌধুরী ভাষা আন্দোলনের স্মারকের ড্রাফট করেছিলেন, তাকে কোথাও স্বীকৃতি দেওয়া হচ্ছে না কেন? বাংলাদেশের (তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের) ইসলামী সাংস্কৃতিক সংগঠন (তমদ্দুন মজলিশ) ইতিহাস থেকে বিলীন কেন? যার যেখানে জায়গা, তাকে সেখানে জায়গা করে দিতে হবে। তাহলে এ জাতির মধ্যে বারবার বীর জন্ম নেবে। বীরদের স্বীকৃতি না দিলে সুবিধাবাদী কাঙাল জন্ম নেবে। যারা গরিবের ধন লুটে খাবে।' ঢাকা মহানগর দক্ষিণ জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুস সবুর ফকিরের সভাপতিত্বে এবং সেক্রেটারি জেনারেল শফিকুল ইসলাম মাসুদের সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য রাখেন দক্ষিণের নায়েবে আমির হেলাল উদ্দিন, কেন্দ্রীয় মজলিশে শূরার সদস্য আবদুল মান্নান, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (একাংশ) সভাপতি শহীদুল ইসলাম প্রমুখ।