শনিবার শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয় -যাযাদি
নতুন বই এসেছে ১৪৪টি
সরকারি ছুটির দিন মানেই বইমেলার শিশুপ্রহর। আর শিশুপ্রহর মানেই বাচ্চাদের জন্য বিশেষ কিছু। ছুটির দিনগুলোতে শিশুপ্রহরের কারণে কোমলমতিদের পদচারণায় মুখর থাকে মেলা প্রাঙ্গণ। গতবছরও শিশুপ্রহরে সিসিমপুরের শিকু, ইকরি, হালুম, টুকটুকিদের সঙ্গে খুনসুটি, আনন্দে মত্ত ছিল শিশুরা। তবে এবার নেই সিসিমপুরের আয়োজন। তবুও চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা ও বই কেনাতে বেশ প্রাণোচ্ছল শিশুরা।
শনিবার বিকেলে বইমেলার ২২তম দিনে মেলা প্রাঙ্গণ ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বেলা ১১টায় মেলা শুরু হওয়ায় তখন থেকেই মানুষের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দর্শনার্থীদের আগমন বেড়েছে আরও কয়েকগুণ। তবে সন্ধ্যার দিকে এক পশলা বৃষ্টি ছুঁয়ে যায় বইমেলা। এতে পাঠক-দর্শনার্থীকে পড়তে হয় বেকায়দায়।
এদিন সকাল সাড়ে দশটায় শিশু-কিশোর চিত্রাঙ্কন, আবৃত্তি ও সংগীত প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করা হয়। অনুষ্ঠানে স্বাগত ভাষণ দেন বাংলা একাডেমির সচিব ড. মো. সেলিম রেজা। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. নিয়াজ আহমেদ খান। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
সংশ্লিষ্টরা জানান মেলার ২২তম দিনে নতুন বই এসেছে ১৪৪টি। বিকালে বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় "কায়কোবাদের সাহিত্যে 'শ্মশানে'র চিত্রাবলি" শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইমরান কামাল। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন হাবিব আর রহমান। সভাপতিত্ব করেন আবু দায়েন।
প্রাবন্ধিক বলেন, কায়কোবাদ স্বশিক্ষিত মানুষ হিসেবেই নিজেকে গড়ে তুলেছিলেন। কবি হিসেবে কায়কোবাদের আবির্ভাব তখন, যখন বাংলার সাহিত্য-ধারা হিসেবে কাহিনিকাব্যের প্রভাব ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসতে শুরু করেছে। কবি হিসেবে কায়কোবাদ নিজেকে চিহ্নিত করেছিলেন 'পুরাতন' পথের পথিক হিসেবেই। কায়কোবাদ কাহিনি-নির্ভর কবি। তাঁর প্রায় সকল কবিতা ও কাব্যই কাহিনির আশ্রয়ে শিল্পিত হয়। তাঁর প্রতিটি কাব্যগ্রন্থের কবিতা ও কাব্যকাহিনির ভাব ও বিষয়বস্তু গাঁথা হয় সুনির্দিষ্ট প্রতীকী শব্দের সাহায্য।
আলোচক বলেন, কবি কায়কোবাদের মধ্যে খুব অল্প বয়সেই স্বদেশ চেতনা জাগ্রত হয়েছিল। তিনি কেবল কাহিনিভিত্তিক কাব্যেরই কবি নন, গীতিকাব্যেরও কবি। দেশপ্রেমের যথার্থ আবেগ এবং অনগ্রসর মুসলমানদের জন্য বেদনাবোধ ছিল কায়কোবাদের সমাজসচেতন মনের পরিচয়। তিনি আন্তরিকভাবে হিন্দু-মুসলমানের মিলন কামনা করেছিলেন। গীতিকবিতার জন্য কায়কোবাদ বাংলা সাহিত্যজগতে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।
সভাপতির বক্তব্যে আবু দায়েন বলেন, কবি কায়কোবাদ বাংলাদেশের মাটি ও মানুষের প্রতিনিধিত্ব করেন। কবি হিসেবে তিনি ছিলেন অসাম্প্রদায়িক। তাঁর মধ্যে যে শাশ্বত মানবিকতার বোধ ছিল, তা-ই একজন কবি বা সাহিত্যিকের মূল চেতনার জায়গা।
লেখক বলছি মঞ্চে নিজেদের নতুন বই নিয়ে আলোচনা করেন-প্রাবন্ধিক ও গবেষক হাবিব আর রহমান এবং কবি আমিরুল মোমেনীন মানিক।
সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে কবিতা আবৃত্তি করেন কবি মালেক মুস্তাকিম, কবি ড. শাহনাজ পারভীন, কবি মোশাররফ হোসেন খান এবং কবি মমতাজ রহমান। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী লায়লা পারভীন কেয়া, নায়লা তারাননুম চৌধুরী এবং শাহিদা পারভীন রেখা। আজ ছিল মো. মনজুরুল আলমের পরিচালনায় সাংস্কৃতিক সংগঠন 'দলদ্বীপ শিখা' এবং মো. শহীদুল ইসলাম চৌধুরীর পরিচালনায় লিগ্যাল এইড বিষয়ক মঞ্চনাটিকা 'আলোর পথ', জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থা, আইন ও বিচার বিভাগ-এর পরিবেশনা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন মো. ফরিদ উদ্দিন (তবলা), ডালিম কুমার বড়ুয়া (কী-বোর্ড) মো. সুমন কুমার সাহা (অক্টোপ্যাড)।
আগামীকালের অনুষ্ঠান
আজ মেলা শুরু হবে বিকেল ৩টায় এবং চলবে রাত ৯টা পর্যন্ত। বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হবে 'গণ-অভু্যত্থান ও নারী' শীর্ষক
আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করবেন মির্জা তাসলিমা সুলতানা। আলোচনায় অংশ নেবেন শাওলী মাহবুব এবং মুশাররাত শর্মি হোসেন। সভাপতিত্ব করবেন রেহনুমা আহমেদ।