অমরএকুশে বইমেলার শেষ সময়ে নতুন বইয়ের খোঁজে স্টলগুলোতে ভিড় করছেন পাঠকরা -ফোকাস বাংলা
শেষ সপ্তাহে নতুন বইয়ের পাশাপাশি ক্রেতা-দর্শনার্থীর ভিড়ে জমজমাট হয়ে উঠেছে বইমেলা। মেলার শেষ দিনগুলোতে নতুন প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যাও বাড়ছে। এ পর্যন্ত সেই সংখ্যা ছাড়িয়েছে আড়াই হাজার। এসব বইয়ের মধ্য থেকে পছন্দের বই সংগ্রহে মেলার শেষ দিকেই আসছেন বইপ্রেমীরা। স্থানীয়দের পাশাপাশি দূর-দূরান্ত থেকে আসছেন ক্রেতা-দর্শনার্থী। তবে এবারের মেলা নিয়ে শুরু থেকে নানা ধরনের অসন্তুষ্টি রয়েছে। মঙ্গলবার বিক্রেতারা বললেন, বিক্রি কিছুটা বেড়েছে। তবে বরাবরের মতো নয়। আর মেলার পরিবেশ নিয়েও অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরা। বাঙালি প্রকাশনীর প্রকাশক আরিফ নজরুল বললেন, এবার দুই দিন বৃষ্টির বিড়ম্বনা ছিল। তবে বড় বিড়ম্বনায় পড়তে হচ্ছে বিভিন্ন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন ও স্টল নিয়ে। ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান এবার সারা মেলায় এমন করে তাদের স্পনসরদের বিজ্ঞাপনের বোর্ড টানিয়েছে যে এগুলো দৃষ্টির প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছে। বোঝাই যাচ্ছে না এটি বইমেলা, না বাণিজ্য মেলা।
একই ধরনের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন ইত্যাদি প্রকাশনীর প্রকাশক জহিরুল আবেদীন জুয়েল, শিকড় প্রকাশনীর ব্যবস্থাপক ফারহানা রহমানসহ অনেকে। এছাড়া এ বছর নিয়মিত বইয়ের ক্রেতারা মেলায় আসেননি বলে তাদের ভাষ্য। অন্যদিকে মেলা শেষ হতে চললেও লিটলম্যাগ সম্পাদক-লেখকদের কোনো আড্ডা চোখে পড়েনি এখনো।
মঙ্গলবার বগুড়া থেকে মেলায় এসেছিলেন, পারভীন রহমান। তার হাতে একটা কাগজে লেখা বেশকিছু বই ও প্রকাশনীর নাম। তিনি তালিকা ধরে বিভিন্ন স্টলে ঘুরে ঘুরে বই কিনছেন। তিনি বলেন, 'প্রতি বছরই তিনি বইমেলা থেকে বেশ কিছু বই কেনেন। সেগুলো গ্রামের স্কুলের ছেলেমেয়েদের উপহার হিসেবে দেন। বই কেনার জন্য তার বরাদ্দ এ বছর ১৫ হাজার।
পারভীনের মতো অনেকেই মেলার শেষ সপ্তাহে এসেছেন বই কিনতে। প্রকাশনীগুলোর বিক্রয়কর্মীরা বলছেন, একুশে ফেব্রম্নয়ারির পর থেকে মেলায় বিক্রি বেড়েছে। তবে গত বছরের মতো নয়। মঙ্গলবার ছিল বইমেলায় ২৫ তম দিন। এদিন মেলা শুরু হয় বিকাল ৩টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।
মঙ্গলবার ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত হয়েছে ইবরাহীম খাঁ'র ভ্রমণ সাহিত্য 'ইস্তাম্বুল যাত্রীর পত্র', প্রচ্ছদ করেছেন নাওয়াজ মারজান; মূল্য ৪০০ টাকা। কথাসাহিত্যিক শহীদ আখন্দ : আলাপন, স্মরণ, মূল্যায়ন গ্রন্থটি সংকলন ও সম্পাদনা করেছেন রাকিবুজ্জামান লিয়াদ, মূল্য রাখা হয়েছে ১৮০ টাকা। এ গ্রন্থটিরও প্রচ্ছদ করেছেন নাওয়াজ মারজান। এছাড়া প্রখ্যাত গীতিকার, সুরকার ও শিল্পী মোহাম্মদ রফিকে নিয়ে লেখা 'মোহাম্মদ রফি : তোমার তুলনা তুমি' শীর্ষক গবেষণা/প্রবন্ধ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে ঐতিহ্য। গ্রন্থটি লিখেছেন অনুবাদক খসরু চৌধুরী, প্রচ্ছদ করেছেন সেলিম হোসেন সাজু, মূল্য রাখা হয়েছে ৪৫০ টাকা।
এদিকে, বাংলা একাডেমির জনসংযোগ বিভাগ বলছে, এদিন বইমেলায় নতুন বই এসেছে ১০১ টি। এতে বইমেলায় নতুন বইয়ের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ২ হাজার ৬২২টি।
এদিন বিকালে মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'গণ-অভু্যত্থান, গ্রাফিতি এবং অপরাপর ভিসু্যয়াল কালচার' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মুনেম ওয়াসিফ। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন তাসলিমা আখতার এবং কামার আহমাদ সাইমন। সভাপতিত্ব করেন অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম।
প্রাবন্ধিক বলেন, জুলাই অভু্যত্থানের আগে এবং পরে দেওয়ালে দেওয়ালে আঁকা গ্রাফিতি, চিত্র ও লেখাগুলো থেকে বোঝা যায়, গত এক দশকের বেশি সময় আমরা যে ক্ষমতার জাঁতাকলের মধ্যে বসবাস করেছি, তরুণ প্রজন্ম সেই ক্ষমতার কর্তৃত্বকে ছুঁড়ে ফেলে দিতে চেয়েছে। জুলাই অভু্যত্থানের বেশিরভাগ গ্রাফিতি ও চিত্রগুলো গতানুগতিক শিল্পধারা অনুসরণ করেনি।
আলোচকদ্বয় বলেন, জুলাই গণ-অভু্যত্থানে দেওয়ালে আঁকা গ্রাফিতি ও চিত্রগুলো শুধু ক্ষমতার কেন্দ্রকেই নয়, বরং শিল্পের প্রতিষ্ঠিত সংজ্ঞা ও ভাষাকেও চ্যালেঞ্জ করেছে। মানুষের সহজাত ভাষা, চিন্তা ও সমষ্টিগত আবেগকে ধারণ করে এসব গ্রাফিতি হয়ে উঠেছে অভু্যত্থানের অন্যতম শক্তিশালী প্রকাশ-মাধ্যম। গণ-অভু্যত্থানের সময় গ্রাফিতির ভাষা, শ্লেষ ও ক্ষোভ ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে দাঁড়াবার সাহস জুগিয়েছে এবং ছাত্র, তরুণ, শ্রমিক ও সর্বস্তরের জনগণের মধ্যে ঐক্য গড়ে তুলতে ভূমিকা রেখেছে।
সভাপতির বক্তব্যে অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম বলেন, জুলাই অভু্যত্থানে দেওয়ালে কিংবা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যেসব গ্রাফিতি ও চিত্র প্রকাশিত হয়েছে, সেগুলোর শিল্পগত ও নান্দনিক বৈশিষ্ট্যের পাশাপাশি আরও নানামাত্রিক আলোচনা হতে পারে। এগুলোকে যদি যথার্থ স্থানে এবং মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করা যায়, তাহলে এর যে ব্যাখ্যাগত সম্ভাবনা দাঁড়াবে সেটা হবে অসীম ও অসামান্য।
গুণিজন স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫
বাংলা একাডেমি পরিচালিত চিত্তরঞ্জন সাহা, মুনীর চৌধুরী, রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই ও শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কারপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করেছে। ২০২৪ সালে প্রকাশিত বিষয় ও গুণমানসম্মত সর্বাধিক সংখ্যক বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কথাপ্রকাশ-কে চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার-২০২৫ দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালে প্রকাশিত বইয়ের মধ্য থেকে গুণমান ও শৈল্পিক বিচারে সেরা বইয়ের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান পাঠক সমাবেশ (পেস্নটো : জীবন ও দর্শন-আমিনুল ইসলাম ভুইয়া), ঐতিহ্য (ভাষাশহিদ আবুল বরকত : নেপথ্য-কথা- বদরুদ্দোজা হারুন) এবং কথাপ্রকাশ-কে (গোরস্তানের পদ্য : স্মৃতি ও জীবনস্বপ্ন-সিরাজ সালেকীন) মুনীর চৌধুরী স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ দেওয়া হয়েছে। ২০২৪ সালে গুণমান বিচারে সর্বাধিক সংখ্যক শিশুতোষ বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান কাকাতুয়া-কে রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই স্মৃতি পুরস্কার ২০২৫ দেওয়া হয়েছে।