দেশে এখন ভোটার ১২ কোটি ৩৭ লাখ

আমরা কারও এজেন্ডা বাস্তবায়নে আসিনি

ভোটার দিবসের অনুষ্ঠানে সিইসি

প্রকাশ | ০৩ মার্চ ২০২৫, ০০:০০

যাযদি রিপোর্ট
এ এম এম নাসির উদ্দীন
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, আমরা জাতির কাছে ওয়াদা দিয়েছি, আমরা নিরপেক্ষ নির্বাচন চাই। আমাদের ব্যক্তিগত কোনো এজেন্ডা নেই। আমরা অন্য কারও এজেন্ডা বাস্তবায়নে আসিনি। আমাদের এজেন্ডা হলো ১৮ কোটি মানুষের এজেন্ডা। আমাদের এজেন্ডা বাংলাদেশের এজেন্ডা। আমাদের এজেন্ডা বাংলাদেশিদের এজেন্ডা, একটা সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন করা। আমরা যে ওয়াদা দিয়েছি সেটা বাস্তবায়নে কাজ করছি। রোববার নির্বাচন ভবনে জাতীয় ভোটার দিবসের আলোচনায় অংশ নিয়ে সিইসি এসব কথা বলেন। ভোট সন্ত্রাস আখেরে সর্বনাশ ডেকে আনে জানিয়ে সিইসি বলেন, ভোট সন্ত্রাস করে আপাত দৃষ্টিতে জেতা যায়। কিন্তু আখেরে নিজের জন্য, দলের জন্য, দেশের জন্য সর্বনাশ ডেকে আনে। সন্ত্রাস করে আখেরে টেকা যায় না। আপাতদৃষ্টিতে মনে হয় জিতে গেলাম। কিন্তু আখেরে নিজের জন্য ভালো হয় না। দেশ ও দলের জন্য ভালো হয় না। এটা শুধু বাংলাদেশে নয়, সারাবিশ্বেই এর ফল ভালো হয় না। তাই আমার প্রত্যাশা ভোটে গোলযোগ করবেন না। আমরা ইনশাআলস্নাহ সর্বশক্তি দিয়ে ১৮ কোটি মানুষের পাশে আছি। দেশবাসীর কাছে আমার আবেদন, আপনারা আমাদের পাশে থাকুন। আপনাদের অধিকার প্রতিষ্ঠায় আমরা যুদ্ধে আছি। সময় হাতে বেশি নাই। সীমিত সময়ের মধ্যে আমরা খুব কষ্ট করে কাজ করে যাচ্ছি। সিইসি বলেন, নতুন বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখছি। আমরা যদি কোনো রকম পা পিছলে যাই, তাহলে তরুণদের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে। ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে চাই। ভোট নাগরিকের দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। এটা আমাদের বড় দায়িত্ব। আমি যেখানে যাই সবাই সালাম দিয়ে বলে, স্যার সারাদেশের মানুষ তাকিয়ে আছে। সারাদেশের মানুষের কাছে অনেক বড় প্রত্যাশা। এত বেশি প্রত্যাশা কারও প্রতি ছিল না। মানুষের প্রত্যাশা অনেক বেড়ে গেছে। সবার সহযোগিতা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি। সিইসি আরও বলেন, আমরা গ্রহণযোগ্য ভোট চাই। গ্রহণযোগ্য নির্বাচন চায় না এমন কেউ নেই। সবাই সুন্দর ক্রেডিবল নির্বাচন চায়। যত রাজনৈতিক দল আলোচনায় আসে সবাই বলে সুন্দর ভোট চাই। রমজানে সবাইকে সুষ্ঠু ভোটের ওয়াদা করতে বলে সিইসি বলেন, এখানে সব কর্মকর্তাদের বলছি। আপনারা সুষ্ঠু ভোটের ওয়াদা করবেন তো? আপনারা আমার সঙ্গে ওয়াদা করলেন। আশা করি এ ওয়াদা রক্ষা করবেন। অনেকে বলেছে আগে নানা পরিবেশ নিয়ে অনেকে কাজ করেছেন। এর আগে মরার ইলেকশন হয়েছে। এই মরা লাশ আর কত টানবো? আমরা যে কাজ করার ওয়াদা করেছি সেটা বাস্তবায়নে বিবেকের কাছে কাছে যেন পরিষ্কার থাকি। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব আখতার আহমেদ। এসময় অন্য চার কমিশনার উপস্থিত ছিলেন। দেশে এখন ভোটার ১২ কোটি ৩৭ লাখ এদিকে, প্রতিবারের মত এবারও জাতীয় ভোটার দিবসে হালনাগাদ ভোটার তালিকা প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার এ এম এম নাসির উদ্দিন জানিয়েছেন, দেশে এখন চূড়ান্ত ভোটার সংখ্যা হচ্ছে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪। রোববার আগারগাঁওয়ে জাতীয় ভোটার দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ তথ্য জানান। ইসি কর্মকর্তারা জানান, ২০২৪ সালের ২ মার্চ দেশে মোট ভোটার ছিল ১২ কোটি ১৮ লাখ ৫০ হাজার ১৬০ জন। ওই বছর শেষে যোগ হয় আরো ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ জন। এছাড়া রিভাইজিং অথরিটির যাচাই-বাছাইয়ে যোগ হয় আরো ৪৮ হাজার ৭৬২ জন। সবমিলিয়ে বর্তমানে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৭ লাখ ৩২ হাজার ২৭৪ জন; যাদের মধ্যে ৬ কোটি ৩৩ লাখ ৬১ হাজার ৬১৫ জন পুরুষ। নারী ভোটারের সংখ্যা ছয় কোটি তিন লাখ ৬৯ হাজার ৬৬৫ জন, আর হিজড়ার সংখ্যা ৯৯৪। সবমিলিয়ে এক বছরে ভোটার বেড়েছে ১ দশমিক ৫৪ শতাংশ। ভোটার দিবস উপলক্ষে রোববার নির্বাচন ভবনের সামনে শোভাযাত্রা বের করে নির্বাচন কমিশন। সেখানে সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, 'অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানে কমিশন প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।' হালনাগাদে অর্ধ কোটি নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ এদিকে, এবার ভোটার তালিকা হালনাগাদে ১৭ বছর বয়সী এবং ভোটারযোগ্য বাদ পড়া মিলিয়ে প্রায় অর্ধ কোটি নাগরিকের তথ্য সংগ্রহ করেছে নির্বাচন কমিশন। পাশাপাশি বিদ্যমান তালিকা থেকে বাদ যাবেন- এমন ১৫ লাখের বেশি মৃত ভোটারের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। ইসির তথ্য অনুযায়ী, চলমান ভোটার হালনাগাদ কর্মসূচিতে ৪৯ লাখ ৭৬ হাজার ৮৪৫ জনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, যদিও লক্ষ্য ছিল ৬১ লাখের ৮৯ হাজার ৩৭৫ জন। তথ্য সংগ্রহের পরিসংখ্যান বাদ পড়া ভোটার: ৩১ লাখ ২৭ হাজার ৫১৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৪,৬৪,৩৮০ জন, নারী ১৬,৬২,৯৯২ জন এবং হিজড়া ১৪৭ জন। নতুন ভোটার: ১৮ লাখ ৪৯ হাজার ৩২৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯ লাখ ৫৩ হাজার ৩১২ জন; নারী ৮ লাখ ৯৫ হাজার ৭৭৬ জন এবং হিজড়া ২৩৮ জন। মৃত ভোটার কর্তন:১৫ লাখ ২৭ হাজার ৪২৪ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৮,৭৩,৪২৯ জন; নারী ৬,৫৩,৪০৯ জন এবং হিজড়া ৫৮৮ জন। গত ২০ জানুয়ারি বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটার তালিকা হালনাগাদের জন্য তথ্য সংগ্রহের কাজ শুরু করেছিল নির্বাচন কমিশন। ২০০৮ সালের ১ জানুয়ারি অথবা তার আগে যাদের জন্ম, যারা বাদ পড়েছেন, তাদের ভোটার তালিকাভুক্তি ও মৃত ভোটারদের তালিকা থেকে বাদ এবং আবাসস্থল পরিবর্তনের কারণে স্থানান্তর করার তথ্য থাকবে হালনাগাদে। গত ২ জানুয়ারি গত বছরের খসড়া ভোটার তালিকা প্রকাশ করে ইসি। তাতে নতুন করে যুক্ত হয়েছে ১৮ লাখ ৩৩ হাজার ৩৫২ জনের নাম। তাতে ভোটার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১২ কোটি ৩৬ লাখ ৮৩ হাজার ৫১২ জন। আগামী ২ মার্চ তাদের চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ হবে। এবার হালনাগাদে যারা যুক্ত হচ্ছেন, তাদের কাজ জুনের মধ্যে শেষ করতে চায় ইসি। সেক্ষেত্রে নতুনদের যোগ করে এবং মৃতদের বাদ দিয়ে ত্রয়োদশ সংসদ নির্বাচনের আগে চূড়ান্ত ভোটার সংখ্যা জানা যাবে। ডিসেম্বরে ভোট হলে তথ্য সংগ্রহ করা অনেকেই ভোটার তালিকাভুক্ত হতে পারবে না। আর ২ জানুয়ারির পরে ভোট হলে নতুন করে যাদের তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে, তাদের সবাই তালিকাভুক্ত হতে পারবে।