ফের শিক্ষার্থীরা আন্দোলনে

বিতর্ক পিছু ছাড়ছে না দারুল ইহসানের

২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। তখন থেকে সরকার নানাভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। ২০১৬ সালে হাইকোর্ট এক আদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০১৯, ০০:০০

এস এম মামুন হোসেন
সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগে বন্ধ হয়ে যাওয়া দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে নতুন করে বিতর্ক সামনে এসেছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে পড়াশোনা শেষ করা শিক্ষার্থীদের সার্টিফিকেট বৈধ নাকি অবৈধ এই মর্মে নেয়া সর্বশেষ সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে তারা আন্দোলনে নেমেছেন। তাদের দাবি, রাষ্ট্র কর্তৃক বৈধতা দেয়ার কারণেই তারা ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠান আইন বিরোধী কাজ করলে তার দায় কেন শিক্ষার্থীদের ঘাড়ে চাপবে। এ অভিযোগ করে তারা তাদের সার্টিফিকেটের বৈধতা দাবি করছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়টি ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হলেও ১৯৯৩ সালে এটি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অনুমোদন নিয়ে ২০১৬ পর্যন্ত কার্যক্রম পরিচালনা করে। প্রথম দিকে নিয়ম মেনে কাজ করলেও ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে সার্টিফিকেট বাণিজ্যের অভিযোগ ওঠে। তখন থেকে সরকার নানাভাবে প্রতিষ্ঠানটিকে সঠিক পথে আনার চেষ্টা করলেও তা সফল হয়নি। ব্যাপকভিত্তিক অভিযোগের পর ২০১৬ সালে হাইকোর্ট এক আদেশের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ করে দেয়। কিন্তু জটিলতা বাধে প্রতিষ্ঠানটি থেকে পড়াশোনা শেষ করা হাজার হাজার শিক্ষার্থীর কি হবে তা নিয়ে। বিষয়টি হাইকোর্টে গড়ালে কোর্ট সনদ অর্জনকারীদের বিষয়ে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত গ্রহণের আদেশ প্রদান করেন। যার প্রেক্ষিতে ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে সিদ্ধান্ত আসে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সনদ অর্জনকারীদের এমপিওভুক্তি সংক্রান্ত সকল কার্যক্রম মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর গ্রহণ করবে। যা উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদধারীদের খুশি করে। কিন্তু ওই সিদ্ধান্তের পরপরই আবার তা স্থগিতও করা হয়। অর্থাৎ উক্ত সনদ এখন আর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তর গ্রহণ করতে পারবে না। ফলে দারুল ইহসানের সনদধারীরা চাকরির ক্ষেত্রে সমস্যার মুখে পড়েন। এতে তারা কয়েকবার সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে দৌড়াদৌড়ি করেও কোনো সমাধান না পেয়ে 'দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় সনদের এমপিও বঞ্চিত ফোরাম' নামের সংগঠনের ব্যানারে আন্দোলন শুরু করেন। পরে মঙ্গলবারও ওই সংগঠনের ব্যানারে তারা জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন। আন্দোলনকারীরা বলছেন রাষ্ট্র বৈধতা দেয়ার কারণেই তারা সেখানে ভর্তি হয়েছিলেন। প্রতিষ্ঠান অন্যায় করেছে, রাষ্ট্র ব্যবস্থা নিয়েছে। এতে তাদের কোনো আপত্তি নেই। কিন্তু তাদের সনদ বৈধ না হলে তারা এখন কোথায় যাবেন? এছাড়া আইন মন্ত্রণালয় থেকে ও দারুল ইহসান থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত (আদালত কর্তৃক নিষিদ্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত) সনদধারীদের সনদ গ্রহণে আইনগত কোনো জটিলতা নেই বলে মত দিয়েছে। আইন মন্ত্রণালয় যেহেতু আইনগত জটিলতা নেই বলে মতামত প্রদান করেছে, সেহেতু কে বা কারা কোন উদ্দেশ্যে সনদের বৈধতা আটকে রেখেছেন তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন আন্দোলনকারীরা। এ বিষয়ে জানতে চাইলে দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয় সনদের এমপিও বঞ্চিত ফোরামের আহবায়ক মোহাম্মদ ছিয়ামুল হক যায়যায়দিনকে বলেন, 'মহামান্য আদালত এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে সিদ্ধান্ত নিতে বলেছে। সনদের বৈধতা নিয়ে কোনো আইনগত জটিলতা আছে কিনা সে বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় জানতে চাইলে আইন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে ২০১৬ সাল অর্থাৎ আদালত নিষিদ্ধ করার আগ পর্যন্ত এখানে পড়ুয়াদের সনদ বৈধ। কারণ এর আগ পর্যন্ত ওই প্রতিষ্ঠানের বৈধতা রাষ্ট্রই দিয়েছে। ফলে শিক্ষার্থীদের কোনো অপরাধ থাকতে পারে না। আইন মন্ত্রণালয়ও সে মোতাবেক সিদ্ধান্ত দিয়েছিল। কিন্তু পরে আবার তা স্থগিত করেছে। আমার পড়াশোন অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এখন আমি কি চাইলেই আবার নতুন করে পড়াশোনা করতে পারব? এটা আমার একার সমস্যা নয়। কয়েক হাজার মানুষ এ সমস্যায় আক্রান্ত। রাষ্ট্র নিশ্চয় কোনো প্রতিষ্ঠানের ভুলের দায় সাধারণ শিক্ষার্থীদের উপর চাপিয়ে দিতে পারে না। তার চেয়ে বড় বিষয় এখানে আইনগত কোনো জটিলতা নেই। ফলে আমাদেরকে বিপদে ফেলে রাষ্ট্রের তো কোনো লাভ হতে পারে না। আমরা রাষ্ট্রের বৈধ নাগরিক। আমাদের সমস্যা দূর করাই রাষ্ট্রের কাজ। আমাদেরকে আমাদের রাষ্ট্র বিপদে ফেলবে এমনটি ভাবতে পারি না।' এ বিষয়ে জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুলস্নাহ আল হাসান চৌধুরী যায়যায়দিনকে বলেন, 'বিষয়টিতে আদালতের আদেশ আছে। আমরা সে আলোকেই সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছি। আমার জানামতে কোথাও কোনো সমস্যা থাকার কথা নয়। আদালতের রায়ের ভেতর থেকে যদি তাদের জন্য কিছু করার থাকে তবে তা আমরা করবো।' শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার উপ-সচিব বেগম জিন্নাত রেহানা যায়যায়দিনকে বলেন, 'আদালতের রায়ের মধ্যে একটি অংশ ছিল, সেখানে বলা হয়েছে যে প্রতিষ্ঠানে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সনদধারী চাকরি করবেন সেখানকার কর্তৃপক্ষ যদি প্রার্থীকে যোগ্য মনে করে তবে তিনি যোগ্য বলেই বিবেচিত হবেন। কিন্তু মন্ত্রণালয় থেকে ২০১৮ সালের ২৮ আগস্ট যে সিদ্ধান্ত প্রজ্ঞাপন আকারে জারি হয়েছিল তাতে এটি বাদ পড়ে গিয়েছিল। যা আদালতের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হতে পারে বিবেচনায় স্থগিত করা হয়।' তবে এ বক্তব্য মানতে রাজি নন আন্দোলনকারীদের নেতা মোহাম্মদ ছিয়ামুল হক। তিনি যায়যায়দিনকে বলেন, 'আমাদের অনেকেই বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরি করছি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ আমাদেরকে যোগ্য মনে করেছেন বলেইতো তারা আমাদেরকে নিয়োগ প্রদান করেছেন। তাহলে আমাদেরকে কেন এমপিও দেয়া হচ্ছে না? আদালতের রায় অনুসারে আমরা যোগ্য বলেই চাকরি পেয়েছি। আমাদেরকে এমপিও না দেয়ার তো তাহলে কোনো কারণ থাকতে পারে না।'