ব্রিটিশ জরিপের তথ্য

কারখানার ভেতরেই নির্যাতনের শিকার হচ্ছে পোশাক শ্রমিকেরা

প্রকাশ | ১৫ জুন ২০১৯, ০০:০০ | আপডেট: ১৫ জুন ২০১৯, ০০:২২

যাযাদি ডেস্ক
যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি দাতব্য সংস্থা দাবি করেছে, বাংলাদেশের পোশাক শিল্পে কর্মরত শ্রমিকেরা কারখানার অভ্যন্তরে যৌন সহিংসতা, হয়রানি ও নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। বাংলাদেশের দুইশ' পোশাক কারখানার ওপর অ্যাকশন এইড ইউকে পরিচালিত সর্বশেষ জরিপে এই পর্যবেক্ষণ উঠে এসেছে। এ সপ্তাহে জেনেভায় অনুষ্ঠিত এক আন্তর্জাতিক শ্রম সম্মেলনে জরিপের ফলাফল প্রকাশ করে বিশ্বজুড়ে দরিদ্র নারীদের নিয়ে কাজ করা দাতব্য সংস্থাটি। তবে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি রুবানা হক বলেছেন, হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী যৌন হয়রানি প্রতিরোধের চেষ্টা করছেন তারা। যৌন হয়রানিসহ যে কোনো ধরনের সহিংসতা বন্ধে তারা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। অ্যাকশন এইড ইউকে'র তত্ত্বাবধানে পোশাক শ্রমিকদের সহায়তায় প্রকল্প পরিচালিত হচ্ছে। কর্মক্ষেত্রে নারীদের প্রতি আচরণ খতিয়ে দেখার অংশহিসেবে রাজধানী ঢাকার দুইশ'টি পোশাক কারখানায় জরিপ চালায় সংস্থাটি। জরিপে দেখা গেছে, উৎপাদন লক্ষ্য পূরণ করতে না পারায় নিপীড়নের শিকার হতে হয় নারী শ্রমিকদের। জরিপে অংশ নেয়া অনেকেই সহকর্মীকে কারাখানার ফ্লোরে যৌন হয়রানির শিকার হতে দেখেছেন। অনেকে আবার গর্ভবতী হওয়ার কারণে ছাঁটাইয়ের শিকার হয়েছেন। ঢাকার একটি কারখানায় কর্মরত নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শ্রমিক বলেন, 'উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হলে তারা আমাদের শরীরের নানাস্থানে হাত দেয়, ধাক্কা দেয়'। আরেক শ্রমিক বলেন, 'তারা প্রচুর গালাগালিও দেয়। আমরা ম্যানেজারের কাছে অভিযোগ করলেও তিনি এতে খুব বেশি গুরুত্ব দেন না। তার বদলে তিনি নিজেও গালি দেন আর ছাঁটাইয়ের হুমকি দেন। শুধু পরিবারের কথা চিন্তা করে আমরা সবাই কাজ চালিয়ে যেতে চাই। তারা যদি এ সব বন্ধ করে তাহলে আমরা শান্তিতে কাজ করতে পারি'। অ্যাকশন এইড ইউকের উপ-পরিচালক ফারাজ নাজির বলেন, 'বর্তমানে বিশ্বে কর্মক্ষেত্রে যৌন সহিংসতা ও হয়রানি রোধে আন্তর্জাতিক কোনো আইন নেই'। তিনি বলেন, বিশ্বে যেখানে প্রতি তিন নারীর একজন সহিংসতার শিকার হচ্ছে সেখানে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধের সক্ষমতা বাড়ানোর উদ্যোগ পর্যাপ্ত নয়। বিভিন্ন দেশের সরকারের আইনি উদ্যোগের অভাবই বলে দিচ্ছে, আমরা নারীদের জন্য ঠিক কতোটা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করছি। জরিপের ফলাফল প্রকাশের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে নারীর ক্ষমতায়নে ব্রিটিশ সরকারের প্রভাব কাজে লাগানোর আহ্বান জানিয়েছে অ্যাকশন এইড ইউকে। অ্যাকশন এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেছেন, 'অনেক পোশাক উৎপাদনকারীই ভবনের নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছে। এখন লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা নিয়ন্ত্রণের সময়। আমরা যে পোশাক পরছি তা তৈরির কাজে নিয়োজিত অনেক নারীর কাছেই লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতা এখনো প্রাত্যহিক বাস্তবতা'। মৌখিক নির্যাতনকে যৌন হয়রানি হিসেবে আখ্যা করা উচিত হবে না দাবি করে বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি রুবানা হক বলেন, সারাবিশ্বেই নারীরা যৌন হয়রানির মতো গুরুতর সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। এই সামাজিক ব্যাধির বিরুদ্ধে সব জায়গাতেই আন্দোলন দিন দিন জোরদারও হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) কর্মস্থলে যৌন হয়রানি নিয়ে একটি কনভেনশন গ্রহণ করতে যাচ্ছে, যেখানে সুনির্দিষ্টভাবে হয়রানির ব্যাখ্যার প্রয়োজন আছে। এতে সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট এবং প্রাসঙ্গিকতা থাকা অত্যন্ত জরুরি। রুবানা আরও বলেন, 'হাইকোর্ট প্রতিটি শিল্প কারখানায় যৌন হয়রানি প্রতিরোধ কমিটি রাখার নির্দেশনা দিয়েছে। আমরা হাইকোর্টের এই রায় বাস্তবায়নে কাজ করছি। আমরা তাদের বলছি ৫ সদস্যের এই কমিটিতে কারখানার ৩ জন এবং বাইরে থেকে ২ জন নারী সদস্য যারা যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে আওয়াজ তুলতে ঐক্যবদ্ধ, তারা এই কমিটিতে জায়গা পাবে।' বিজিএমইএ সভাপতির দাবি, তারা যে কোনো ধরনের হয়রানি বন্ধে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ এবং এ বিষয়ে সচেতনতা গড়ে তুলতে প্রয়োজনীয় সব পদক্ষেপ তারা নেবে।