কক্সবাজারে সামুদ্রিক মাছের জাদুঘর

প্রকাশ | ২৮ জুলাই ২০১৮, ০০:০০

কক্সবাজার প্রতিনিধি
রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়াল্ডর্ অ্যাকুরিয়ামে সামুদ্রিক মাছের বিচরণ Ñবাংলা ট্রিবিউন
বঙ্গোপসাগরে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ সংরক্ষণের লক্ষ্যে কক্সবাজারে গড়ে তোলা হয়েছে রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়াল্ডর্ অ্যাকুরিয়াম। অচেনা ও বিলুপ্তপ্রায় অনেক মাছ রয়েছে এই অ্যাকুরিয়ামে। সাগরের বিভিন্ন প্রাণী ও বিলুপ্ত মাছ সংরক্ষণের পাশাপাশি বিনোদনের জন্য জাদুঘরের আদলে এটি তৈরি হয়েছে। শুধু বিনোদনের জন্যই নয়, সাগরের জীববৈচিত্র্য ও প্রাণী সম্পকের্ জানার একটি শিক্ষাকেন্দ্রও এই অ্যাকুরিয়াম। গত বছরের ৩০ নভেম্বর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে এর যাত্রা শুরু হয়। এখন এই ফিশ ওয়াল্ডর্ অ্যাকুরিয়ামের সুনাম দেশের গÐি পেরিয়ে ছড়িয়ে পড়ছে দেশের বাইরে। এ কারণে কক্সবাজার পযর্টন শিল্পে এই অ্যাকুরিয়াম যোগ করেছে নতুন মাত্রা। প্রতিদিন দেশি-বিদেশি অসংখ্য পযর্টক এই অ্যাকুরিয়াম দশের্ন এসে মুগ্ধ হন। প্রবেশমূল্য সহজলভ্য হওয়ায় পযর্টকদের সংখ্যা দিন দিন বেড়েই চলছে। সরেজমিন দেখা যায়, অ্যাকুরিয়ামে রয়েছে নানারকম সামুদ্রিক মাছের আবাসস্থল। পঁাচতলাবিশিষ্ট ভবনজুড়ে রয়েছে নান্দনিকতার ছেঁায়া। শিল্পীর তুলিতে সাজানো হয়েছে সবকিছু। সাগরের পাহাড়, গুহা, তলদেশ, উঁচু-নিচু আর এলোমেলো সাগর পথ তৈরি করা হয়েছে অ্যাকুরিয়ামে। দেখতে দেখতে যে কেউ ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় পার করে দিতে পারেন অনায়াসে। অ্যাকুরিয়ামে রয়েছে নানা প্রজাতির মাছ, ডান-বামে মাছের বিচরণ। অধর্শতাধিক প্রজাতির মাছের ভিতর দিয়ে পথ চলতে হবে। তবে হঠাৎ হাঙ্গর সামনে এসে উপস্থিত হয়ে যেতে পারে। মানুষখেকো মাছ পিরানহা ধারালো দাঁত খুলে হা করে ছুটে আসতে পারে। গায়ে লেগে যেতে পারে কুচিয়া, কচ্ছপ, কাঁকড়া, আউসসহ সাগরের তলদেশের নানা কীটপতঙ্গ। এরমাঝে সাগরের তলদেশের গাছপালা, লতাপাতা, গুল্ম, ফুল গায়ে পরশ লাগিয়ে দেবে। পযর্টকদের জন্য এই রোমাঞ্চকর পরিবেশ তৈরি করেছে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেডিয়েন্ট গ্রুপ। জানতে চাইলে রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়াল্ডর্ অ্যাকুরিয়ামের প্রতিষ্ঠাতা ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলহাজ শফিকুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘বাংলাদেশের পযর্টন শিল্পকে এগিয়ে নিতে দুই বছর আগে রেডিয়েন্ট ফিশ সেন্টারের নিমার্ণকাজ শুরু হয়। কারণ, আমাদের দেশে ইট-পাথর আর কংক্রিটে আবদ্ধ জীবন থেকে এখানে এসে খানিকটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ও বিনোদনের স্বাদ পাবে দেশি-বিদেশি পযর্টকসহ শহরবাসী।’ অ্যাকুরিয়াম প্রতিষ্ঠাতা আরও বলেন, ‘প্রায় ১০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নিমির্ত রেডিয়েন্ট ফিশ ওয়াল্ডর্ অ্যাকুরিয়ামকে মোট ৮টি জোনে গড়ে তোলা হয়েছে। এরমধ্যে রয়েছে থ্রি-নাইন ডি মুভি দেখার নান্দনিক স্পেস, দেশি-বিদেশি নানা প্রজাতির পাখি, ছবি তোলার আকষর্ণীয় ডিজিটাল কালার ল্যাব, শপিং স্পেস, লাইভ ফিশ লাইফ রেস্টুরেন্ট, ইবাদতখানা, শিশুদের জন্য খেলাধুলার ব্যবস্থা, বিয়ে বা পাটির্ করার কনফারেন্স হল ও ছাদে প্রাকৃতিক পরিবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি আয়োজন থাকবে বার-বি কিউর।’ শফিকুর রহমান চৌধুরী আরও বলেন, ‘এই অ্যাকুরিয়াম মালয়েশিয়ার টেকনিক্যাল প্রকৌশলীর সহায়তায় নিমার্ণ করা হয়েছে। আন্তজাির্তক মানের এই অ্যাকুরিয়াম শুধু কক্সবাজারের জন্য নয়, বাংলাদেশের পযর্টন শিল্পে বড় ভূমিকা রাখবে। কারণ, এই অ্যাকুরিয়ামে বঙ্গোপসাগরে থাকা বিভিন্ন প্রজাতির সামুদ্রিক মাছ সংক্ষণ করা হয়েছে। অচেনা এবং বিলুপ্তপ্রায় অনেক মাছও রয়েছে। সাগরের বিলুপ্ত মাছ বিভিন্ন প্রাণী সংরক্ষণে একটি জাদুঘরও করা হচ্ছে। এটা শুধু বিনোদনের জন্য নয়, এটি সাগরের জীববৈচিত্র্য ও প্রাণী সম্পকের্ জানার একটি শিক্ষাকেন্দ্র।’ কক্সবাজারের জেলা মৎস্য কমর্কতার্ ড. আবদুল আলীম জানান, কক্সবাজারে স্থাপিত এটিই হচ্ছে দেশের প্রথম সামুদ্রিক ফিশ অ্যাকুরিয়াম। বতর্মান প্রজন্মকে গ্রাস করছে ইন্টারনেট। এতে শিশুদের নৈতিক অবক্ষয় ঘটছে। পাশাপাশি বিনোদনের উৎস খুঁজে না পেয়ে অনেকেই বিপথগামী হচ্ছে। এ ছাড়া অধিকাংশ শিশু-কিশোর সমুদ্র ও মিঠাপানির মাছ সম্পকের্ অজ্ঞ। তাই বিলুপ্ত হওয়া প্রাণীসহ বিভিন্ন মাছ সম্পকের্ ধারণা দিতে এটিই দেশের প্রথম আন্তজাির্তক মানের অ্যাকুরিয়াম। অ্যাকুরিয়ামটি পযর্টনে নবদিগন্তের সূচনা করেছে। অ্যাকুরিয়ামের তত্ত¡াবধায়ক সমুদ্র বিজ্ঞানী মো. নুরুল বাকি বলেন, ‘অ্যাকুরিয়ামে রাখা হয়েছে সামুদ্রিক শৈল মাছ, হাঙ্গর, পিতম্বরী, আউস, শাপলা পাতা, সাগর কুচিয়া, বোল, পানপাতা, বোল, পাঙ্গাস, চেওয়া, কাছিম, কঁাকড়া, জেলি ফিসসহ অধর্শতাধিক প্রজাতির মাছ। কিছু বিরল প্রজাতির মাছও এখানে রয়েছে।’