রেলের গতি কমাচ্ছে লেভেল ক্রসিং

হ সাড়ে ২৮শ' কিলোমিটার রেলপথে ২৪৯৭টি লেভেল ক্রসিং হ যার কারণে প্রতিনিয়ত হচ্ছে শিডিউল বা সময়সূচি বিপর্যয় হ গেটকিপার-শূন্য ৯৪৬ ক্রসিং

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০১৯, ০০:০০

কিশোর সরকার
ঝুঁকি নিয়ে মগবাজার রেলক্রসিং পার হচ্ছেন এক ভ্যানচালক -ফাইল ছবি
বৈধ-অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে নির্ধারিত গতিতে চলতে পারছে না রেল। ঘন লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা, হচ্ছে শিডিউল বা সময়সূচির বিপর্যয়। যার কারণে প্রায়ই যাত্রীদের রোষানলে পড়তে হয় রেল কর্তৃপক্ষকে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, সারাদেশের ২ হাজার ৮৯৫ কিলোমিটার রেলপথে ২ হাজার ৪৯৭টি বৈধ-অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে। এর মধ্যে শুধু ঢাকা-চট্টগ্রাম ৩২১ কিলোমিটারে রয়েছে ৩৭৫টি বৈধ-অবৈধ লেভেল ক্রসিং। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বাংলাদেশ রেলওয়ে ব্রডগেজ লাইনে সর্বোচ্চ ১০০ থেকে ১২০ কিলোমিটার এবং মিটার গেজে ৮০ থেকে ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত প্রতি ঘণ্টায় চলাচলের গতি নির্ধারিত করে রেলপথ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ঘন ঘন বৈধ-অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের কারণে ৬০ থেকে ৬৫ কিলোমিটারের চেয়ে বেশি গতিতে চলতে পারছে না রেল। আর দুই ঈদে অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে রেলের এ গতি আরো কমাতে বাধ্য হয় রেল। এ ছাড়া লেভেল ক্রসিংয়ে অনিয়মতান্তিকভাবে যানবাহন চলাচলের কারণে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটছে। এর ফলে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে রেল বিলম্বে চলাচল করতে বাধ্য হচ্ছে। আর তার প্রভাব পড়ছে শিডিউলে। রেল অধিদপ্তর সূত্র জানায়, সারাদেশে ১ হাজার ৪১২টি বৈধ ও ১ হাজার ৮৫টি অবৈধ লেভেল ক্রসিং রয়েছে। অবৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের ৪৫২টি, সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের ১১, ইউনিয়ন পরিষদের ৩৬৩, পৌরসভার ৭৯, সিটি করপোরেশনের ৩৪, জেলা পরিষদের ১৩, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের ৩, বেনাপোল বন্দর কর্তৃপক্ষের ১, জয়পুরহাট চিনিকল কর্তৃপক্ষের ১টি এবং ব্যক্তিগত প্রতিষ্ঠানের ৩টি। এছাড়া ১২৫টি লেভেল ক্রসিং কারা নির্মাণ করেছে তার কোনো হদিস নেই কর্তৃপক্ষের কাছে। আর বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ের মধ্যে ৪৬৬টিতে গেটকিপার (গেটম্যান) আছে এবং ৯৪৬টিতে আবার গেটকিপার নেই। বৈধ লেভেল ক্রসিংয়ে গেটকিপার দেয়ার জন্য নিয়োগ দেয়ার চেষ্টা করেও আইনি জটিলতার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। অথচ যত্রতত্র লেভেল ক্রসিং হওয়ায় রেল আসার কোনো সংকেত না জেনেই লাইনের ওপরে গাড়ি উঠে পড়ছে এবং ঘটছে রেল দুর্ঘটনা। বাংলাদেশ রেলওয়ে অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) মো. মিয়াজাহান বলেন, আইন অনুযায়ী ট্রেন চলাকালীন লাইনের দুই পাশে ১০ ফুট করে এলাকায় ১৪৪ ধারা জারি থাকে। রেললাইনসহ ওই সীমানার মধ্যে মানুষের প্রবেশ আইনত নিষিদ্ধ। এই আইন অনেকেই জানে না। জানলেও অনেকে তা মানে না। আর যেখানে গেটম্যান নেই সেখানে রেল লাইনের আগেই লেখা আছে 'সামনে লেভেল ক্রসিং' নিজ দায়িত্বে পার হবেন। কিন্তু তা কেউ মানছেন না। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষক শামসুল হক যায়যায়দিনকে বলেন, রেলপথের উন্নয়ন হচ্ছে। তবে লেভেল ক্রসিং কমানো যাচ্ছে না। অথচ প্রতিদিন রেলে কাটা পড়ে মানুষ মারা যাচ্ছে। জনবহুল দেশে রেল চালালে আগে পরিবেশ সুন্দর করতে হবে। তাই রেল কর্তৃপক্ষ চাইলেও রেলকে একেবারে সঠিক সময় নিয়ন্ত্রণ করে চালাতে পারছে না। তিনি আরো বলেন, রেলপথে লেভেল ক্রসিং থাকবে না। পৃথক সড়ক করতে হবে। উপরে রাস্তা হবে নিচে ট্রেন চলবে। লেভেল ক্রসিং যতদিন থাকবে ততদিন রেলপথে রক্ত ঝরবে। আর রেলের সূচি বিপর্যয় বন্ধ করা সম্ভব হবে না। রেলপথ মন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন বলেন, দুর্ঘটনা ও সময়সূচি বিপর্যয়ের জন্য লেভেল ক্রসিং একটি বড় কারণ। তবে যেসকল সরকারি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান রেলপথ অধিদপ্তরের অনুমতি না নিয়েই রেল লাইনেরর ওপর দিয়ে রাস্তা ক্রস করিয়েছে তাদের ওভার পাস আন্ডার পাস করার জন্য বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে নারায়ণগঞ্জ থেকে জয়দেবপুর পর্যন্ত ১৩টি স্থানে ওভারপাস আন্ডারপাস নির্মাণের জন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি আরো বলেন, এমনিতেই লেভেল ক্রসিং সমস্যা। তার মধ্যে প্রতি ঈদে এক একটি ট্রেন এক হাজার যাত্রীর স্থলে তিন হাজার যাত্রী পরিবহন হচ্ছে। এতে প্রতিটি স্টেশনে যাত্রী ওঠানামায় বেশি সময় লাগছে। তাই অনেক সময়সূচি ঠিক রাখা যাচ্ছে না। তবে ঈদের পর থেকে রেল নির্ধারিত সময়সূচি অনুযায়ী চলাচল করছে।