বিদু্যৎ সংযোগে টিআইএন ভোগান্তি বাড়বে মানুষের

কর্মঘণ্টা অপচয়ের পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জনগণ এ প্রস্তাব প্রত্যাহার চেয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে বিদু্যৎ প্রতিমন্ত্রীর চিঠি বর্তমানে বিদু্যৎ গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৩৪ লাখ ১ কোটি ২০ লাখ গ্রাহক মাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদু্যৎ ব্যবহার করেন

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
করের আওতা বাড়াতে এবার বাজেটে বিদু্যৎ সংযোগের জন্য কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেছেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে এ বিষয়টিতে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন বিদু্যৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, এটি বাস্তবায়ন হলে দেশের দরিদ্র মানুষের হয়রানি বাড়বে। একই সঙ্গে কর্মঘণ্টা অপচয়ের পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জনগণ। এ বিষয়ে সোমবার অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে লেখা চিঠিতে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, 'আপনি নিশ্চয়ই অবগত আছেন, ঘরে ঘরে বিদু্যৎ পৌঁছে দেয়া সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রম্নতি। ইতোমধ্যে ৯৩ ভাগ জনগোষ্ঠী বিদু্যৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বর্তমানে বিদু্যৎ গ্রাহক সংখ্যা সারাদেশে ৩ কোটি ৩৪ লাখ। এর মধ্যে বাংলাদেশ পলস্নী বিদু্যতায়ন বোর্ডের গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৬৪ লাখ। পলস্নী বিদু্যতায়ন বোর্ডের এ গ্রাহকের মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ লাইফ লাইন গ্রাহক। অর্থাৎ এসব গ্রাহক মাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদু্যৎ ব্যবহার করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের অর্থবিলে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, বিদু্যৎ সংযোগ থাকলেই কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিতে হবে। কিন্তু লাইন লাইফ গ্রাহকরা খুবই দরিদ্র। অনেকেই দিনমজুর। তাদের পক্ষে টিআইএন করা কষ্টদায়ক ও অমানবিক। তাছাড়া টিআইএন থাকলে প্রতি বছর আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়, যা ওই দরিদ্র শ্রেণির লোকদের জন্য হয়রানিমূলক, কর্মকালের অপচয় এবং তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করি।' চিঠিতে বিদু্যৎ প্রতিমন্ত্রী বিদু্যৎ সংযোগে টিআইএন থাকার প্রস্তাব প্রত্যাহার করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান। এদিকে বিদু্যৎ সংযোগের জন্য টিআইএন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই বলে মনে করছে বিদু্যৎ বিভাগ। বিদু্যৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আবাসিকের ক্ষেত্রে একজন বাড়িওয়ালা বা ভাড়াটিয়ার টিআইএন নম্বর নাও থাকতে পারে। এছাড়া নতুন বিদু্যৎ সংযোগের ক্ষেত্রে এমনিতেই অনেক কাগজপত্র জমা দিতে হয়। নতুন করে আরও একটি জটিল বিষয় যুক্ত হলে সংযোগ পেতে গ্রাহকদের আরও সমস্যা হবে। তারা বলছেন, এটি বাস্তবায়ন হলে নিম্নবিত্তরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বেন। জানা গেছে, আবাসিকে বিদু্যৎ সংযোগের জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে আবেদনকারীর দুই কপি সত্যায়িত রঙিন ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি, জমির দলিল বা লিজের সত্যায়িত ফটোকপি, ১০ তলার বেশি হলে অগ্নিনির্বাপণ সনদ, সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মধ্যে হলে ভবন নির্মাণের বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ফটোকপি ও দুই কিলোওয়াটের বেশি গ্রাহকের বিদু্যৎ লোড হলে সৌর প্যানেল স্থাপনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কারও ভবন নির্মাণের বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না থাকলে অনাপত্তিপত্র দিয়েও বিদু্যৎ সংযোগ নেয়া যায়। এছাড়া বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগের ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সঙ্গে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ছাড়পত্রের কপিও জমা দিতে হয়। গত ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। 'সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের' শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি। বর্তমানে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের নানা দিক নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে। প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে আগামী ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে নতুন অর্থবছরের নতুন বাজেট।