গরমে কাতর জুন

প্রকাশ | ২৭ জুন ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি রিপোর্ট
মধ্য আষাঢ়েও বর্ষার অঝোর ধারা নেই; দেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে বয়ে যাচ্ছে মৃদু থেকে মাঝারি তাপপ্রবাহ। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, প্রাক-বর্ষায় গরমের এমন তেজ সাম্প্রতিক বছরগুলোর চেয়ে এবার যেন একটু বেশি। দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর বিস্তার ঘটলে তখন তাকে বলা হয় বর্ষা। পঞ্জিকার বর্ষা আষাঢ়ের ১ তারিখ শুরু হলেও বাস্তবে এবার মৌসুমি বায়ুর আগমন ঘটেছে কয়েক দিন দেরি করে। বর্ষার এই বিলম্বিত আগমনের কারণেই আষাঢ়ের আবহাওয়া এবার কিছুটা চড়া বলে মনে করছেন জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান। আবহাওয়ার তথ্য বিশ্লেষণ করে তিনি বলেন, গত ৫ বছরের মধ্যে এ বছর জুন মাসে তাপপ্রবাহ হয়েছে সবচেয়ে বেশি দিন। ৯ জুন থেকে মাসের প্রথম দফা তাপপ্রবাহ শুরু হয়। এরপর ১২ জুন থেকে ১৪ জুন, ১৬ জুন থেকে ১৯ জুন এবং ২৪ জুন থেকে শুরু হওয়া সর্বশেষ তাপপ্রবাহ এখনো অব্যাহত রয়েছে। গত ১৭ জুন মাসের সর্বোচ্চ ৩৯ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় যশোরে। অবশ্য ঘূর্ণিঝড় ফণীর প্রভাবে এপ্রিলে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রিতে উঠেছিল। আবহাওয়াবিদ মান্নান বলেন, ২০১৫ থেকে ২০১৯ সালের তথ্য পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, এবার জুন মাসে তাপপ্রবাহের বিস্তৃতি ও ব্যাপ্তি ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি। মার্চ থেকে মে মাসের আবহাওয়াও ছিল অন্য বছরের চেয়ে বেশি গরম। 'দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) সাধারণত জুনের প্রথমার্ধে পুরোদেশের ওপর সক্রিয় হয়। কখনো কখনো ২০ জুনের মধ্যে 'মুনসুন সেট' হয়। এ সময় সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়ে থাকে। এর প্রভাবে প্রচুর বৃষ্টি ঝরে। 'এবার বর্ষা দেশে বিস্তার লাভ করে ২০ জুনের দিকে। তাপীয় লঘুচাপ না থাকায় নিম্নচাপও সৃষ্টি হয়নি। লেট মুনসুনের কারণে তুলনামুলক কম বৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে তাপপ্রবাহও বয়ে গেছে দীর্ঘ সময় ধরে।' ১৯৮১ সালের পর থেকে আবহাওয়া অফিসের রেকর্ডে জুনের যে তথ্য আছে, সেখানে দেখা যায়, ১৯৯৮, ২০০৫ এবং ২০১২ সালে আবহাওয়া ছিল তুলনামূলকভাবে বেশি গরম। ২০১২ সালে দেশের ১৭টি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ স্টেশনে তাপপ্রবাহ রেকর্ড করা হয়। পরে ২৬-২৭ জুন টানা বর্ষণে পাহাড়ি ঢল, ধস ও বজ্রপাতে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, বান্দরবান ও সিলেটে ৯৪ জনের প্রাণহানি হয়। আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান বলেন, এবার জুনের শেষ সময় এবং জুলাইয়ের শুরুতে ভারী বর্ষণ হতে পারে। 'এখন বিক্ষিপ্ত বৃষ্টির সঙ্গে যে ভ্যাপসা গরম চলছে, তা আরও তিন চার দিন থাকবে। উত্তরাঞ্চলে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সক্রিয় থাকায় সিলেট-ময়মনসিংহ অঞ্চলে বৃষ্টি হবে। ৩০ জুন- ১ জুলাইয়ের দিকে বৃষ্টির দেখা মিলবে সারাদেশে।' বৃহস্পতিবার আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজশাহী, পাবনা, দিনাজপুর অঞ্চলসহ খুলনা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝারি মাত্রার যে তাপপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে, তা কিছু জায়গায় প্রশমিত হতে পারে। রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কিছু কিছু জায়গা এবং ঢাকা, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি বৃষ্টি অথবা বজ্রবৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে।