প্রকৌশলীর গাফিলতিতে রাজশাহীর ট্রেন দুর্ঘটনা

প্রকাশ | ১২ জুলাই ২০১৯, ০০:০০

যাযাদি ডেস্ক
তেলবাহী ট্রেন দুর্ঘটনার পর চলছে উদ্ধার তৎপরতা -যাযাদি
রেল লাইন সংস্কারের সময় খুলে রাখা হয়েছিল স্স্নিপারের সঙ্গে লাইন আটকানোর 'ডগস্পাইক', আর সে কারণেই রাজশাহীর চারঘাটে তেলবাহী ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়েছে বলে জানিয়েছেন পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শহীদুল ইসলাম। বুধবার সন্ধ্যায় চারঘাট উপজেলার দিঘলকান্দি এলাকায় ওই দুর্ঘটনার পর পশ্চিমাঞ্চল রেলের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা আব্দুলস্নাহ আল মামুনকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে তাদের ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এদিকে দুর্ঘটনার কারণে বুধবার সন্ধ্যা থেকেই রাজশাহীর সঙ্গে বৃহস্পতিবার বিকালে শেষ খবর জানা পর্যন্ত সারা দেশের ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। খুলনা থেকে ছেড়ে আসা তেলবাহী ট্রেনটি ঈশ্বরদী জংশন হয়ে কাটাখালী দিয়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জের রহনপুরের দিকে যাচ্ছিল। কিন্তু সন্ধ্যায় রাজশাহীর সারদা স্টেশন পেরিয়ে দিঘলকান্দি এলাকায় পৌঁছে ট্রেনের ৯টি ক্যারেজ লাইন থেকে বেরিয়ে যায়। এ অবস্থায় রাজশাহীর সঙ্গে সব জেলার রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। উদ্ধার তৎপরতা দেখতে বৃহস্পতিবার দুপুরে দুর্ঘটনাস্থলে গিয়ে পশ্চিমাঞ্চল রেলের মহাব্যবস্থাপক খন্দকার শহীদুল ইসলাম বলেন, লাইন সংস্কার কাজে নিয়োজিত প্রকৌশলীর গাফলতির কারণেই তেলবাহী ট্রেনটি দুর্ঘটনায় পড়ে। 'প্রাথমিকভাবে আমরা জানতে পেরেছি, এখানে লাইন সংস্কার চলছিল। পুরাতন স্স্নিপার পরিবর্তন করে পাথর দেয়া হচ্ছিল।' 'কিন্তু যারা সংস্কারকাজ করছেন তারা স্স্নিপারের সঙ্গে লাইন আটকানো কয়েকটি পিন (ডগস্পাইক) খুলে রেখেছিল। পাথর ফেলার পর সেটা ঢেকে যায়, ফলে কারও চোখে পারেনি। তাতেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে।' রেলের এই ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান, মোট ৩১টি তেলের ক্যারিজ নিয়ে যাচ্ছিল ট্রেনটি। প্রতিটি ক্যারিজে রয়েছে ৫০ হাজার লিটার তেল। প্রতিটি ক্যারিজের ওজন ৫০ টন। 'পিন খোলা থাকায় অতিরিক্ত চাপে লাইন সরে যায়। ফলে ৯টি বগি লাইন ছেড়ে বেরিয়ে যায়।' ঈশ্বরদী থেকে আসা রিলিফ ট্রেনের মাধ্যমে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বেশি ক্ষতিগ্রস্ত চারটি ক্যারিজ উদ্ধার করা হয়েছে জানিয়ে শহীদুল ইসলাম বলেন, 'বাকিগুলো বিকাল ৪টার মধ্যে উদ্ধার করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়।' রাজশাহী রেলওয়ে স্টেশনের মাস্টার জাহিদুল ইসলাম জানান, দুর্ঘটনার পর রাতে রাজশাহী থেকে দুটি ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়েছিল। আর সকাল থেকে ঢাকা রুটের আন্তঃনগর বনলতা এক্সপ্রেস, আন্তঃনগর সিল্কসিটি এক্সপ্রেস, খুলনা রুটের সাগরদাঁড়ি এক্সপ্রেস ও কপোতাক্ষ এক্সপ্রেস, নীলফামারীগামী তিতুমীর এক্সপ্রেস, রাজবাড়ীগামী রূপসা এক্সপ্রেসসহ কয়েকটি লোকাল ট্রেনের যাত্রা বাতিল হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন গন্তব্য থেকে রাজশাহীর উদ্দেশে ছেড়ে আসা বেশ কয়েকটি ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকা পড়ে আছে। স্টেশন মাস্টার বলেন, 'উদ্ধারকাজ শেষ হতে বিকাল হয়ে যাবে। বিকাল ৪টায় পদ্মা এক্সপ্রেস রাজশাহী থেকে ঢাকার পথে ছেড়ে যাওয়ার সূচি রয়েছে। আমরা আশা করছি, লাইন মেরামত শেষ হলে পদ্মা ছেড়ে যেতে পারবে।'